ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা প্রবল হচ্ছে : বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় যশোরের চাষিরা

0

আকরামুজ্জামান ॥ বোরো ধান তোলার শেষ সময়ে ঝড়-বৃষ্টি শঙ্কা অবশম্ভাবী হয়ে উঠছে বলে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানাগেছে। যশোরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গত কয়েকদিনের তীব্র তাপদাহ আর খরায় এ অঞ্চলের প্রাণীকুল অতিষ্ট হয়ে উঠলেও বলা চলে স্বস্তিতে ছিলো বোরো চাষিরা। তাপমাত্রা যে মাত্রায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সেই হিসেবে ঝড়-বৃষ্টি হলে কৃষকের সর্বনাশ হয়ে যেতো। তবে এখনো মাত্রারিক্ত ঝড় বা বৃষ্টি না হওয়ায় চাষিদের তেমন সমস্যা হয়নি। তারপরও চরম অস্বস্তিতে রয়েছে বোরো চাষিরা। শুক্রবার থেকে এ অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টি প্রাথমিক আগমনী বার্তা এসেছে। এদিন জেলার দুই তিনটি উপজেলায় বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ সময় টানা প্রায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় ঝড় হয়েছে। এতে বোরো আবাদের তেমন ক্ষতি না হলেও সামনের দিনগুলো নিয়ে চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়ছে চাষিদের।
যশোর বীরশ্রেষ্ট মতিউর রহমান বিমান বাহিনী নিয়ন্ত্রিত আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানাগেছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় যশোরাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ের গতিবেগ ছিলো ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। তবে এ সময়ে ঝিরঝির যে বৃষ্টি হয় তা রেকর্ড করার মতো ছিলোনা বলে আবহাওয়াবিদরা জানান। আবহাওয়া অফিসের একজন কর্মকর্তা বলেন, আবহাওয়া পূর্বাভাসে যে চিত্র রয়েছে তাতে শনি ও রবিবার যেকোনো সময়ে এ অঞ্চলে বৃষ্টি হতে পারে। সাথে বাতাসের গতি বাড়ারও আশঙ্কা রয়েছে। তবে এ বৃষ্টিপাত দীর্ঘ হবে কীনা সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি।
যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, চলতি মৌসুমে যশোর জেলায় ১ লাখ ৫৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। বোরো চাষের জন্য আবহাওয়া অনেকটা অনুকূলে হওয়ায় কৃষক ভালো ফলনের আশা করছে। জেলার আট উপজেলায় বিস্তীর্ণ মাঠে এখন ধানকাটা চলছে। আর কয়েকদিন গেলেই কৃষক তার ধান নির্বিঘেœ ঘরে তুলতে পারবেন। তবে গত দুদিন ধরে এ অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠেছে। এতে কৃষক ক্ষেতের ধান তোলা নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
আবহাওয়া অফিস বলছে, চলতি সপ্তাহেই এ অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আকাশে মেঘের ঘনঘটা বেড়ে গেছে। ঘুর্ণাবতের কারণে প্রচুর জলীয় বাষ্প ঢুকছে এ অঞ্চলে। আর এর কারণে ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা দৃঢ় হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে বজ্রবিদ্যুতসহ বৃষ্টি ও হালকা ঝড় বয়ে যেতে পারে এ অঞ্চলে। বৃষ্টিপাত দু’একদিন দীর্ঘ হতেও পারে বলে আবহাওয়ার আগাম বার্তায় বলা হয়েছে। যদিও শুক্রবার যশোরের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি হয়েছে। এসব এলাকায় বৃষ্টির সাথে ঝড়ও ছিলো। তবে এ সময়ে বৃষ্টির সাথে যশোরসহ এ অঞ্চলে শিলা পড়লে বোরোর জন্য সর্বনাশ হয়ে যেতো বলে কৃষিবিদরা জানান।
জেলার সদর উপজেলার বসুন্দিয়া এলাকার কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিনের খরার কারণে চরম কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায় ছিলোনা। তারপরও চাষিরা আশা করছিলেন বৃষ্টি একটু বিলম্বে নেমে আসুক। প্রকৃতিও আমাদের অনেক সুযোগ করে দিয়েছিলো। কিন্তু শুক্রবার বিকেল থেকে আবহাওয়া পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে এখন আর সময় পাওয়া যাবে না। তাই ক্ষেতের ধান ঘরে তুলতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
একই উপজেলার ইছালির বোরো চাষি হাদিউজ্জামান মিলন বলেন, তাদের মাঠের প্রায় ২০ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে। কিছু ধান এখন মাঠে ফেলে রাখা হয়েছে। এসব ধান ঘরে তুলতে এখন দু একদিন সময় লাগবে। আশা করা যায় নির্বিঘেœই ধানগুলো ঘরে তুলে ফেলা যাবে। অবশ্য যদি ঝড়-বৃষ্টি হয় তাহলে বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক দীপঙ্কর দাস বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় যশোরাঞ্চলে যে বৃষ্টি ও ঝড় হয়েছে তাতে তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে সামনের দিনগুলো কী অবস্থায় যাবে সেটিই চিন্তার বিষয়। তিনি বলেন, তাদের জানামতে ইতিমধ্যে জেলার মোট আবাদের ২০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আর এক সপ্তাহ সময় পেলে কৃষক পুরোটাই ঘরে তুলতে পারবেন। তিনি বলেন, বৃষ্টি হলে সমস্যা হবেনা। তবে ভয় সাথে ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হলে ক্ষতি হতে পারে।