পাইকগাছায় বিলুপ্ত হয়েছে খোঁয়াড়

0

এইচএম শফিউল ইসলাম,কপিলমুনি (খুলনা)॥ জমির ফসল বিনষ্টকারী গবাদিপশু আটকে রাখার গারদ খোঁয়াড় এখন বিলুপ্তি হয়েছে । পাইকগাছা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জয়নুল আবেদীন পিন্টু বলেন, আগে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে খোঁয়াড় প্রকাশ্য নিলামে বিক্রি করা হতো। এখন গ্রামঞ্চলে খোঁয়াড় প্রথা উঠেই গেছে। বর্তমানে পাইকগাছা উপজেলাতে কতগুলো খোঁয়াড় আছে এবং কী পরিমাণ রাজস্ব আসে সে হিসাব পাইকগাছা উপজেলা পরিষদে নেই বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম। এক সময় খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনিসহ দক্ষিণ অঞ্চলের প্রতিটা ইউনিয়নে গবাদিপশুর গারদ বা খোঁয়াড় ছিল। প্রতিটা ইউনিয়ন পরিষদে প্রতি বছর হাঁকডাকের মধ্যে দিয়ে এই খোঁয়াড় বিক্রি হতো। কিন্তু সেই গবাদিপশুর খোঁয়াড় কপিলমুনিসহ পাইকগাছা উপজেলাতে এখন আর চোখেই পড়ে না।
গ্রামীণ প্রতিষ্ঠান খোঁয়াড় ফার্সি শব্দ। আজ থেকে ১৫/২০ বছর আগে কপিলমুনিসহ পাইকগাছা অঞ্চলের প্রতিটা ইউনিয়নে চোখে পড়তো। পাইকগাছা উপজেলা পরিষদের পক্ষে অনুমতি সাপেক্ষে এ খোঁয়াড় ইউনিয়ন পরিষদ ৪/৬ হাজার টাকা প্রতি এক বছরের জন্য নিলামে বিক্রি করতো। এর উদ্দেশ্য ছিল গবাদিপশুর কবল থেকে ক্ষেত খামারের ফসল ও বসতবাড়ির বাগান রক্ষা করা। গবাদিপশুতে ফসলহানিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি সংশ্লিষ্ঠ গবাদিপশু গারদ বা খোঁয়াড়ে দিতেন। এ ক্ষেত্রে যতদিন গবাদিপশুর মালিক ফসলের ক্ষতিপূরণ না দিতেন ততদিন ওই গবাদিপশু গারদ বা খোঁয়াড়ে আটক রাখা হত। আবার খোঁয়াড়ের মালিক খোঁয়াড়ে আটক গবাদিপশু মালিককে খবর দিতেন তাদের পশু ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য। সে ক্ষেত্রে গ্রামের মাতব্বর শ্রেণির প্রবীণ ব্যক্তিদের দ্বারা ধার্যকৃত জরিমানা প্রদান করে মালিক তার গবাদিপশু ছাড়াতে পারতেন। গবাদিপশু কর্তৃক শস্যক্ষেত্র এবং বসত বাড়ির বাগান বিনাশ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে খোঁয়াড় পদ্ধতি ছিল একটি মোক্ষম প্রতিরোধ ব্যবস্থা। তবে পাইকগাছা অঞ্চলে কৃষি ও উৎপাদন ব্যবস্থা ব্যাপক পরিবর্তন এবং গোচারণ ভূমি কমে যাওয়ার কারণে বর্তমান এই ব্যবস্থা অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। নামমাত্র দু একটি খোঁয়াড় আছে তাও চলে না বলে জানান কপিলমুনি খোঁয়াড় ব্যবসায়ী শেখ মেজবুর রহমান লিয়াকত শেখ। তবে এ সব ফসল বিনষ্টকারী পশু এখন খোঁয়াড়ে নয় বাড়ির উঠানে বেঁধে রাখা হয় বলে জানান পুরাতন খোঁয়াড় মালিক রাড়–লীর আব্দুল মজিদ। পাইকগাছার হরিঢালী ইউনিয়ানের রাজু আহম্মেদ বলেন এক বছরের জন্য ১৫ শ টাকা দিয়ে খোঁয়াড় কিনে লোকসান হয়েছে। তিনি আরও জানান গরু প্রতি যে খোঁয়াড়ে আনবে তাকে প্রতি গরু ৫০ টাকা, ছাগল ভেড়া ২০ টাকা, হাঁস ১০ টাকা কমিশন দিতে হয়। গরু ছাগল হাঁসের মালিকরা গালিগালাজ করতেন বলে খোঁয়াড় কেনাবেঁচা ছেড়ে দিয়েছি বলে জানান কপিলমুনির হোসেন আলী। পাইকগাছার হরিঢালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মুজাহিদ হাজরা বলেন, বেশি টাকা দিয়ে পশু ছাড়ানোর ব্যপারে গবাদিপশু খোঁয়াড়ে দেওয়া নেওয়া নিয়ে দীর্ঘদিন গন্ডগোল লেগেই থাকতো। যে কারণে আমার ওয়ার্ডে খোঁয়াড় বিক্রি বন্ধ রয়েছে। কপিলমুনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কওসার আলী জোয়াদ্দার বলেন এখন খোঁয়াড় আর কেউ কিনতে চায় না।