যশোরে আলোচিত মিনারুল হত্যা মামলায় একমাত্র আসামি হাফিজুরের মৃত্যুদণ্ডাদেশ

0

 

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর সদর উপজেলার সালতা গ্রামের আলোচিত মিনারুল হত্যা মামলায় একমাত্র আসামি হাফিজুর রহমানের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সাথে তাকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার যশোরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিক এই রায় ঘোষণা করেন। মিনারুল হত্যাকাণ্ডের ৩ বছর পর এই মামলার রায় ঘোষণা হলো।
পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. এম ইদ্রিস আলী জানান, মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত হাফিজুর রহমান ওসমানপুর গ্রামের চান্দালী মোল্লার ছেলে। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। অপরদিকে নিহত মিনারুল সালতা গ্রামের মৃত সদর আলী মোল্লার ছেলে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, দণ্ডপ্রাপ্ত হাফিজুর রহমান একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কৃষি বিভাগে কাজ করতেন। তার ছোটভাই আব্দুল মান্নানের বন্ধু ছিলেন নিহত মিনারুল। আব্দুল মান্নান নিজ বাড়িতে দর্জির কাজ করতেন। সেখানে তার কাছে দর্জির কাজ শিখতে যেতেন মিনারুল। ওই বাড়িতে যাতায়াতের এক পর্যায়ে হাফিজুরের স্ত্রী সাবিনার সাথে মিনারুলের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে উঠে। যা শারীরিক সম্পর্কে গড়ায়। বিষয়টি একদিন হাফিজুর নিজে দেখে ফেলেন। এ সময় হাফিজুরের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন মিনারুল। হাফিজুর এ বিষয়টি আর কাউকে বলেননি। কিন্তু তিনি মনের দুঃখে স্ত্রী সাবিনাকে তালাক দেন এবং পরে ডলি নামে এক নারীকে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন। তারপরও প্রথম স্ত্রী সাবিনার কথা কখনো ভুলতে পারেননি।
ওই ঘটনার পর মিনারুল তার নিজ গ্রামের বিলকিস নামে আরেক নারীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এ সংক্রান্ত ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হলে মিনারুল কয়েক বছর হাজতবাসও করেন। এই ঘটনাটি জানতে পেরে মিনারুলের ওপর হাফিজুরের আরো ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তিনি মিনারুলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এ কারণে হাফিজুর কৌশলে ‘ভালো’ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এরই মধ্যে সাথী নামে এক নারীকে মিনারুল বিয়ে করেন। মিনারুল তার স্ত্রীর সাথে শান্তিতে সংসার করতে দেখে তখন হাফিজুরের প্রথম স্ত্রীর কথা মনে পড়ে যায়। যা তাকে আরও ক্ষুব্ধ করে তোলে।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৯ সালের ১৪ আগস্ট রাতে মিনারুলের বাড়ির পাশের একটি বাগানে গিয়ে ধারালো অস্ত্র রেখে আসেন হাফিজুর। এরপর রাত ১০টার দিকে মিনারুলের বাড়িতে গিয়ে তাকে ইশারায় ডাক দেন হাফিজুর। মিনারুল তার ডাকে সাড়া দিয়ে বাড়ির পাশের বাগানে গেলে কৌশলে লুকিয়ে রাখা দা বের করে কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন হাফিজুর। মিনারুলকে কুপিয়ে হত্যা হত্যার পর সেখান থেকে চলে যান তিনি। পরে লাশ উদ্ধার হলে এ ঘটনায় নিহতের বড়ভাই আক্তারুজ্জামান অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের এসআই জিয়াউর রহমান। তিনি নানা তথ্যের ভিত্তিতে মিনারুল হত্যার ৯ দিনের মাথায় হাফিজুরকে আটক করেন।
এ সময় জিজ্ঞাসাবাদে হাফিজুর হত্যার কথা স্বীকার করেন। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় ব্যবহৃত দা উদ্ধার করা হয়। একই বছরের ২৫ আগস্ট আটক হাফিজুরকে আদালতে সোপর্দ করা হলে তিনি হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেন। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক গৌতম মল্লিক তার জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর একই বছরের ৭ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন এসআই জিয়াউর রহমান।
এই মামলায় একমাত্র অভিযুক্ত আসামি হাফিজুরের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালতের বিচারক তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদান করেন।