যশোরে রিকশা ছিনতাইয়ের জন্য হত্যা করা হয় মিয়াদকে, চাকুসহ আটক দুই

0

 

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরে ব্যাটারিচালিত রিকশা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে চালক বিল্লাল হোসেন ওরফে মিয়াদকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিলো পূর্ব পরিচিত দুই যুবক। নারীর সাথে অনৈতিক কার্যকলাপের প্রলোভন দেখিয়ে ডেকে নিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) হত্যাকাণ্ডে জড়িত যুবকদ্বয়কে আটকের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এমনই তথ্য পেয়েছে। গত শনিবার শহরের পুরাতন কসবা এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এ সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি চাকু জব্দ করেছে সংস্থাটি। এছাড়া ছিনতাই হওয়া রিকশা ও তার সাথে থাকা ব্যাটারিও উদ্ধার করা হয়েছে।
আটককৃতরা হলো-শহরের পুরাতন কসবা কাঁঠালতলা এলাকার তোতা মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া জহিরুল ইসলাম ওরফে মিঠু মোল্লার ছেলে আব্দুল কাদের মোল্লা (২৩) ও পুরাতন কসবা রায়পাড়ার তিতাসের বাড়ির ভাড়াটিয়া ইউনুস শেখের ছেলে জুয়েল শেখ (২৫)।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের এসআই ডিএম নূর জামাল হোসেন জানান, আটক আব্দুল কাদের ও জুয়েল শেখকে রোববার আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মঞ্জুরুল ইসলাম তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন। একই সাথে তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন বিচারক।
পিবিআই সূত্র জানায়, নিহত মিয়াদ বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার বাদুরা গ্রামের লোকমান হোসেনের ছেলে। বর্তমানে যশোর সদর উপজেলার পাগলাদহের মাঠপাড়ায় স্ত্রী শারমিনকে নিয়ে বসবাস করতেন। মিয়াদ পেশায় রিকশাচালক। মূলত পুরাতন কসবা কাঁঠালতলা ও চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নিয়ে তিনি ভাড়ায় রিকশা চালাতেন। আটক দুজনও পেশায় রিকশাচালক এবং মিয়াদের পূর্ব পরিচিত।
হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের আটক অভিযানে অংশ নেয়া পিবিআইয়ের এসআই স্নেহাশিস দাশ জানান, আটক যুবকদ্বয়কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় মিয়াদ হত্যাকা-টি পূর্ব পরিকল্পিত। মূলত ব্যাটারিচালিত রিকশাটি ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে নারীর সাথে অনৈতিক কার্যকলাপের প্রলোভন দেখিয়ে ডেকে নিয়ে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তিনি বলেন, গত ২১ জুন দুপুরে মিয়াদ যাত্রী নিয়ে পুরাতন কসবা কাঁঠালতলা এলাকায় গেলে সেখানে আব্দুল কাদেরের সাথে তার দেখা হয়। এ সময় আব্দুল কাদের তার কাছ থেকে মোবাইল ফোন নম্বরটি চেয়ে নেয়। এরপর ওইদিন সন্ধ্যার একটু আগে মিয়াদ ভাড়ায় রিকশা চালানোর উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। এ সময় তাকে ফোন করে পুরাতন কসবা কাঁঠালতলা এলাকায় আসতে বলে আব্দুল কাদের। পরে মিয়াদ সেখানে গেলে আব্দুল কাদের ও জুয়েল শেখের সাথে তার দেখা হয়। তখন আব্দুল কাদের ও জুয়েল শেখ তাকে অনৈতিক কার্যকলাপের প্রলোভন দেখায়। এতে রাজি হলে তারা দ্জুনে মিয়াদের রিকশায় ওঠে। পথে