স্মরণে মার্চ’৭১

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ ১ মার্চ পাক সমারিক শাসক ইয়াহিয়া খান কর্র্র্তৃক জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতের কথা শোনার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন ৬ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল তেকে বেলা ২টা পর্যন্ত হরতাল চলবে। তখন থেকেই যশোরে মিছিল সমাবেশ শুরু হয়।
৩ মার্চ আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ে। এদিন ঈদগাহ ময়দানে সর্বদলীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিষদ জনসমাবেশের ডাক দেয়। স্বাধীনতাকামী বিপ্লবী জনতার পদভারে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে যশোর শহর। এই সমাবেশে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীণ বাংলার মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়। তবে যশোরে স্বাধীন বাংলার পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে উড়ানো হয় ২৩ মার্চ।
মুকিযোদ্ধা রুকুনউদ্দোল্লাহ বলেন, ৩ মার্চ সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মিছিল ঈদগাহের দিকে ছুটছিল। একটি মিছিল শহরের টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভবনের সামনে গিয়ে সেখানে অবস্থানকারী পাকিস্তানি সৈন্যদের সামনে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। পাহারারত সৈন্যরা জনতাকে ভয় দেখাচ্ছিল রাইফেল তাক করে। এসময় জনতার সধ্য থেকে কেউ কেউ ইট-পাটকেল ছুড়ে মারে সৈন্যদের দিকে। ভবনের শীর্ষে অবস্থানরত পাহারাদার সৈন্যরা এসময় হঠাৎ করে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষন করতে থাকে। গুলিতে চারুবালা কর নামে এক বৃদ্ধা নিহত হন। তিনি টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভবনের সামনে তার বাড়িতে দাঁড়িয়ে জনতার বিক্ষোভ দেখছিলেন। চারুবালার মৃত্যুর খবর দাবানলের মতো শহরে ছড়িয়ে পড়ে। তখন আবার হাজার হাজার মানুষ মিছিল বের করে। বুলেটবিদ্ধ চারুবাল করের মরদেহ বহন করা হয় মিছিলের অগ্রভাগে। মিছিলের নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক মন্ত্রী মশিয়ূর রহমান। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন রোডের সরকারি খাদ্যগুদামে পাহারারত পাকিস্তানী সৈন্যরা ফাঁকা গুলি ছোড়ে মিছিল দেখে। গুলির শব্দে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরক্ষণেই আবার জনতা সংঘবদ্ধ হয়ে পাকিস্তানী সৈন্যদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় এবং বিক্ষোভ প্রকাশ করতে করতে সার্কিট হাউসের দিকে এগোতে থাকে। সার্কিট হাউসকে তখন সেনাবাহিনী সামরিক আদালত হিসেবে ব্যবহার করতো। মিছিলটি সেখানে পৌঁছে আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। মিছিলকারীরা সেনাবাহিনীর দিকে ইট-পাটকেল ছোড়ে। একপর্যায়ে সার্কিট হাউসে ঢোকার চেষ্টা করলে সেনাবাহিনীর কর্নেল তোফায়েল মিছিলে গুলি চালানোর নির্দেশ দিলে মশিয়ূর রহমান ছুটে গিয়ে সামনে দাঁড়ান। তিনি সেনাবাহিনীকে গুলি চালানো থেকে বিবৃত্ত করে জনতাকে ঈদগাহের দিকে নিয়ে যান।
এদিন জেলা প্রশাসকের দফতর কালেক্টরেট ভবনে বিক্ষুব্ধ জনতা পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা সেখানে উত্তোলন করে। পরে জজ কোর্ট ভবনেও পতাকা তোলা হয়।