বেনাপোলে জাল ভ্রমণ কর সার্টিফিকেট চক্রের ২ সদস্য আটক

0

 

বেনাপোল (যশোর) সংবাদদাতা॥ বেনাপোল ইমিগ্রেশন কাস্টমসে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা ভ্রমণ কর ফাঁকি ও জাল করোনা সার্টিফিকেট বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে কাস্টম কর্তৃপক্ষ। জাল ভ্রমণ কর জালিয়াতির ঘটনা তদন্তে কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার আব্দুর রশিদ মিয়াকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বিদেশ ভ্রমণ কর জালিয়াতির ঘটনায় ৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২০/২৫ জনের নামে মামলা করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিন বেনাপোল চেকপোস্টে জাল ভ্রমণ কর ও জাল করোনা সার্টিফিকেট তৈরি করতে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে।

মামলার পর শুক্রবার রাতে এ ঘটনায় বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ গ্রিন লাইন পরিবহনের ম্যানেজার জসীম উদ্দিন ও শনিবার সকালে একই পরিবহণ স্টাফ মোহনকে আটক করে যশোর আদালতে প্রেরণ করেন। পলাতক রয়েছে মামলার অন্যান্য আসামিরা।

বেনাপোল চেকপোস্টের অবৈধভাবে গজিয়ে ওঠা কম্পিউটারের দোকানে, মোবাইল ফোনের দোকান ও ফটোকপিসহ বিভিন্ন নামের এন্টারপ্রাইজের দোকানে এসব জাল ভ্রমণ কর ও জাল করোনা সার্টিফিকেট তৈরি করা হচ্ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় গড়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠানে জালিয়াতির ঘটনা ঘটলেও বরাবরই তারা ছিল নীরব।

জাল ভ্রমণ কর মামলার অন্যান্য পলাতক আসামি হলো হানিফ পরিবহনের বেনাপোল শাখা অফিসের ম্যানেজার নজরুল ইসলাম। এছাড়া আছেন দেশ ট্রাভেলস পরিবহনের ম্যানেজিং পার্টনার হাসান আলী, বড় আঁচড়া গ্রামের মিলন খান, সাদিপুর গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে ইমরান হোসেন, মমিনের ছেলে শামীম হোসেন, বেনাপোল ট্রাভেল পয়েন্টের কর্মচারী ইসমাইল হোসেন ও মনিরুল ইসলামসহ অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জন।

বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ জানায়, কাস্টম কমিশনারের নিদের্শে গোপন সংবাদের পেয়ে কাস্টমসের একটি টিম বৃহস্পতিবার বিকেলে কাস্টমস চেকপোস্ট বর্হিগমন স্ক্যানিং মেশিনের সামনে ভারতগামী পাসপোর্ট যাত্রীদের ট্রাভেল ট্যাক্স রশিদ অনলাইনে কিউআর কোড স্ক্যান করে যাচাইকালে বেশকটি রশিদ জাল প্রমাণিত হয়।

পরে কর্মকর্তারা গ্রিন লাইন পরিবহনের ১৩ জন, হানিফ পরিবহনের ৮জন, দেশ ট্রাভেলস পরিবহনের ৭ জন যাত্রীর ট্রাভেল ট্যাক্স রশিদ পরীক্ষা করে জাল প্রমাণ পায়। গ্রিন লাইনের ১৩ জন যাত্রীই জানান, তাদের বহনকৃত জাল ট্রাভেল ট্যাক্স রশিদগুলো গ্রিনলাইন পরিবহনের ম্যানেজার জসীম উদ্দিন, অফিস পিয়ন মোহন মিয়া এবং তাদের অফিস স্টাফগণ তাদের কাছ থেকে ভ্রমণ করের টাকা নিয়ে জাল প্রদান করেন।

হানিফ এন্টারপ্রাইজের ৮জন যাত্রী জানান, তাদের বহনকৃত জাল ট্রাভেল ট্যাক্স পরিবহনের ম্যানেজর নজরুল, অফিস পিয়ন মিলন খান এবং তাদের স্টাফগণ তাদেরকে দিয়েছেন।
পুলিশ আটক দুজনকে জিঞাসাবাদে করলে তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।

বেনাপোল কাস্টম হাউসের সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা এফ এম আতিকুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। তিনি জানান, দীর্ঘদিন পরস্পর যোগসাজসে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত পাসপোর্ট যাত্রীদের ভ্রমণ কর ৫০০ টাকাসহ মোট ৭০০ টাকা যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছিল এই চক্রটি।

সরকারের বিপুল অংকের এই রাজস্ব ফাঁকির ঘটনায় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করলে আরও ভ্রমণ কর ফাঁকির ঘটনা ধরা পড়বে বলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ মনে করেন।

পুলিশ ও কাস্টমসের যৌথ অভিযানে চেকপোস্টে একটি কম্পিউটার দোকান থেকে জাল ট্রেজারি চালান ফরম ২ পাতা এবং ১টি হিটাচি ব্রান্ডের এ ইউ জি-২০১০ মডেলের হার্ডডিস্ক, ১টি ডব্লিউ ডি ব্লু ডেস্কটপ হার্ড ড্রাইভ, ১টি ডব্লিউ ডি গ্রিন সাটা এসএসডি, ১টি লেজার সলিড স্টেট ড্রাইভ জব্দ করা হয়।

বেনাপোল কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার আব্দুর রশিদ মিয়া জানান, সরকারের বিদেশ ভ্রমণ কর জাল জালিয়াতির সাথে যারাই জড়িত তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।
বেনাপোল পোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ কামাল হোসেন ভুঁইয়া জানান, ভ্রমণ কর জাল করে রাজস্ব ফাঁকির ঘটনায় কাস্টমসের দেয়া মামলায় জালিয়াত চক্রের ৯ জন আসামিসহ অজ্ঞাত নামা ২০/২৫ জন আসামিকে আটক করা হবে। তবে ইতিমধ্যে ২ জনকে আটক করা হয়েছে। তবে করোনার জাল সার্টিফিকেট তৈরির জালিয়াতি চক্রের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।