মনিরামপুরে দিনদুপুরে মারপিট-টাকা লুট : পুলিশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের পালাতে সহায়তার অভিযোগ, সড়ক অবরোধ

0

স্টাফ রিপোর্টার, মনিরামপুর (যশোর) ॥ যশোরের মনিরামপুর পৌরশহরে গতকাল রোববার দিনদুপুরে হামলা চালিয়ে বেপারী আটো রাইস মিলের মালিকের জামাই ও ছেলেকে মারপিট করে সাড়ে তিন লক্ষাধিক টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছিনতাই করে পালানোর সময় মিলের শ্রমিকসহ এলাকাবাসী ধাওয়া করে তিন সন্ত্রাসীকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, এ সময় টহল পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে তিন সন্ত্রাসীকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করে। এর প্রতিবাদে শ্রমিকসহ এলাকাবাসী যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পরে থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দক্ষিণপাশে হরিহরনদীর তীরে অবস্থিত মেসার্স বেপারী অটোরাইস মিলের মালিক আবদুস সালাম অভিযোগ করেন, কয়েকমাস ধরে এলাকার রুবেল, হায়দার, মনিরসহ বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী তার কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছে। কিন্তু তিনি দিতে চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। আবদুস সালামের অভিযোগ, অটোরাইস মিলের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য সকাল ১১ টার দিকে তার ছেলে রনি ও জামাই গোলাম মোস্তফা ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৪’শ টাকা নিয়ে মিলের গেটের সামনে পৌঁছলে রুবেল, হায়দার, মনির, বিল্লালসহ ৯/১০ জন সন্ত্রাসী কয়েকটি মোটরসাইকেলে করে এসে পথরোধ করে এবং অস্ত্র ও রড নিয়ে হামলা চালিয়ে মারপিট করে। এক পর্যায়ে তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিলের ওই টাকা ছিনিয়ে নিয়ে সন্ত্রাসীরা মোটরসাইকেলে করে পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় মিলের শ্রমিক ও এলাকাবাসী ধাওয়া দিয়ে রুবেল, হায়দারসহ তিনজনকে ব্রিজের কাছে চারপাশ থেকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে পুলিশের এসআই আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে পৌরশহরের টহল পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে হাজির হয়। মিল মালিক আবদুস সালাম ও তার জামাই গোলাম মোস্তফাসহ প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেন, এ সময় অবরুদ্ধ তিন সন্ত্রাসীকে আটকের জন্য বার বার অনুরোধ করা হলেও পুলিশ কর্ণপাত করেনি। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, অবরুদ্ধ তিন সন্ত্রাসীকে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন এসআই আবদুর রাজ্জাক। এ খবর জানাজানি হলে আটো রাইস মিলের শ্রমিক এবং মোহনপুর, বিজয়রামপুরসহ আশপাশের হাজারো মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। প্রতিবাদে এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ লোকজন যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কে কাঠ দিয়ে অবরোধ করেন। এ সময় সড়কের দু’পাশে দেড় শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে। ফলে যাত্রী সাধারণ অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হয়। তবে অবরুদ্ধ তিনজনকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতার অভিযোগ অস্বীকার করেন এসআই আবদুর রাজ্জাক। পরে থানার ওসি (তদন্ত) গাজী মাহাবুবুর রহমানের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এদিকে স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর বাবুল আকতার জানান, পৌরশহরের চাল বাজারের ইজারাদার হায়দার আলী, বিল্লাল হোসেন ও মনির হোসেন মেসার্স বেপারী আটো রাইস মিলের মালিক আবদুস সালামের কাছে খাজনা দাবি করেন। মূলত চাল বাজারের খাজনা পরিশোধ করাকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর এ ঘটনা ঘটে। তবে মিল মালিক আবদুস সালাম কাউন্সিলর বাবুল আকতারের দাবি প্রত্যাখ্যান করে জানান, চাল বাজার থেকে তার অটো রাইস মিলের দূরত্ব দুই কিলোমিটার। তার ওপর অটো রাইস মিল একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এভাবে খাজনা দেওয়ার কোন বিধান নেই।
থানা পুলিশের ওসি (সার্বিক) নূর ই আলম সিদ্দিকী জানান, এ ঘটনায় এখনও কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। তবে জানা গেছে এ ঘটনায় রাতে এলাকায় তিন গ্রামের লোকজন বসাবসি করে মামলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মিল মালিক আবদুস সালাম।