খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি যশোর সদরের নওয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে সুবিধাভোগীদের বিক্ষোভ

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ইউনিয়নভিত্তিক তালিকা থেকে সুবিধাভোগীদের নাম বাদ দেয়ার অভিযোগ এনে গতকাল মঙ্গলবার যশোর সদরের নওয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে শেখহাটি এলাকার শতাধিক নারী-পুরুষ বিক্ষোভ করেছেন। তাদের অভিযোগ, ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর তুহিন স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে তাদের পূর্বের তালিকায় থাকা নাম বাদ দিয়ে নতুন নাম সংযোজন করছেন। তবে এসব অভিযোগ সরাসরি নাকচ করে ইউপি চেয়ারম্যান বলেছেন, এর পেছনে তার পরিষদের একজন মেম্বারের ষড়যন্ত্র রয়েছে। তারই ইন্ধনে এসব মানুষ ইউনিয়ন পরিষদের সামনে এসে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা চালিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সরকার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ইউনিয়নভিত্তিক তালিকা থেকে মৃত, স্বচ্ছল ও ভুয়া ব্যক্তিদের নাম বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরই আলোকে খাদ্য অধিদপ্তরের সরবরাহ বন্টন ও বিপণন বিভাগ জেলা খাদ্য বিভাগের মাধ্যমে প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের বরাবর পূর্বের তালিকা সংশোধনপূর্বক হালনাগাদ করার নির্দেশনা দিয়ে পত্র পাঠায়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০ এপ্রিল যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম মুনিম লিংকন স্বাক্ষরিত একটি পত্র নওয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পাঠানো হয়। পত্র প্রাপ্তির পর চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর তুহিন ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারদের সাথে বসে সংশোধনের জন্য প্রকৃত অস্বচ্ছল সুবিধাভোগীদের নাম চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেন। এরই মধ্যে সোমবার ইউনিয়নের ৪ নম্বর শেখহাটি ওয়ার্ডের মেম্বার সাজেদুল হক রিপন তার ফেসবুক আইডিতে তিনজন সুবিধাভোগীর বক্তব্যের ভিডিও আপলোড করেন। আপলোড করা ওই ভিডিওতে তারা অভিযোগ করেন খাদ্যবান্ধব তালিকা থেকে তাদেরসহ শেখহাটি এলাকার লোকজনদের নাম চেয়ারম্যান বাদ দিয়ে দিচ্ছেন। এই ভিডিও প্রচার হওয়ার পর থেকে শেখহাটি ওয়ার্ডের পূর্বের তালিকাভুক্ত সুবিধাভোগীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা গতকাল (মঙ্গলবার) বেলা ১১ টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে এসে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে সেখানে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। প্রায় ঘন্টাব্যাপী এসব নারী-পুরুষ সেখানে উপস্থিত থেকে চেয়ারম্যানের কাছে কারণ জানতে চাওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন।

ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নারী পুরুষের বিক্ষোভ

বিক্ষোভকালে শেখহাটি গ্রামের মৃত মুস্তাফিজুর রহমানের স্ত্রী নাসিমা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি খুব অসহায়। আগের তালিকায় নাম থাকায় এখানে ৩০ কেজি করে চাল পেতাম। এখন শুনছি নাকি আমার নাম তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।’ একই কথা বলেন লিয়াকত আলীর স্ত্রী রেহেনা খাতুন। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি তালিকা থেকে বাদ পড়ি তাহলে আর কোনো উপায় থাকবে না।’
এ বিষয়ে নওয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর তুহিন বলেন, ‘এসব কিছুই আমার পরিষদের মেম্বার সাজেদুল হক রিপনের ষড়যন্ত্র। সে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য ফেসবুকে উস্কানিমূলক ভিডিও দিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের ২২টি গ্রাম রয়েছে। এই গ্রামগুলোর জন্য মোট বরাদ্দ ১৫শ’ খাদ্যবান্ধব কার্ড। অথচ এক শেখহাটি গ্রামেই রয়েছে ৫শ কার্ড। এই তালিকা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এসব কারণে সরকারের নির্দেশনায় এই তালিকা রিফ্রেশ হচ্ছে। প্রকৃতদের তালিকায় আনার চেষ্ট চলছে। অথচ এখনও তালিকা চূড়ান্ত না হলেও পরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘১৫শ কার্ডের মধ্যে আমার পরিষদের মেম্বারদের ৭শ কার্ড দিয়েছি। বাকি কার্ডগুলোর মধ্যে থেকে আমি ৫০টি করে প্রত্যেক মেম্বারকে ভাগ করে দিয়েছি। এমনকি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যেহেতু এই ইউনিয়নের বাসিন্দা তাকেও ৫০ জনের নাম দিতে বলেছি। তারপরও আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র থামছে না।’
এ বিষয়ে ইউপি মেম্বার সাজেদুল হক রিপন বলেন, ‘চেয়ারম্যান যে অভিযোগ করছেন তা সঠিক নয়। আমার কাছে এলাকার লোক অভিযোগ করেছেন বলে তাদের বক্তব্য ভিডিও করে ফেসবুকে দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘শেখহাটি একটি বড় ওয়ার্ড। এখানে বিপুল সংখ্যক লোকের বসবাস। সেখানে যে কার্ড দেয়া হচ্ছে তা খুবই সামান্য। এসব কারণে মানুষ চেয়ারম্যানের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করছে।’ এর পেছনে আমার কোনো ষড়যন্ত্র নেই বলে তিনি দাবি করেন।