মানবাধিকারকর্মী সালমা খান আর নেই

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ নারীর বিরুদ্ধে সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ সনদ সংক্রান্ত (সিডও) জাতিসংঘ কমিটির সাবেক চেয়ারপারসন, অর্থনীতিবিদ ও নারী অধিকারকর্মী সালমা খান আর নেই। গতকাল শনিবার বেলা ২টার দিকে রাজধানীর গুলশানের বাসায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি।
সালমা খান ফুলব্রাইট স্কলারশিপ, ইউএস এআইডি স্কলারশিপ, ব্রিটিশ কাউন্সিল স্কলারশিপ ও মর্যাদাপূর্ণ আইজেনহাওয়ার এক্সচেঞ্জ ফেলোশিপ পেয়েছিলেন। প্রথম এশীয় হিসেবে সিডও কমিটির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। এই কমিটিতে তিন মেয়াদে ১২ বছরের বেশি সময় দায়িত্ব পালন করেন। তার মৃত্যুর সংবাদ গণমাধ্যমকে জানান স্বামী সাবেক মন্ত্রী হাবিব উল্লাহ খান। তিনি বলেন, দুপুরে সালমা খানকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মেয়ে উমানা হকের দেশে আসার ওপর নির্ভর করছে সালামা খানের মরদেহ দাফন। মেয়ে না আসতে পারলে পরিবারের অন্য সদস্যরা দাফনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে সালমা খানের মরদেহ।
হাবিব উল্লাহ খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি নিজেও অসুস্থ। হাঁটতে পারি না। এখন তো ও আমাকে ফেলে চলে গেল। আমি আরও একা হয়ে গেলাম।’
গুলশানের বাসায় সালমা খান ও তার স্বামী থাকতেন। দুজনই দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। কয়েকজন নার্স বাড়িতে তাদের দেখাশোনা করতেন। বাড়িতে নার্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করা একজন ফয়সাল ইসলাম জানান, সালমা খান মারা যাওয়ার সময় তিনি তার পাশেই ছিলেন। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এক সপ্তাহ ধরেই থেমে থেমে জ্বর হচ্ছিল সালমা খানের। মাঝেমধ্যে শ্বাসকষ্ট হতো।
ফয়সাল আরও জানান, সালমা খানের মৃত্যুর খবর তার মেয়েকে জানানো হয়েছে। মেয়ে দেশে ফেরার চেষ্টা করছেন। তিনি এলে বা যদি না আসতে পারেন, তখন ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হবে।
সালমা খান এনজিও কোয়ালিশন ফর বেইজিং প্ল্যাটফর্ম ফর অ্যাকশনের সাবেক চেয়ারপারসন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ফুলব্রাইট স্কলার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উন্নয়ন অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিংয়ে ডিপ্লোমা ও যুক্তরাজ্যের লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জেন্ডার প্ল্যানিংয়ে বিশেষ জ্ঞান অর্জন করেন। দেশের জেন্ডার সংবেদনশীলতা, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা, সিডও সনদ বাস্তবায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
‘ফিফটি পারসেন্ট : উইমেন ইন ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড পলিসি ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে তার একটি বই আছে। দেশের বিভিন্ন সরকারি অফিসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। জাতীয় পরিকল্পনা কমিশনে নারী উইংয়ের সূচনা ও বাংলাদেশের পঞ্চবার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনার ম্যাক্রো কাঠামোতে লিঙ্গ সমস্যাকে মূলধারায় আনার জন্য তিনি ভূমিকা রেখেছেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা করেন এবং বিভাগীয় প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বও পালন করেন।
সালমা খান নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে গবেষণা ও প্রকাশনার জন্য ১৯৯০ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে স্বর্ণপদক পান। ১৯৯৭ সালে শ্রেষ্ঠ নারী প্রশাসক হিসেবে অনন্যা শীর্ষ দশ পুরস্কার এবং নারীর উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য অসামান্য সেবার স্বীকৃতি হিসেবে রোটারি ইন্টারন্যাশনাল জিন হ্যারিস পুরস্কারে ভূষিত হন। এ ছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মাননা পেয়েছেন কলকাতায় জন্মগ্রহণ করা সালমা খান।