গরুর মাংসের কেজি ৬৫০ টাকা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ হঠাৎ করেই রাজধানীর বাজারগুলোতে গরুর মাংসের দাম বেড়ে গেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে এখন কোথাও কোথাও গরুর মাংসের কেজি ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংসের এই দামকে অস্বাভাবিক বলছেন খোদ মাংস ব্যবসায়ীরা।তারা বলছেন, বর্তমানে ব্রয়লার মুরগি ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে গরুর মাংসের কেজি ৬০০ টাকার ওপর হওয়া কিছুতেই স্বাভাবিক ঘটনা নয়। গরুর হাটে অস্বাভাবিক চাঁদাবাজি এবং সংশ্লিষ্টদের নজরদারির অভাবে মাংস এমন অস্বাভাবিক দামে বিক্রি হচ্ছে।
মাংস ব্যবসায়ীরা বলছেন, অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণে গরুর মাংস বিক্রি অনেক কমে গেছে। বিক্রি কম হওয়ায় অনেকে ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। গরুর মাংসের অস্বাভাবিক দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে হাটে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে চর অঞ্চলে প্রাকৃতিভাবে গরু লালপালনের ব্যবস্থা করতে হবে। এটা করা গেলে ঢাকায় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস বিক্রি করা সম্ভব।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা গরুর মাংসের কেজি বিক্রি করছেন ৬২০ থেকে ৬৫০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে গরুর মাংস ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছেন
খোলাবাজারের পাশাপাশি গরুর মাংসের দাম বেড়েছে সুপার শপেও। স্বপ্ন সুপার শপে গরুর মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৩০ টাকায়। সাধারণত এই সুপার শপটি সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার বিশেষ ছাড় দিয়ে গরুর মাংস বিক্রি করে। কিন্তু সবশেষ শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) এবং আজ (৫ ফেব্রুয়ারি) এ ছাড় রাখেনি প্রতিষ্ঠানটি।
এ বিষয়ে স্বপ্নের খিলগাঁও আউটলেটের মোস্তাফিজুর রহমান নামের এক কর্মকর্তা বলেন, আজ (শনিবার) আমরা গরুর মাংসের কেজি ৬৩০ টাকা বিক্রি করছি। গরুর দাম বাড়তি, এ কারণে মাংসের দাম বেশি।
এর আগে তো আপনারা ৫৮০-৬০০ টাকা কেজি বিক্রি করেছেন। এখন এতো দাম কেন? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে আমরা গরুর মাংস ৬৩০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। হয়তো বিশেষ ছাড়ে আপনি ৬০০ টাকা কেজি কিনতে পারেন। কিন্তু এ সপ্তাহে আমাদের ছাড় নেই। আমাদের সব আউটলেটে একই দাম।
এদিকে রামপুরা বাজারে ৬৫০ টাকা কেজি গরুর মাংস বিক্রি করা আলম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, এখন গরু আনতে অনেক বেশি খরচ পড়ছে। এতো টাকা দিয়ে গরু আনার পর মাংস ৬৫০ টাকা কেজি বিক্রি করলেও তেমন লাভ হচ্ছে না। কোনো রকমে আসল উঠে আসছে। গরুর মাংসের দাম বাড়ার কারণে আমরাও বিপদে আছি। বিক্রি আগের থেকে অনেক কমে গেছে।
অবশ্য এই বাজারটিতেই গরুর মাংস ৬২০ টাকা কেজিতেও বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আলম বলেন, ৬২০ টাকা কেজির গরুর মাংস আর এই মাংসের মধ্যে পার্থক্য আছে। এটা দেশি ষাঁড়। দেশি ষাঁড় কেউ ৬৫০ টাকার নিচে বিক্রি করতে পারবে না।
মালিবাগে ৬২০ টাকা কেজি গরুর মাংস বিক্রি করা আলামিন বলেন, গত সপ্তাহে আমরা গরুর মাংসের কেজি ৫৮০-৬০০ টাকা বিক্রি করেছি। কিন্তু কয়েকদিন ধরে গরু বেশি দামে আনতে হচ্ছে। এ কারণে মাংসের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছি।
বাড্ডায়ও কোনো কোনো ব্যবসায়ীকে গরুর মাংসের কেজি ৬৫০ টাকা বিক্রি করতে দেখা গেছে। অবশ্য এ অঞ্চলেও ৬২০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস পাওয়া যাচ্ছে। তবে ৬২০ টাকার নিচে কোথাও গরুর মাংসে বিক্রি হতে দেখা যায়নি।
বাড্ডা থেকে গরুর মাংস কেনা জামিউল হাসান নামের এক ব্যক্তি বলেন, শুক্রবার বাজারে এসে দেখি গরুর মাংসের কেজি ৬৫০ টাকা। শুক্রবারের কারণে দাম বেশি এমনটা ভেবে মাংস না কিনে ফিরে গিয়েছিলাম। কিন্তু আজও বাজারে এসে দেখি ভালো গরুর মাংসের কেজি ৬৫০ টাকা। পানিতে চোবানো গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬২০ টাকা কেজি।
তিনি বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম বাড়তি। চাল, তেল, চিনি সবকিছুর অস্বাভাবিক দাম। এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে- বেতনের বেশিরভাগ টাকায় বাজার করতে চলে যায়। মাস শেষে হাতে কোনো টাকা জমা থাকে না। আমাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষেরা এখন অনেক কষ্ট করে চলছে।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, মাংসের ব্যবসা এখন মাফিয়া ডনদের কাছে চলে গেছে। যাদের বাজার তদরকি করার কথা তারা তাদরকি করছেন না। গরুর হাটে অস্বাভাবিক চাঁদাবাজি হচ্ছে। গরুর মাংসের কেজি কিছুতেই ৬৫০ টাকা হওয়া স্বাভাবিক নয়। গরুর মাংস নিয়ে চরম নৈরাজ্য চলছে। প্রকৃত ব্যবসায়ীরা টিকতে না পেরে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, হাটে চাঁদাবাজি বন্ধ করা গেলে এবং দেশের চর অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে গরু পালন করা গেলে ঢাকায়ই মাংসের কেজি ৩০০ টাকা বিক্রি করা সম্ভব। একই সঙ্গে ভারত থেকে গরুর মাংস (ফ্রোজেন) আমদানি বন্ধ করতে হবে। তাহলেই এখন গরুর মাংস নিয়ে যে নৈরাজ্য চলছে তা বন্ধ করা যাবে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকার মাংস ব্যবসায়ীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। কিন্তু এই প্রশিক্ষণে কোনো মাংস ব্যবসায়ীকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। রাস্তা থেকে রিকশাচালক, দিনমজুরদের নিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
রবিউল আলম আরও বলেন, মুরগির মাংসের কেজি এখন ২০০ টাকার কম। তাহলে ৬০০-৬৫০ টাকা দিয়ে কেন গরুর মাংস কিনে খেতে হবে! এজন্য বিক্রিও কমে গেছে। ফলে এতো টাকায় মাংস বিক্রি করেও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।