আতঙ্ক শংকরপুরে : আফজাল হত্যা ও কাউন্সিলর বাবুল জখমের ঘটনায় তোলপাড়, আটক নেই

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর শহরের নাজির শংকরপুরে হত্যাসহ প্রায় এক ডজন মামলার আসামি আফজাল হোসেন প্রতিপক্ষের হাতে নৃশংসভাবে খুন হওয়ার পরদিনই ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাড. আসাদুজ্জামান বাবুল সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর জখম হওয়ায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। সন্ত্রাসী আফজাল হোসেন হত্যার সাথে জড়িতরা পৌর কাউন্সিলর অ্যাড. আসাদুজ্জামান বাবুলের পোষ্য সন্ত্রাসী বলে এলাকায় ব্যাপক প্রচার রয়েছে। হত্যার জের ধরেই অ্যাড. আসাদুজ্জামান বাবুলের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে অনেকে মনে করছেন। তবে পুলিশ দুটি ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে এখনো আটক করতে পারেনি।
এলাকাবাসী জানান, গত রোববার সন্ধ্যারাতে নাজির শংকরপুর চাতালের মোড় এলাকার পুকুরের বিপরীতে সিটি মডেল একাডেমির সামনে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী ট্যারা সুজন গংয়ের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন আফজাল হোসেন। তাকে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করা হয়। দেড় বছর আগে বিআরটিএ অফিসের সামনের মোটরসাইকেল স্ট্যান্ডের দখলদারিত্বকে কেন্দ্র করে ট্যারা সুজনকে ছুরিকাঘাতে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছিলেন সন্ত্রাসী আফজাল হোসেন। এর প্রতিশোধ নিতে ট্যারা সুজন ও তার সহযোগীরা কুপিয়ে হত্যা করে আফজালকে। সূত্র জানায়, আফজাল হোসেন হত্যার সাথে জড়িতরা পৌর কাউন্সিলর অ্যাড. আসাদুজ্জামান বাবুলের ‘লোক’ হিসেবে এলাকায় প্রচার রয়েছে। তার অফিসেও ট্যারা সুজন গং উঠাবসা করতো বলে অভিযোগ রয়েছে। আফজাল হোসেন হত্যার পর তার সহযোগীরা পৌর কাউন্সিলরকে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করে। তারা তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলো। সূত্র জানায়, গত সোমবার রাত আটটার দিকে বেজপাড়া কবরস্থানে নিহত আফজাল হোসেনের লাশের দাফন শেষে নাজির শংকরপুর জিরো পয়েন্টে যাচ্ছিলেন অ্যাড. আসাদুজ্জামান বাবুল। এ সময় কোনকিছু বুঝে ওঠার আগেই একই এলাকার কাঠমিস্ত্রি জাহাঙ্গীরের ছেলে সাকিব কুড়াল দিয়ে তার মাথার পেছনে কোপ মারে। লাশ দাফনের বাঁশ কাটার জন্য কুড়ালটি সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। আর কুড়ালটি ছিলো সাকিবের কাছে। স্থানীয়দের ধারণা, আফজাল হোসেন হত্যার জের ধরে পৌর কাউন্সিলর অ্যাড. আসাদুজ্জামান বাবুলের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে সাকিব আটক হলে হামলার প্রকৃত কারণ জানা যেতে পারে।

নিহত আফজাল

অপরদিকে নিহত আফজাল হোসেনের পিতা সলেমান হোসেন অভিযোগ করেন, পৌর কাউন্সিলর অ্যাড. আসাদুজ্জামান বাবুলকে কুপিয়ে জখম করেছে সাকিব নামে এক যুবক। হয়তো কোন আক্রোশে সে তাকে কুপিয়েছে। অথচ পুলিশ ঘটনার পর তার তিন ছেলে উজ্জল, রমজান ও নজরুলকে ধরে নিয়ে গেছে। তাদের সাথে দেখা করতে দিচ্ছে না পুলিশ। তিনি আরও বলেন, যারা তার ছেলে আফজাল হোসেনকে হত্যা করেছে তারা পৌর কাউন্সিলর অ্যাড. আসাদুজ্জামান বাবুলের লোক।
এ ব্যাপারে কোতয়ালি থানা পুলিশের ওসি মো. তাজুল ইসলাম জানান, তারা নিহত আফজাল হোসেনের ভাইদের আটক করেননি। তিনি আরও বলেন, আফজাল হোসেন হত্যাকাণ্ড এবং পৌর কাউন্সিল অ্যাড. আসাদুজ্জামান বাবুলের ওপর হামলার ঘটনায় কোনো পক্ষই এখনো পর্যন্ত থানায় লিখিত এজাহার দাখিল করেনি।
উল্লেখ্য, গুরুতর আহত পৌর কাউন্সিলর অ্যাড. আসাদুজ্জামান বাবুলকে গত সোমবার রাতেই ঢাকায় রেফার করেন যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা। বর্তমানে তিনি ঢাকার মিরপুর নিউরোসাইন্স হসপিটালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওসি মো. তাজুল ইসলাম।
ঢাকায় আহত পৌর কাউন্সিলর অ্যাড. আসাদুজ্জামান বাবুলের সাথে রয়েছেন নাজির শংকরপুর এলাকার এক যুবক। তিনি জানান, তার (বাবুল) অবস্থা এখন ভালো। তিনি শঙ্কামুক্ত।
এদিকে নাজির শংকরপুরে এক ডজন মামলার আসামি আফজাল হত্যার পর পৌর কাউন্সিলর অ্যাড. আসাদুজ্জামান বাবুলের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় এলাকাবাসীর মাঝে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এছাড়া দুটি ঘটনার সাথে জড়িতরা আটক না হওয়ায় ফের এলাকায় বড় ধরনের অঘটনের আশঙ্কা করছেন অনেকে।