সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচন নিয়ে সরব আদালত পাড়া

0

মুহাম্মদ ফজলুল হক॥ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের ২০২২-২৩ সেশনের নির্বাচন আগামী ১৫ ও ১৬ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনের প্রার্থিতা সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে শুরু হয়েছে নানা আলাপ-আলোচনা। আইনজীবীদের মনে প্রশ্ন, এবারের নির্বাচনে কে হচ্ছেন কোন ব্যানারের প্রার্থী। এছাড়া জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচনে এবার পাইলট প্রকল্প হিসেবে সাতটি পদে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। বারের বর্তমান সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল জাগো নিউকে বলেন, এবারই প্রথম ডিজিটাল পদ্ধতিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ভোটগ্রহণ করা হবে। কার্যনির্বাহী কমিটির ১৪ জনের মধ্যে সাতজন হলেন সদস্য পদ। ওই সাত সদস্যের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ ডিজিটাল পদ্ধতি হবে বলে জানান তিনি। এটি সুপ্রিম কোর্ট বার এবারই প্রথম পাইলট প্রকল্প হিসেবে নিয়েছে। এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের (সাদা প্যানেল) মনোনয়ন কারা পাচ্ছেন এবং বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের (নীল প্যানেল) প্রার্থী কারা হচ্ছেন, তা নিয়ে গুঞ্জন চলছে। যদিও উভয় দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে জাগো নিউজের পক্ষ থেকে কথা বলে জানা গেছে, দেশের সর্বোচ্চ আদালত অঙ্গন সুপ্রিম কোর্টের ১০ হাজার আইনজীবীর নেতৃত্ব দেওয়ার মতো এবং দলের মনোনয়ন নিয়ে বিজয়ী হয়ে আসার মতো প্রার্থী হিসেবে কাকে মনোনীত করা হবে সেটি নিয়ে বৈঠক হয়নি। ফরম বিতরণের পর উভয় দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচনে কাকে কোন দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।
সরকারি দল সমর্থিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, তাদের মনোনয়ন ফরম বিক্রি এখনো শুরু হয়নি। দু-একদিনের মধ্যেই আওয়ামী লীগ সমর্থক জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে নির্বাচনের জন্য সাদা প্যানেলের প্রার্থী নির্ধারণে করণীয় ঠিক করা হবে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছে ওই সূত্র। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের কয়েকজন শীর্ষ নেতা ও আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাদা প্যানেলের প্রার্থী হতে এখন আওয়ামী লীগের কার্যালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ চলছে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের। তবে বরাবরের মতোই স্বচ্ছ ভাবমূর্তির যোগ্যদেরই শেষ পর্যন্ত প্রার্থিতা দেওয়া হবে বলে জানাচ্ছে নেতৃত্ব পর্যায়। দলীয় একটি সূত্র জানায়, এই নির্বাচনকে ঘিরে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শকে। প্রধানমন্ত্রী যাদের সমর্থন দেবেন তারাই হবেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের চূড়ান্ত প্রার্থী। আগামী ১৫ এবং ১৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ, সে হিসেবে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে কি-না জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখনো আমরা আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনায় বসিনি। তবে, যেহেতু সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং বারের নির্বাচন একটি বিরাট বিষয়; সেখানে আওয়ামী লীগের মতো বড় দলের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়াতেই হবে। প্রথমে দলের পক্ষ থেকে ফরম ছাড়া হবে। সেখান থেকে যাচাই-বাচাই করে তারপর ঠিক করা হবে কাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।
জানা গেছে, এই পরিষদ থেকে সভাপতি পদে প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম ফয়েজ, সাবেক সম্পাদক ড. বশির আহমেদ, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ এম হাসান আরিফ ও সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ড. মোহাম্মদ মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী। এছাড়া আইনজীবীদের দাবির মুখে ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনের জন্য বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিনের নাম আসতে পারে বলেও শোনা যাচ্ছে। আর সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক, অ্যাডভোকেট আবদুর নূর দুলাল, অ্যাডভোকেট গোলাম মো. আব্বাস চৌধুরী দুলাল, ব্যারিস্টার মোকছেদুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মো. মোতাহার হোসেন সাজু ও ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হোসেনের নাম শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এবারের নির্বাচনে এখনো বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়নি। আশা করি, খুব শিগগির আলোচনার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত হতে পারে। তার পরেই সবাই জানবেন। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের ‘নীল’ প্যানেলের প্রার্থীও এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক আইনজীবীদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা-গুঞ্জন। আইনজীবীদের দাবি- যোগ্য, জনপ্রিয়, দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা ও খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে যারা মাঠে সক্রিয় তাদের প্রার্থী করা হোক।
জানা গেছে, গত রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) থেকে বিএনপি-জামায়াতপন্থী প্যানেলের প্রার্থীদের জন্য ফরম বিক্রি শুরু হয়েছে। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ফরম বিক্রি চলবে। এরপর দলের শীর্ষ নেতা ও আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে। প্রার্থী চূড়ান্ত করতে এরইমধ্যে দলটির গুলশান অফিসে আলোচনা শুরু হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে। সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে কি-না এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, এখনও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। আমরা বসে আলাপ-আলোচনা করে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেবো। তবে, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের (নীল প্যানেল) প্রার্থী হিসেবে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে লড়তে সভাপতি পদে যাদের নামের গুঞ্জন রয়েছে তারা হলেন- জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন ও বিচারপতি আব্দুস সালাম মামুন। আর সম্পাদক হিসেবে যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন- (বর্তমান সম্পাদক) ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী (টাঙ্গাইল), ব্যারিস্টার ইমাম হোসেন সিডনি, ব্যারিস্টার মনিরুজ্জামান আসাদ, মোরসেদ আল মামুন লিটন ও অ্যাডভোকেট নাসরিন আক্তার। এ বিষয়ে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গাজী মো. কামরুল ইসলাম সজল বলেন, গত রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) থেকে ফরম বিক্রি শুরু হয়েছে। চলবে বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত। এরপরে দলীয়ভাবে শীর্ষ নেতাদের যাচাই-বাছাই পরে প্রার্থী নির্ধারণ করা হবে। আগামী ১৫ ও ১৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের ২০২২-২৩ সেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে গত ১ ফেব্রুয়ারি সমিতির সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত হয়। কমিটির কার্যনির্বাহী মোট ১৪টি পদে এ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করবেন সমিতির সাবেক সম্পাদক ও সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ ওয়াই মসিউজামান। সমিতির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান সমিতির বর্তমান সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। এতে বলা হয় হয়, আগামী ১৫ ও ১৬ মার্চ ভোটগ্রহণ উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনারের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে। সর্বশেষ ২০২১ সালের ১২ ও ১৩ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেল থেকে সভাপতিসহ আটটি পদে জয়ী হন। আর বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে সম্পাদকসহ ছয়টি পদে জয়ী হন। তবে দায়িত্বগ্রহণের আগেই সমিতির সভাপতি আবদুল মতিন খসরু করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর সমিতির সভাপতি হিসেবে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের নাম ঘোষণা করে কার্যনির্বাহী কমিটির আওয়ামীপন্থী অংশ। এ নিয়ে বিএনপি-জামায়াতপন্থীদের বিরোধ থাকলেও তারপর থেকে তিনিই দায়িত্ব পালন করে আসছেন।