প্রথম দিন জমেনি যশোরের রাজারহাটের চামড়া হাট

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ ঈদুল আজহার পর যশোরের রাজারহাটে চামড়া হাটের প্রথম দিন মঙ্গলবার জমেনি। এদিন খুব বেশি চামড়াও ওঠেনি হাটে। কাক্সিক্ষত দাম না পেয়ে হতাশ হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। হাট সংশি¬ষ্টরা বলছেন, আগামী শনিবারের হাটে চামড়ার আমদানি বাড়তে পারে।
হাটে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদ পরবর্তী প্রথম হাটে চামড়ার দাম না পেয়ে তারা হতাশ। সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি করতে পারছেন না। অনেকেই প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন নির্ধারিত দামের অর্ধেকে। আর ছাগলের চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে না পারায় সেগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।
এদিন সকালে যশোরসহ নড়াইল, সাতক্ষীরা ও মাগুরার বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী চামড়া নিয়ে রাজারহাটে আসেন।
যশোরের অভয়নগর উপজেলা থেকে আসা বাসুদেব বিশ্বাস বলেন, ‘এবার ৫শ’ পিস গরুর চামড়া কিনেছি। হাটে ২০০ পিস গরু ও ১০০টি ছাগলের চামড়া এনেছি। গরুর চামড়া ৭০০ টাকা দরে আর ছাগলের চামড়া ২০-২৫ টাকা দরে বিক্রি করেছি। গরুর চামড়াপ্রতি খরচ বাদ দিয়ে ১০০ টাকা করে গচ্চা গেছে। এছাড়া গাভির চামড়ার দাম বলছে না ক্রেতারা। গড়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা লোকসান হবে আমার। আগামী শনিবারের হাটে দাম না পেলে আর্থিকভাবে পঙ্গু হয়ে যাবো।
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার কালিনগর গ্রামের ব্যবসায়ী হরেন্দ্রনাথ বলেন, ‘হাটে ৫০০ পিস গরুর চামড়া এনেছি। প্রতিটি চামড়া কিনেছি ৪শ থেকে ৭শ টাকা দরে। লবণ, শ্রমিক খরচ ও পরিবহন বাবদ প্রতিটি চামড়ায় আরও ২০০ টাকা করে খরচ হয়েছে। গতকালের হাটে বড় চামড়া বিক্রি করেছি ৯০০ টাকা এবং ছোটগুলো ৪০০ টাকা দরে। এর মধ্যে ২০টি চামড়া বিক্রি হয়নি। গড়ে চামড়া বিক্রি হয়েছে সাড়ে ২২ টাকা ফুট দরে। অর্থাৎ সরকার নির্ধারিত দামের অর্ধেক পেয়েছি। আরেক চামড়া ব্যবসায়ী ফুলচান দাস বলেন, ‘আমরা এক হাজার পিস ছাগলের চামড়া কিনেছিলাম। চামড়ায় লবণ দেয়া ছিল। লবণের দাম ও বেশি টাকা দিয়ে শ্রমিক না পাওয়ায় প্রায় ১২শ পিস চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখন এই পচা চামড়া অন্যত্র নিয়ে পুঁততে হবে। তাতে আরও হাজার পাঁচেক টাকা খরচ হতে পারে।
বৃহত্তর যশোর চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মমিনুল মজিদ বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত দামেই ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনছেন। ক্ষুদ্র বিক্রেতারা বেশি দামে চামড়া কিনলে লোকসানতো দিতে হবেই। তবে, কিছু ছাগলের চামড়া প্রসেসিংয়ের অভাবে নষ্ট হয়েছে বলে জেনেছি।
ট্যানারি মালিকদের কাছে প্রায় ১০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে বলে জানিয়েছেন চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল।
তিনি বলেন, ‘ঢাকার বাইরে এবার চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৪ টাকা। গতকালের হাটে হাজার তিনেক চামড়া উঠেছে। আগামী শনিবার বড় হাট। আশা করা যায়, সেদিন কমপক্ষে ৫০ হাজার গরু ও ৫০ হাজার ছাগলের চামড়া উঠবে। দাম ভালো পাওয়ায় দূর-দূরান্ত থেকে ক্ষুদ্র ও বড় ব্যবসায়ীরা আগামী হাটে চামড়া নিয়ে আসবেন।’
উলে¬খ্য, রাজারহাটে যশোরসহ খুলনা বিভাগের দশ জেলার পাশাপাশি ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ঝালকাঠি, রাজশাহী, পাবনা, ঈশ্বরদী ও নাটোরের বড় ব্যবসায়ীরা চামড়া বেচাকেনা করেন। এই হাটে দশ কোটি টাকার অধিক চামড়া বেচাকেনা হয়।