দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বেঁচে যাওয়া ইউক্রেনীয় রুশ হামলায় নিহত

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন বরিস রোমানচেঙ্কো। কিন্তু ইউক্রেন সংঘাত থেকে বাঁচতে পারেননি ৯৬ বছর বয়সী এই ইউক্রেনীয় নাগরিক। গত সপ্তাহে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইউক্রেনের খারকিভ শহরে গোলাগুলির সময় নিহত হন তিনি। খবর রয়টার্সের।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের ভয়ঙ্কর নাৎসি বাহিনীর বুচেনওয়াল্ড, ডোরা-মিটেলবাউ এবং বার্গেন-বেলসেন নামক তিনটি বন্দী শিবির থেকে বেঁচে ফিরেছিলেন রোমানচেঙ্কো।
এ নিয়ে সোমবার (২১ মার্চ) বুচেনওয়াল্ড মেমোরিয়াল একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, খুবই আতঙ্কের বিষয় যে, ইউক্রেন যুদ্ধে বরিস রোমানচেঙ্কো প্রাণ হারিয়েছেন। রুশ সেনাদের ছোঁড়া গোলার আঘাতে একটি বহুতল ভবনে আগুন ধরে যায়। ওই ভবনেই বসবাস করতেন তিনি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রোমানচেঙ্কোর ভয়ঙ্কর মৃত্যু আমাদের দেখিয়েছে যে বন্দী শিবির থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষদের জন্যও ইউক্রেন যুদ্ধ কত বড় হুমকি। আমরা একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু হারিয়ে গভীর শোকাহত।
এ বিষয়ে সোমবার রাতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, চিন্তা করুন তিনি (রোমানচেঙ্কো) কত ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বেঁচেছিলেন। কিন্তু তাকেও খারকিভের একটি সাধারণ বহুতল ভবনে গোলা নিক্ষেপে মারা হলো। এই যুদ্ধে যতই দিন যাচ্ছে, সবার কাছে রাশিয়ানদের নাৎসিমুক্তকরণের মানে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
রোমানচেঙ্কোর মৃত্যর ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে ইউক্রেনের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক টুইট বার্তায় বলেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলার যা করেননি, পুতিন এখন তাই করছেন।
বুচেনওয়াল্ড মেমোরিয়ালের তথ্য অনুসারে, রোমানচেঙ্কো ১৯২৬ সালের ২০ জানুয়ারি সুমি শহরের কাছে বোন্ডারিতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪২ সালে তিনি ডর্টমুন্ডে নির্বাসিত হয়েছিলেন এবং সেখানে তাকে জোরপূর্বক খনির শ্রমিক বানানো হয়েছিল।
সেখান থেকে পালানোর ব্যর্থ চেষ্টার পর, তাকে ১৯৪৩ সালে বুচেনওয়াল্ড বন্দী শিবিরে পাঠানো হয়। এই শিবিরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ৫৩ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল। এরপর তাকে বাল্টিক সাগরের ইউসডম দ্বীপের পিনেমুন্ডে পাঠানো হয়। সেখানে তাকে ডোরা-মিটেলবাউ ও বার্গেন-বেলসেন বন্দী শিবিরের ভি-২ রকেট প্রোগ্রামে শ্রমিকের কাজ করতে বাধ্য করা হয়।
বুচেনওয়াল্ড মেমোরিয়ালের মতে, রোমানচেঙ্কো অনেক দিন ধরে বুচেনওয়াল্ড-ডোরা আন্তর্জাতিক কমিটির সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিদের দ্বারা সংগঠিত বর্বর অপরাধের তালিকা তৈরির কাজ করছিলেন তিনি।