একটি দড়ি দেখতে পেয়ে সেটি কুড়িয়ে সাথে রেখে দেয় জুয়েল শেখ। এরপর তারা মিয়াদকে সদর উপজেলার ক্ষিতিবদিয়া গ্রামে নিয়ে যায়। সেখানে জুয়েল শেখ তার এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে পানি পান করে। পরে ওই আত্মীয়ের হেফাজতে রিকশাটি রেখে দেয় এবং ঘুরে বেড়ানোর কথা বলে সেখান থেকে তারা তিনজনে চলে আসে। আব্দুল কাদের ও জুয়েল শেখ একইভাবে নারীর সাথে অনৈতিক কার্যকলাপের প্রলোভন দেখিয়ে মিয়াদকে নিয়ে যায় পাশে ক্ষিতিবদিয়ার ষোলবিঘা নামক স্থানের জনৈক রেজাউল ইসলামের মেহগনি বাগানে নিয়ে যায়। সেখানে অনৈতিক কার্যকলাপের জন্য চুক্তিবদ্ধ সেই নারী আসছে এমন কথা বলে আশ্বস্ত করা এবং বিভিন্ন গল্প বলার এক ফাঁকে জুয়েল শেখ তার কাছে থাকা দড়ি আচমকা মিয়াদের গলায় পেঁচিয়ে ধরে। এ সময় জুয়েল শেখ ও আব্দুল কাদের দড়ির দুই পাশ ধরে শ্বাসরোধে মিয়াদকে হত্যার চেষ্টা চালায়। বসা অবস্থায় মিয়াদ হাঁটু গেড়ে ঝুঁকে পড়লে তখন আব্দুল কাদের তার কাছে থাকা চাকু দিয়ে কোমরে আঘাত করে। এরপর ওই চাকু নিয়ে জুয়েল শেখও মিয়াদের কোমরে আঘাত করে। একপর্যায়ে মিয়াদ শুয়ে পড়লে আব্দুল কাদের চাকু দিয়ে তাকে গলা কেটে হত্যা করে। এ সময় মাথার চুল ধরে রেখে গলা কাটতে সহায়তা করে জুয়েল শেখ। মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করলে মিয়াদের কোমরে জড়িয়ে রাখা গামছা দিয়ে তার দুই পা বেঁধে রাখে আব্দুল কাদের ও জুয়েল শেখ। মিয়াদকে হত্যার পর ওই রাতেই তারা ব্যাটারিচালিত রিকশাটি শহরতলীর শেখহাটি জামরুলতলায় জুয়েল শেখের বোনের বাড়িতে নিয়ে যায়। বোনের বাড়িতে যাওয়ার পর রিকশাটি নিজের দাবি করে জুয়েল বিক্রির জন্য খদ্দের খুঁজতে থাকে। পরদিন তারা ব্যাটারি খুলে রিকশাটি শেখহাটি জামরুলতলা এলাকার এক যুবকের কাছে ১০ হাজার ৮শ টাকায় এবং ব্যাটারি ঘোপ এলাকার এক ব্যক্তির কাছে ১১ হাজার ৫৫ টাকায় বিক্রি করে দেয়।
তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ডিএম নূর জামাল হোসেন বলেন, বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর মিয়াদ নিখোঁজ হওয়ায় পরদিন ২২ জুন নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোতয়ালি থানায় জিডি করা হয়েছিলো। এরপর গত ৩ জুলাই ক্ষিতিবদিয়া গ্রামের ওই মেহগনি বাগান থেকে লুঙ্গিসহ অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির কঙ্কাল উদ্ধার করে পুলিশ। পরে নিখোঁজ মিয়াদের স্ত্রী শারমিন কঙ্কালের সাথে পাওয়া লুঙ্গিটি তার স্বামীর বলে শনাক্ত করেন। ফলে নিশ্চিত হওয়া যায় উদ্ধার হওয়া কঙ্কালটি নিখোঁজ মিয়াদের। এ ঘটনায় শারমিন অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে কোতয়ালি থানায় মামলা করেন। এরপর তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে গত শনিবার দুপুরে পুরাতন কসবা কাঁঠালতলা থেকে সন্দেহভাজন আসামি আব্দুল কাদেরকে আটক করা হয়। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যার কথা স্বীকার করে। পরে তার স্বীকারোক্তিতে হত্যায় ব্যবহৃত চাকু জব্দ এবং হত্যায় জড়িত অপর অভিযুক্ত জুয়েল শেখকে পুরাতন কসবা রায়পাড়া থেকে আটক করা হয়। এরপর আটক দুজনের স্বীকারোক্তিতে শেখহাটি জামরুলতলা থেকে ছিনতাই করা রিকশা এবং ঘোপ থেকে ব্যাটারি উদ্ধার করা হয়।