আজ যশোর শিল্পকলা একাডেমির নির্বাচন, আশাবাদী দু’পক্ষ

0

তহীদ মনি ॥ আজ যশোর শিল্পকলা একাডেমির ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন। সকাল ১০টা থেকে বেলা ৪টা পর্যন্ত এই ভোট গ্রহণ চলবে। দুটি প্যানেলে ১৬ জন প্রার্থী ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শেষ হয়েছে। অবশ্য মোবাইল ফোনে ও ব্যক্তি আলাপচারিতায় ভোট ভিক্ষা থেমে নেই কোনো পক্ষের। এর ওপর রয়েছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বা প্লাটফর্ম। তাছাড়া সাংস্কৃতিক সংগঠনে মিটিং, বৈঠক, কৌশল নির্ধারণ সব কিছুই চলছে। ফলে প্রচার চলছেই- চলছে ভোট ভিক্ষা। তবে এবারের নির্বচনে সাধারণ ভোটার এবং কম পরিচিত মুখের কদর কম, ভোট প্রার্থনার জন্যে সমাজের এলিট ভোটারের কাছে যাওয়া, তাদের সাথে ছবি তুলে ফেসবুকে দেওয়া, বিভিন্ন সভা, মিটিং, বৈঠকের নামে সমাজের গুটি কয়েক লোক বা একই ঘরনার কিছু লোক মিলিত হয়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণার কারণে অনেক সাধারণ ভোটারের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই নিজেকে অবাঞ্ছিত মনে করছেন। ফলে তারা অধিক যোগ্য ও সর্বজন সমাদৃত প্রার্থী খুঁজছেন। যদিও অনেকে মনে করছেন এবার সেরকম বেশি কিছু পাওয়া যাবে না তাই যতটুকু মেনে নেওয়া যায় ততটাই করবেন বলে তাদের ইচ্ছা।
আজ ভোট তাই প্রার্থীরা রয়েছেন দারুণ চাপে। তার চেয়ে চাপে রয়েছেন প্রার্থীদের কর্মী সমার্থকরা। ভোটের প্রথম দিকে একটি প্যানেলের এক চেটিয়া ভোট ধরা হলেও ধীরে ধীরে কিছু চিত্র পাল্টেছে বলে অনেকেই মনে করছেন। তাদের মতে বিষয়টি অত সহজ নেই। অন্তত ঘাম ঝরাতে হয়েছে। দুটি প্যানেলের একটিতে শহরের বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তি ও এই অঙ্গনের অতিপরিচিত মুখ রয়েছেন। অন্যদিকে অপর প্যানেলে বেশ কিছু নতুন মুখ এবারের ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। অনেকে পরিবর্তনে বিশ্বাসী হলেও পরিবর্তন করে কাকে আনবেন এমন সমস্যায়ও রয়েছেন অনেকেই। ফলে একেবারে প্রতিদ্বন্দ্বীতাহীন হবে না বলেও মনে করছেন অনেকেই।
৯৭৫ ভোটারের গোপন ভোটে ৮টি পদে সহসভাপতি, সম্পাদকসহ ৮ জন প্রার্থী নির্বাচিত হবেন। নিয়মানুযায়ী শিল্পকলা পরিচালনা কমিটির ১৫টি পদের মধ্যে ২টি নির্ধারিত। সভাপতি পদে পদাধিকার বলে জেলা প্রশাসক এবং কোষাধ্যক্ষ পদে জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার নির্ধারিত। তাছাড়া জেলা প্রশাসক কমিটিতে তার মনোনীত একজনকে নিয়োগ দেবেন। একইভাবে শিল্পকলার মহাসচিব (ডিজি) ৪ জনকে ওই কমিটিতে মনোনীত করবেন। অবশিষ্ট ৮টি পদে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ভোটাররা নির্বাচিত করবেন।
এই ৮টি পদের জন্যে লাল-সবুজ পরিষদ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সহ সভাপতি পদে আহমেদ সাইদ বুলবুল ও সাজ্জাদুর রহমান খান বিপ্লব, সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাড. মাহমুদ হাসান বুলু, যুগ্ম সম্পাদক পদে অনুপম দাস ও চঞ্চল কুমার সরকার, সদস্য ৩ জন হলেন- অ্যাড. বাসুদেব বিশ্বাস, শহিদুল হক বাদল এবং ডা. মো. আতিকুজ্জামান রনি।
