বাংলা ফন্ট বানায় ফন্টবিডি

    0

    লোকসমাজ ডেস্ক॥ ফন্টবিডির যাত্রা শুরু হয়েছে ২০২০ সালের নভেম্বরে। এর শুরুটা হয় প্রধান নির্বাহী ও সহপ্রতিষ্ঠাতা শরীফ উদ্দিন শিশির এবং সহপ্রতিষ্ঠাতা ও অ্যাডভাইজার জায়েদ আহসানের হাত ধরে। পরে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে ফন্টবিডি পরিবার। বর্তমানে মূল দলের পাশাপাশি ডিজাইন টিমেই আছেন ৩২ জন ডিজাইনার।
    মাত্র এক বছর তিন মাসের মধ্যেই তাঁরা বাজারে এনেছেন ১১৩টি ফন্ট, যা ডাউনলোড হয়েছে ৯ লাখ ৮৮ হাজার বারের বেশি। ফন্টবিডি টিমের ভাষ্য, তাদের কাজ শুরুই হচ্ছে মাত্র। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে তারা দেশীয় ফন্ট বাজারের শীর্ষে পৌঁছাতে চায়।
    ফন্ট দুই ধরনের হয়ে থাকে—ইউনিকোড আর অ্যানসি। এর মধ্যে অ্যানসি ফন্টের প্রযুক্তি সবচেয়ে পুরনো, বেশির ভাগ আধুনিক ডিভাইসেই সেটি ইনস্টল করা থাকে না। বাংলা ভাষা ইউনিকোডের অংশ হিসেবে যুক্ত হওয়ার পর থেকে বিশ্বের প্রতিটি স্মার্ট ডিভাইসেই বাংলা ফন্ট ছড়িয়ে পড়ে। অ্যানসি ফন্টের প্রয়োজনীয়তা যে শেষ হয়ে গেছে তা কিন্তু নয়; এখনো গ্রাফিক ডিজাইনিং ও প্রিন্ট মিডিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ অ্যানসি ফন্ট।
    ইউনিকোডের প্রচলন বেশি হওয়ায় সবচেয়ে বেশি বাংলা লিপিও ইউনিকোড ঘরানার। অ্যানসি ফন্টের চেয়ে ইউনিকোড ফন্টের পরিমাণ অন্তত চার গুণ বেশি। প্রতিটি মিডিয়া হাউসের রয়েছে নিজস্ব ডিজাইনের অ্যানসি ফন্ট। তাই অ্যানসি ফন্টের সংখ্যা কম হলেও সেগুলোই গুরুত্বপূর্ণ বেশি।
    দুই ধরনের ফন্ট নিয়েই কাজ করছে ফন্টবিডি। তাদের অ্যানসি ফন্টগুলো আনন্দ কম্পিউটারের তৈরি বিজয় এনকোডিংয়ের সঙ্গে সংগতি রেখে তৈরি। তাই নতুন কোনো সফটওয়্যার শেখার প্রয়োজন নেই এই ফন্ট ব্যবহারে। ইউনিকোড ফন্টের এরূপ সমস্যা নেই, সব ধরনের ডিভাইসেই সুন্দরভাবে ব্যবহার করা যায়।
    প্রতিষ্ঠাতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, “আমাদের ভাষাটা অন্যান্য ভাষার মতো সহজে প্রাপ্য নয়। এই ভাষার জন্য দিতে হয়েছিল বুকের তাজা রক্ত, সেই বায়ান্নর প্রতি সম্মান রেখেই ফন্টবিডি যাত্রা করছে। একই সঙ্গে ‘বাংলা ফন্ট দুর্ভিক্ষ’ ঘোচাতেই ফন্টবিডির যাত্রা শুরু। কিছুদিন আগেও পছন্দসই ফন্ট না পেয়ে অনেকে হাতে লিখে, স্ক্যান করে কাজ চালাতেন। সেই কষ্ট অনেকটাই লাঘব করার প্রচেষ্টায়ই ফন্টবিডি কাজ করে যাচ্ছে নিত্যনতুন প্রজেক্ট নিয়ে। বাংলা ফন্টের দৈন্যদশা দূর করতে সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। আর আমাদের চাওয়া একটাই—পৃথিবীর সব ভাষার সঙ্গে বাংলা ভাষা এগিয়ে যাবে সমান তালে।
    আমরা মূলত বাংলা বর্ণমালাকে কম্পিউটার বা ডিজিটাল মাধ্যমে ব্যবহার করার উপযোগী করে তুলি এবং আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সেটা সবার কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। যার সঙ্গে থাকছে আমাদের গবেষণা, নতুন নতুন ফিচার যোগকরণ, মসৃণ যুক্তাক্ষর তৈরি, আধুনিক যুক্তাক্ষর নিয়ে গবেষণা এবং সর্বোপরি বর্ণকে সজ্জিতকরণের জন্য সব ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ। ”
    ফ্রি এবং প্রিমিয়াম দুটিই থাকছে
    ফন্টবিডির বেশির ভাগ ফন্টই বিনা মূল্যে পাওয়া যাবে। ফন্ট বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য লাগবে ব্যাবহারিক লাইসেন্স। সহজেই দেশীয় পেমেন্টসেবা ব্যবহার করে কেনা যাবে ফন্টগুলো। প্রতিটি ফন্টের দাম হাতের নাগালেই—১০০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। মূল্য পরিশোধের পর ফন্টগুলো ডাউনলোড করা যাবে, ব্যবহারে থাকবে না কোনো বাধা।
    আছে লিপিঘরও
    বাংলা ফন্ট নিয়ে ফন্টবিডি প্রথম কাজ করছে তা কিন্তু নয়। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের ফন্ট নির্মাতারা মিলে তৈরি করা ‘লিপিঘর’ও বাজারে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে এখনো তারাই রয়েছে সব থেকে এগিয়ে। কিন্তু ফন্টবিডি মাত্র এক বছরেই তাদের প্রায় ধরে ফেলেছে, তাও শুধু দেশীয় ডিজাইনারদের কাজ দিয়েই। বাকি যারা এই বাজারে রয়েছে তাদের নেই এ পরিমাণ ফন্টের সংগ্রহ। অতএব ভবিষ্যতে ফন্টবিডিই হতে যাচ্ছে বাংলা লিপির মূল আঁতুড়ঘর ও বাজার, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তাদের সামনে বলা যায় মূল চ্যালেঞ্জ একটিই—সেটি হচ্ছে পাইরেসি।