দিঘলিয়ায় হাটের ইট বিক্রির খবরের সত্যতা পেলেন ইউএনও

0

খুলনা ব্যুরো॥ ইজারাদার কর্তৃক খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার গাজীরহাট ইউনিয়নের কোলার হাটের সলিংয়ের (মাটিতে বিছানো) প্রায় ৩০ হাজার সরকারি ইট তুলে বিক্রির খবরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব আলম।
এদিকে বাজারে দোকান দিতে হলে ইজারাদারকে নতুন করে চাঁদা দিতে হবে বলে অভিযোগ করেছেন বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী। গত ২৯ আগস্ট তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরবার এ বিষয়ে আলাদা দু’টি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
গাজীরহাট ইউনিয়নের কোলার হাটের ইজারাদার সাবেক ইউপি মেম্বার মো. বুলু শেখ সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন ধরনের অনুমোদন ছাড়াই হাটটি উঁচু করার জন্যে আগে থেকে বিছানো সলিংয়ের সরকারি প্রায় ৩০ হাজার ইট তুলে নিয়ে স্থানীয় কেটলা গ্রামের মাসুদ মোল্লার বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে রাখেন। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে প্রতি হাজার ইট ৮ হাজার টাকা করে বিক্রি করছিলেন। এছাড়া তিনি হাটে ব্যবসা করার জন্য দোকান প্রতি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোর পূর্বক ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা এবং ঘর তোলা বাবদ প্রতিটি ‘খুঁটি’র জন্যেও ৩শ’ টাকা করে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। বিষয়টি নিয়ে রোববার লোকসমাজে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব আলমের নজরে আনা হলে তিনি তাৎক্ষণিক বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সেনহাটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশীলদার (নায়েব) স্বপন কুমার বিশ্বাসকে দায়িত্ব দেন। সে মোতাবেক তহশীলদার সরেজমিনে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন স্থানে হাটের সরকারি ইট দেখতে পান।
বিষয়টি নিশ্চিত করে তহশীলদার (নায়েব) স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন, উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তিনি কেটলা গ্রামের মাসুদ মোল্লার বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে হাটের সব সরকারি ইট রাখা অবস্থায় দেখা যায়। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
অপরদিকে গত ২৯ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দাখিলকৃত কোলাহাটের ব্যবসায়ী করম আলী মোল্লা, হাবিব শেখ, হুবাইয়া, অছিকার মোল্লা, বাদশা শেখসহ ১৫জন ব্যবসায়ীর স্বাক্ষরিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, তারা যুগ যুগ ধরে কোলাহাটে ব্যবসা করছেন। কিন্তু হঠাৎ করে নতুন ইজারাদার বুলু শেখ দোকান প্রতি ব্যবসায়ীদের কাছে ১০ হাজার টাকা করে দাবি করেন। এ টাকা না দেয়ায় তাদের নিজ দোকান থেকে উচ্ছেদ করে টাকা নিয়ে অন্যদের বসানো হয়।
ব্যবসায়ী করম আলী মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, তারা ৪ ভাই পিতার আমল থেকে এই বাজারের একই দোকানে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। কিন্তু দাবিকৃত ১০ হাজার টাকা ইজারাদারকে না দেয়ায় তাদের সেখান থেকে তুলে অন্য স্থানে দেয়া হয়েছে। ফলে তারা ব্যবসায়িকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এর প্রতিকার চেয়ে ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একইদিনে দাখিলকৃত অপর অভিযোগে প্রতিবন্ধী ব্যবসায়ী আফজাল শেখ উল্লেখ করেন, ইজারাদার বুলু শেখ ব্যবসা করতে হলে তাকে ৫ হাজার দিতে হবে বলে জানান। কিন্তু তিনি ২ হাজার টাকা প্রদান করে বাকি ৩ হাজার টাকা পরিশোধের জন্য ১৫ দিনের সময় চান। তারপরও ইজারাদার বেশি টাকা নিয়ে তার জায়গায় অন্য লোককে বসিয়ে দেন। পরবর্তীতে প্রতিবন্ধী আফজাল শেখকে বাজারের অপেক্ষাকৃত ব্যবসায়িক অচল জায়গায় বসতে দেন। কিন্তু সেখানে কোন ক্রেতা না যাওয়ায় তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
গাজীরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোল্লা মফিজুল ইসলাম ঠান্ডু বলেন, বাজারের ইট তুলে অন্য জায়গায় সরিয়ে রাখার সত্যতা পাওয়া গেছে। এ কারণে ইজারাদার বুলু শেখকে ওই ইট ইউএনও’র কাছে বুঝিয়ে দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া বুলুকে টাকা দিতে ব্যবসায়ীদের নিষেধ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বলেন, ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।