চৌগাছায় আগাম বাঁধাকপি চাষ ও কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধির কারণে স্বপ্ন পূরণে সংশয়ে কৃষক

0

 

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ এবছর বোরো ধান পানিতে নষ্ট হয়েছে, আবার বৃষ্টির অভাবে সবজির ক্ষতিও কম হয়নি আর বর্তমানে বৃষ্টি না হওয়ায় আমন ধান রোপণ করতে পারেনি কৃষক। কৃষক শুধুই ক্ষতির মুখোমুখি পড়ছে তারপরও চলে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা। অভাব অনাটনের সংসারে সচ্ছলতা ফিরে পেতে আগাম বাঁধা কপিসহ বেশ কিছু সবজির চাষ করেছি, জানি না শেষমেষ কি হবে। বুকের ভেতরে জমানো অনেক কষ্টের কথা এভাবেই বলতে থাকেন চৌগাছার ইছাপুর গ্রামর সামছুল আলম।
চৌগাছার মাটিতে ধান,পাট,গম,ভুট্টাসহ সব ধরনের সবজি চাষের জন্য বরাবরই উপযোগী। তাইতো গ্রাম্য প্রবাদ আছে ’চৌগাছার মাটি সোনার চেয়েও খাঁটি, এ মাটিতে একটি কয়েন ফেললে তা এক ঝুড়ি কয়েনে পরিণত হয়’। বৈরী আবহাওয়া এ বছর কৃষককে বারবার চরম ক্ষতির মুখে দাঁড় করিয়েছে। নষ্ট হচ্ছে ফসল ভঙ্গ হচ্ছে স্বপ্ন, তারপরও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত আছে। শনিবার উপজেলার বেশ কিছু গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে শীতের সবজি বাঁধাকপির আগাম চাষ করে কৃষক সংসারের অভাব ঘুচানোর জন্য নিদারুণ কষ্ট করে যাচ্ছে সবজি ক্ষেতে।
উপজেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের টেংগুরপুর গ্রামের মশিয়ার রহমান খানের ছেলে সজিব হোসেন বলেন, বোরো ধান পানিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে ওঠা কষ্টসাধ্য। দায় দেনার ভেতরে থেকে ক্ষতি পুশিয়ে নিতে আগাম ১০ কাঠা জমিতে বাঁধাকপির চাষ করেছি। বাংলা আষাঢ় মাসে কপির চারা জমিতে বপন করা হয়। ইতোমধ্যে কপির পাতা বাধা শুরু করেছে আর কয়েক দিনের মধ্যে হয়ত বিক্রির উপযোগী হবে। কিন্তু আবহাওয়ার কারণে শেষমেষ ভাগ্যে কি লেখা আছে জানি না। ১০ কাঠা জমিতে সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার চারা লাগাতে হয়। প্রতিটি চারা ১ থেকে দেড় টাকায় কিনতে হয়েছে। জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে আজ পযন্ত হাজার হাজার টাকা খরচ করেছি। শীতের সবজি গ্রীস্মে বানানো মানে বাড়তি ব্যয়। এমনিতে খরচ কিছুটা বেশি তারপর হঠাৎ করেই জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সব কিছুরই দাম বেড়ে গেছে। জোন খরচ থেকে শুরু করে সার, কীটনাশকের দাম বেড়েছে। কপি যখন ওঠা শুরু করবে তখন বাজারদর যদি ভাল থাকে তাহলে হয়ত স্বপ্ন পূরণ হবে। কৃষক সজিব হোসেনের মত ওই মাঠে মিঠু বিশ্বাস ১০ কাঠা, সান্টু মিয়া ১৫ কাঠা, জিয়াউর রহমন ১০ কাঠা, শিতল ১৫ কাঠাসহ অনেক চাষি আগাম বাঁধা কপির চাষ করেছেন। প্রতিটি জমির কপি আর কয়েক দিন পরেই বাজারজাত করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন চাষিরা। কিন্তু আগাম চাষ করতে গিয়ে ব্যয় কিছুটা বেড়ে গেছে, বর্তমানে কৃষি উপকরণের দাম আরও বেড়েছে শেষমেষ খরচ কোথায় গিয়ে থামে বলা মুশকিল।
কৃষকরা বলেন, এবছর সেভাবে বৃষ্টি হয়নি, ফলে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন জমিতে সেচ দিতে হয়েছে। শীতের ফসল গরমে লাগানোর কারণে পোকার আক্রমণ কিছুটা বেশি,তাই বিষ স্প্রেও করতে হয়েছে বেশি। গত কয়েক দিনে হালকা হালকা বৃষ্টি হচ্ছে তাতে করে পোকার আক্রমণও বেড়ে গেছে। এই সময়ে পোকার আক্রমণ থেকে কপি রক্ষায় স্প্রে করার পরিমাণও বৃদ্ধি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু এলাকার কপি বাজারে আসতে শুরু করেছে, দামও ভাল। আমাদের কপি যখন বাজারে তোলা হবে তখন ৫০/৫৫ টাকা কেজি বিক্রি করতে না পারলে পুরোটাই লস হবে বলে তারা ধারণা করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার টেংগুরপুর, পেটভরা, হাজরাখানা, আন্দারকোটা, খড়িঞ্চা, কয়ারপাড়া, লস্কারপুর, ইছাপুর, বাকপাড়াসহ বেশ কিছু এলাকার চাষিরা আগাম বাধাকপির চাষ করেছেন। দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির এই বাজারে তারা নায্যমূল্যে কষ্টের ফসল বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। আর যদি বাজারদর ভাল না হয়, কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলের ক্ষতি হয় তাহলে বেঁচে থাকাটাই হবে কষ্টসাধ্য।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সমরেন বিশ্বাস বলেন, কৃষকরা নানা জাতের বাঁধাকপির আগাম চাষ করেছেন। এই সময়ে পোকার আক্রমণ তুলনামূলক বেশি থাকে, তাই কৃষক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে লক্ষ্যে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত ভাবে কাজ কাজ করে যাচ্ছেন।