প্রশাসনের তৎপরতায় ফল নেই কেজিতেই বিক্রি তরমুজ

0

আকরামুজ্জামান ॥ রমজানে ইফতারের সময়ে এক ফালি তরমুজ প্রশান্তি নিয়ে আসবে যে কারোর মনে। রোজা উপলক্ষে তাই বাজারে বেড়েছে তরমুজের ব্যাপক চাহিদা। তবে এবছরও যশোরে তরমুজ নিয়ে যশোরে চলছে তেলেসমাতি। খুচরা ব্যবসায়ীরা আড়ৎ থেকে পাইকারি দরে পিস হিসেবে কিনে নিয়ে আসলেও তা কেজি হিসেবে চড়া দামে বিক্রি করছেন। এতে প্রতারিত হচ্ছে ভোক্তারা। খুচরা ব্যবসায়ীদের তরমুজ বিক্রির এ কারসাজির বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালালেও কোনো কাজের কাজ হচ্ছে না। দেদারসে সব স্থানে বিক্রি হচ্ছে কেজি দরে তরমুজ।
সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগ, প্রতিবছর গ্রীষ্ম মৌসুমে তরমুজের আমদানির সময় যশোরের একশ্রেণির খুচরা ব্যবসায়ীরা তরমুজ নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। বিশেষ করে রমজানকে পূঁজি করে কেজিতে উচ্চমূল্যে তরমুজ বিক্রি করে মুনাফা লুটে নেয়। পিস হিসেবে আড়ৎদাররা বিক্রি করলেও খুচরা ব্যবাসয়ীরা বিক্রি করছে কেজিতে। এর ফলে ঠকছেন সাধারণ ক্রেতারা।
যশোর দড়াটানা ব্রিজের পাশে তরমুজ বিক্রেতা ফারুক হোসেন বলেন, কাস্টমার যেভাবে চায় আমরা সেভাবেই বিক্রি করি। কেউ পিস হিসেবে কেনে, কেউ কেজি হিসেবে। তিনি বলেন, আমরা ক্রেতাদের কাছে পিস হিসেবে বিক্রি করতে চাইলেও তারা কেজিতে কিনতে চায়। আবার কোনো ক্রেতা পিস হিসেবে কিনতে চান। এজন্য আমরা সবাই একযোগে কেজিতে তরমুজ বিক্রি করছি। তিনি বলেন, পিস হিসেবে তরমুজ কিনে আনলেও কেজি দরে বিক্রি করতে গিয়ে দাম ঠিক একই রকম হয়। ফলে ক্রেতারা যে ঠকছেন এমন অভিযোগ ঠিক না।
পাশেই জলিল নামে আরেক তরমুজ বিক্রেতা বলেন, ‘আড়ত থেকে পিস প্রতি বিক্রির হিসাব করলেও মূলত তারাও কেজি হিসেবে বিক্রি করে। কেজিপ্রতি তারা দাম বেঁধে দেয় বলে আমরা কম দামে কিনতে পারি না। তার ওপর আছে আড়তের কমিশন, পরিবহন খরচ। সব মিলিয়ে দাম বেড়ে যায়। আর এখন প্রায় সবখানেই তরমুজ কেজি হিসেবেই বিক্রি হচ্ছে।
শনিবার বিকেলে যশোর শহরের পুরাতন বাসটার্মিনাল মণিহার এলাকায় ফলপট্টি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আড়ত থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা পিস হিসেবে তরমুজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আর কেজি হিসেবে সেই তরমুজ ১৫০ থেকে শুরু ২৫০ টাকা পর্যন্ত দামে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
মণিহার এলাকার ফলপট্টির জমজম ফল ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী কামাল হোসেন বলেন, আমরা এখান থেকে পিস হিসেবে তরমুজ বিক্রি করছি। খুচরা ব্যবসায়ীরা তা দোকানে নিয়ে কেজি দরে বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, গত দুই বছর থেকে যশোরের খুচরা বাজারগুলোতে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি হওয়ায় সেটি এবছরও বহাল রয়েছে।
পাশেই আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী হোসেন আলী খোকন বলেন, অন্যান্য বছরে যশোরাঞ্চলে তরমুজের আবাদ হলেও এবছর তেমন হয়নি। যেকারণে কুয়াকাটা, গলাচিপা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা থেকে তাদের তরমুজ কিনে আনতে হচ্ছে। এসব কারণে তরমুজের দাম বেশি হওয়ায় খুচরা বাজারের বিক্রেতারা সুযোগ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, যশোরের রূপদিয়া ও পুরাতন বাস টার্মিনালে তরমুজের সর্ববৃহৎ মোকাম। প্রতিদিন এ মোকাম থেকে হাজার হাজার পিস তরমুজ বিক্রি হয়। মৌসুমী ফল তরমুজের বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের নজরদারি জোরদার বলে তিনি জানান।
এদিকে গত কয়েকদিন যশোরের বিভিন্ন এলাকায় কেজি দরে তরমুজ বিক্রি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের উদ্যোগে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে। তবে এরপরও এখনও পর্যন্ত কোথাও কেজি দরে তরমুজ বিক্রি বন্ধ হয়নি। এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ যশোরের সহকারী পরিচালক ওয়ালিদ বিন হাবিব বলেন, রোজার শুরুর প্রথম দিনেই আমাদের পক্ষ থেকে যশোরের তরমুজ ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক হয়। তারা আমাদের কাছে প্রতিশ্রুতি দেয় কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করবেন। তারপরও তারা কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা মণিরামপুরে একজন ব্যবসায়ীকে কেজি দরে তরমুজ বিক্রির অভিযোগে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। প্রতিদিনই এভাবে অভিযান পরিচালিত হবে বলে তিনি জানান।