চৌগাছায় নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য খুন, আটক ৬

0

স্টাফ রিপোর্টার ও সংবাদদাতা, চৌগাছা (যশোর)॥ যশোরের চৌগাছার পাতিবিলায় হামলা ও সংঘর্ষে খুন হয়েছেন নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য ঠা-ু বিশ্বাস। এ ঘটনায় পুলিশ সাবেক ইউপি সদস্য রুহুল আমিন ও তার ছেলে টিটোসহ ৬ জনকে আটক করেছে। নিহতের ছেলে একটি হত্যা মামলা করেছেন চৌগাছা থানায়। ঠা-ু বিশ্বাস পাতিবিলা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনের জয়ী হয়েছিলেন। সোমবার সন্ধ্যায় পাতিবিলা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন।


এলাকাবাসী জানান, গত সোমবার সন্ধ্যায় প্রতিদিনের মত বাজারে চা পান করতে যান ইউপি সদস্য ঠান্ডু বিশ্বাস। এ সময় তার সাথে আরো ১০/১২ জন উপস্থিত ছিলেন। আকস্মিকভাবে সাবেক মেম্বার রুহুল আমিন ও তার ছেলে টিটো, শরিফ হোসেন, ফারুক হোসেন, সেলিম, কামাল হোসেনসহ ৩০/৪০ জন বাঁশের লাঠি, বেলচা ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ঠান্ডু বিশ্বাস মারাত্মক আহত হন। এসময় ঠা-ু বিশ্বাসের সাথে থাকা মানুষদের সাথে হামলাকারীদের সংঘর্ষ বেধে যায়। এসময় আহত হন পাতিবিলা গ্রামের টিটো হোসেন (৩২), সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক (৫০), আব্দুল হামিদ (৪৫), মকবুল হোসেন (৩৫), অসিম কুমার ঘোষ (৩৫), মমিনুর রহমান মমিন (৪৫) সহ৭/৮ জন।
স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। আহতদের মধ্যে ঠান্ডু বিশ্বাসের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করেন চিকিৎসকরা। রাত ৯টার দিকে ঠা-ু বিশ্বাসকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে আনা হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসক আব্দুর রশিদ জানান, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়। গতকাল হাসপাতাল মর্গে নিহত ইউপি সদস্যের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। আহতদের মধ্যে মোমিনুর ও আব্দুল হামিদ যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল এবং অসিম কুমার ঘোষ ও মকবুল হোসেনকে চৌগাছা হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে। এছাড়া সিদ্দিককে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে টিংকু বিশ্বাস বাদী হয়ে ২১ জনকে আসামি করে চৌগাছা থানায় মামলা করেছেন।
চৌগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম বলেন, এলাকার পরিস্থিতি এখন শান্ত আছে। ঘটনার সাথে জড়িত ও হত্যা মামলার আসামি ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। তারা হচ্ছেন যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাবেক ইউপি সদস্য রুহুল আমিন ও তার ছেলে টিটো হোসেন এবং কবির হোসেন, রওশন আলী, তোতা মিয়া ও শরীফ হোসেন। ওসি জানান, পিতা-পুত্র হাসপাতালে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন ও বাকি চার জনকে আদালতে পাঠানো হলে আদালত কারাগারে পাঠানো নির্দেশ দেন। এলাকাবাসী জানান, গত ১১ নভেম্বর ইউপি নির্বাচনে পাতিবিলা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড থেকে সাবেক মেম্বার রুহুল আমিন ও ঠান্ডু বিশ্বাস অংশ গ্রহণ করেন। নির্বাচনে ঠান্ডু বিশ্বাস জয়লাভ করেন। পরাজিত হবার কারণে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
অন্য একটি চায়ের দোকানে চা করছিলেন একজন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ইউনিয়নের ভোটকে কেন্দ্র করে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। হঠাৎ কিছু লোক গিয়ে মারধর শুরু করে। কে কাকে মারছে তা বুঝতে সময় লাগে। এরপর তিনি নিজেও ভয় পেয়ে যান। তিনি বলেন, এলাকায় কয়েকদিন ধরে কানাঘুষা চলছিল যে নবনির্বচিত মেম্বারকে মারধর করা হবে। ঘটনার সময় প্রতিপক্ষরা সঙ্ঘবদ্ধভাবে এসে হামলা করে। নিহতের স্ত্রী লিপি খাতুনসহ স্থানীয়রা বলেন, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে তার স্বামীকে প্রতিহত করতে না পেরে গ্রামের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি স্বামী হত্যার বিচার চান। স্থানীয়রা জানান, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া ছাড়াও সরকারি মর্জাদ বাওড়ের মাছ ধরা, বালু ও মাটি ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং দোকান ভাড়া দেয়া, এলাকার আধিপত্য বিস্তার করা নিয়ে এই দ্বন্দ্ব শুরু হয় এবং তা হত্যা পর্যন্ত গড়ালো।