একইভাবে রংধনু পরিষদ থেকে সহ-সভাপতি পদের দু’জন হলেন, মো.জাহাঙ্গীর আলম ও আসাদ আসাদুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক পদে রওশন আরা রাসু, যুগ্ম সম্পাদক পদের দুইজন হলেন- মো.আনিসুজ্জামান পিন্টু ও মো. নাসির উদ্দীন মিঠু এবং সদস্য পদের ৩ জন হলেন- প্রদীপ চক্রবর্তী রানা, সাজ্জাদ গনি খান রিমন ও মো. ফয়সাল খান।
জেলা শিল্পকলা একাডেমি যশোরের এই ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ দুটি প্যানেল। লাল-সবুজ পরিষদ ও রংধনু পরিষদ নামের প্যানেল দুটি প্রত্যেকেই জয়লাভের স্বপ্নে বিভোর। তবে অনেকেই লালা সবুজের পাল্লা ভারী বলে মনে করছেন। তাদের প্রার্থীদের সাথে কথা বলে চাঙ্গা মনোভাব পাওয়া গেছে। তবে দিন রাত পরিশ্রম করেছেন রংধনু পরিষদের প্রার্থীরাও। তাদের একটি বড় শ্লোগান এবার যুক্ত করতে পেছেনে যে, তারা না দাঁড়ালে ভোটারদের ভোট দেওয়ার অধিকারটুকুও থাকতো না। তাদের দাবি ভোটার ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা স্থবিরতা থেকে এখন পরিবর্তন চায়। ফলে, তারাও জয়ের আশা করছেন।
তবে এবারের ভোটে শেষের দিকে এসে ছোট ছ্টে মিটিং সিটিং হয়েছে দুপক্ষের সমর্থনেই। এটি আগে কোনো ভোটে দেখা যায়নি। প্রচারণায় ও ছিল নতুন মাত্রা। স্ত্রী সন্তান দিয়ে মোবাইল ফোনে ভোট চাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তবে ভেতরে ভেতরে কিছু গোছগাছ কোনো প্যানেলের কারো কারো সমস্যার কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। বিশেষ করে ইনস্টিটিউট কেন্দ্রিক কিছু ভোট, সরাসরি ২৬টি সংগঠনের সাথে জড়িত না থাকা ভোটসহ নারী কেন্দ্রিক কিছু ভোট এবার কোনো একটি প্যানেলের দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে ভোটার।
অবশ্য সাধারণ ভোটারদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। দলীয় ফোরামে নির্বাচন না হলেও দলীয় ও সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে করা কাজগুলিও প্রচারে এনেছেন। অনেকের পক্ষে ফেসবুকে দলীয় অনেকেই ভোট প্রার্থনা করছেন, তাদের প্রার্থীর গুণগান করেছেন। কিন্তু শিল্পকলা একাডেমি বছরের পর বছর কতজন শিল্পী, আবৃত্তিকার, নাট্যভিনেতা বা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের সাংস্কৃতিক কর্মী সৃষ্টি করতে পেরেছেন? কতটা জাতীয় খেতাব, মেডেল এলো, অর্জিত হলো, এর ফিরিস্তি কোথাও নেই বলে অভিযোগ সাধারণ ভোটারদের। অনেক ভোটরের কর্তব্য কেউ কেউ ব্যাস্ত পদ পেতে কেউ কেউ মরিয়া পদ ধরে রাখতে। বেশ কিছু মুখ যশোরের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। তাদের সংগঠনের প্রোগ্রামে দর্শক-শ্রোতা ঠেলে ফেলা যায় না। কিন্তু তারা শিল্পকলার কর্মকর্তা হিসেবে আয়োজিত কর্মসূচিতে ফাঁকা চেয়ারই পূরণে ব্যর্থ হন। অনেকের অভিযোগ শিল্পকলাকে পুঁজি করে তারা নিজেদের সংগঠনের আখেরই গোছান শুধু। তারা চান বিকশিত শিল্পকলা, জনগণের ও সাংস্কৃতিক কর্মী-বোদ্ধাদের শিল্পকলা। অনেক ভোটার বলেছেন নির্দিষ্ট গণ্ডি থেকে বের হয়ে জেলাবাসীর আকাক্সক্ষার ঠিকানা হোক শিল্পকলা। সাংস্কৃতিক বিকাশে জেলার প্রধান মাধ্যম হোক শিল্পকলা আগামী নেতৃত্বের কাছে এমনটিই চাওয়া তাদের।