দ্রব্যমূল্যের যাতাকলে পড়ে মণিরামপুরের সাধারণ মানুষের সংসার চালানো কষ্টকর

0

 

রাজগঞ্জ (যশোর) সংবাদদাতা ॥ যশোরের মণিরামপুর উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের ছয়টি ইউনিয়নে বিভিন্ন হাট-বাজারে মাছ, মাংস, ডিম, চাল, ডাল, তেল, সবজিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষসহ মধ্যবিত্তরা। আয়ের চেয়ে ব্যয় অনেকগুণ বেশি হওয়ায় খাদ্যের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েও খরচের লাগাম টেনে ধরতে পারছেন না খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। বর্তমান বাজারের পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে অনেকের পক্ষে সংসারের খরচ চালানোই এখন কষ্টকর। বাজারে জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধিতে স্বল্প ও নির্ধারিত আয়ের মানুষের দুর্দশা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। সংসার চালাতে গিয়ে লড়াই করতে হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষদের। হাটে-বাজারে গিয়ে এ সব মানুষের সাথে আলাপ করলে তারা জানান, দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতির বড় ধাক্কা লেগেছে তাদের সংসারে।
সাধারণ ও নিম্নআয়ের মানুষ জানান, আয় বাড়েনি। বেড়েছে ব্যয়। আর এতেই সমস্যা দেখা দিয়েছে সংসারে। কাটছাঁট করতে হচ্ছে বাজারের তালিকায়। তারপরও ব্যয় কমিয়ে উঠতে পারছেনা এ অঞ্চলের মানুষ। বর্তমান বাজারে মাছ, মাংস, ডিম, চাল, ডাল, তেল, সবজিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সব ধরণের জিনিষপত্রের দামই অনেক চড়া। তাই তো বাজার করতে এসে আয় ব্যয়ের হিসাব মেলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে ক্রেতাদের। উপজেলার রাজগঞ্জ বাজার ও ঝাঁপা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারের সবচেয়ে সস্তা মাছ হচ্ছে পাঙ্গাশ। অথচ এই পাঙ্গাশ মাছের দামও কেজিতে বেড়েছে ৫০টাকা থেকে ৭০টাকা পর্যন্ত। এক কেজি ওজন বা মাঝারি আকারের পাঙ্গাশ ১৭০টাকা আর বড় পাঙ্গাশ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৮০টাকা কেজি। সেই সাথে রুই কাতলা মাছ আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০টাকা কেজি দরে। ট্যাংরা মাছ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০০টাকা থেকে ৬৫০টাকা। তেলাপিয়া মাছ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০টাকা থেকে ২০০টাকা পর্যন্ত। ৫০০গ্রাম বা ৬০০গ্রাম সাইজের ইলিশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০টাকা দরে। গত সপ্তাহে যার দাম ছিল সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা প্রতি কেজি। চিংড়ি ছোট ৬০০টাকা কেজি ও বড় চিংড়ি ১২০০টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে। গ্লাসকার্প প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০টাকা দরে।
গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা থেকে ৭০০টাকা কেজি দরে। কিছুদিন আগে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৪০টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা প্রতি কেজি ১৮০টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগীর দাম ১৮০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫০টাকা কেজি। দেশি মুরগির দাম এর আগে ছিল ৩৮০ টাকা কেজি। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৪৫০টাকা কেজি দরে। এছাড়া বেগুন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০টাকা দরে। পটল ৩০ টাকা প্রতি কেজি, আলু ৩০টাকা কেজি, পিঁয়াজ ৪৫টাকা কেজি, পেঁপে ২০ কেজি, রসুন ৬০ কেজি, কচুরমুখি ৪০ টাকা কেজি, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা কেজি, ওল ৬০ টাকা কেজি, আদা ১২০ টাকা কেজি, বরবটি ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ডিমের দাম। ডিমের হালি ছিল ৪০টাকা। সেই ডিমের হালি এখন ৫২টাকা। যা হালিতে বেড়েছে ১২টাকা। প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৯০টাকা। দেশি মসুরের ডাল ১৫৬টাকা কেজি, আটা ৫২টাকা কেজি, ময়দা ৭৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে রাজগঞ্জ বাজারে বৃহস্পতিবার কাঁচা মরিচ দাম করলো ডাবল সেঞ্চুরি করেছে। বর্তমানে এ বাজারে প্রতি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০টাকা কেজি দরে। এছাড়া বাজারে দফায় দয়ায় বাড়ছে সকল প্রকার চালের দামও।
রাজগঞ্জ বাজারের তরকারি বিক্রেতা ভূট্টো সরদার জানান, কিছুদিন আগেও তরিতরকারির দাম মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় শাকসবজিসহ প্রতিটা জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। আর এতে বেচাবিক্রি অনেকটা কমেও গেছে। বর্তমান বাজারে বেশি দামে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে শাকসবজি ও তরকারি কিনতে হচ্ছে। ফলে যে বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। তার মতে ক্রেতাদের তো আয় বাড়েনি। তার পরিচিত অনেক কেতাই আগের চেয়ে কম কম বাজার করছেন বলে তিনি জানান।
রাজগঞ্জে বাজার করতে আসা চালুয়াহাটি ইউনিয়নের রামনাথপুর গ্রামের আব্দুল ওয়াদুদ, মোবারকপুর গ্রামের মাস্টার আব্দুল জব্বার, ঝাঁপা ইউনিয়নের হানুয়ার কলেজপাড়া গ্রামের নজরুল ইসলাম, ভ্যান চালক মুন্তাজ গাজী, ইউসুফ আলী গাজী, শুকুর আলী, মনোহরপুর গ্রামের ইজিবাইক চালক আবুল বাসার, ও রাজগঞ্জ বাজারের বাসিন্দা শামছুর রহমান জানান, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ সব কিছুরই দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় তাদের মতো খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছেন চরম বিপাদে। খাদ্যদ্রব্য সামগ্রীসহ চাল, ডাল ভোজ্য তেল, তরিতরকারি, মাছ, মাংস, ডিম, গ্যাসের দাম বেড়েছে অসহনীয়ভাবে।