৪ কোম্পানির ব্যবসার কৌশল-পরিকল্পনা চায় বিএসইসি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৪ কোম্পানির ব্যবসার কৌশল ও কর্ম পরিকল্পনা জানতে চেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
জানা যায়, কোম্পানিগুলোর ব্যবসা ও উৎপাদন বন্ধ, আর্থিক অবস্থার ধারাবাহিক অবনতি ও বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ প্রদান না করার কারণে এসব তথ্য জানতে চেয়েছে কমিশন।
কোম্পানিগুলো হলো- জুট স্পিনার্স, আজিজ পাইপস, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস এবং রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস (আরএসআরএম)। সম্প্রতি কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের শেষের দিকে কোম্পানিগুলো তাদের সার্বিক অবস্থা নিয়ে কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে। এসময় কোম্পানিগুলো তাদের আর্থিক অবস্থার ধারাবাহিক অবনতির কারণ ব্যাখ্যা করে।
কোম্পানিগুলোর ব্যাখ্যা এবং সার্বিক দিক বিবেচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের জন্য পৃথক কিছু নির্দেশনা দেয় কমিশন। সেই নির্দেশনায় উল্লেখিত কোম্পানিগুলোকে তাদের ব্যবসার কৌশল ও কর্ম পরিকল্পনা জানতে চাওয়া হয়।
তথ্য মতে, জুট স্পিনার্সকে একটি কৌশলগত কর্ম পরিকল্পনা জমা দিতে বলা হয়েছে। সেখানে কোম্পানিটি কিভাবে চলতি বছরের মধ্যে পুনরায় উৎপাদন শুরু করবে সে বিষয়ে উল্লেখ করতে বলা হয়েছে।
কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জুট স্পিনার্স ১৯৮৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এরপর থেকে কোম্পানিটি এখন পর্যন্ত কোনো লভ্যাংশ প্রদান করেনি।
সর্বশেষ ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরেও কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ প্রদান করেনি। সেই সঙ্গে গত চার বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কোম্পানিটি বড় লোকসানে রয়েছে।
এদিকে আজিজ পাইপসকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সিআইবি রিপোর্ট, কোম্পানির সুনির্দিষ্ট ও দৃশ্যমান অগ্রগতি এবং কাজের পরিকল্পনার বিষয়ে কমিশনের কাছে ব্যাখ্যা জমা দিতে বলা হয়েছে।
কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বর্তমানে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। কোম্পানিটি ১৯৮৬ সালে তালিকাভুক্ত হলেও ব্যবসার কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নতি করতে পারেনি। সেই সাথে মাত্র দুটি হিসাব বছরে নগদে লভ্যাংশ দিয়েছে। এর মধ্যে ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশও রয়েছে।
সর্বশেষ ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরেও কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ প্রদান করেনি। বর্তমানে কোম্পানিটি লোকসানে রয়েছে।
আর সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসকে এক মাসের মধ্যে কমিশনের কাছে ৫ বছরের কৌশলগত ব্যবসায়িক পরিকল্পনা জমা দিতে বলা হয়েছে। সেই পরিকল্পনায় কিভাবে এক বছরের মধ্যে কোম্পানিটির খরচ এবং মুনাফা সমান হবে সে বিষয়ে উল্লেখ করতে বলা হয়েছে।
কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কোম্পানিটি ২০১৩ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে কোম্পানির ব্যবসা ও মুনাফা কমতে থাকে। সর্বশেষ হিসাব বছরে কোম্পানিটি লোকসানে রয়েছে। তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত কোম্পানিটি মাত্র একবার ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। সর্বশেষ ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরেও কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ প্রদান করেনি।
এছাড়া রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলসকে দুই মাসের মধ্যে বিএমআরই প্রকল্প পুনরায় চালু করাসহ একটি বড় কর্ম পরিকল্পনার প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিতে বলা হয়েছে।
কোম্পানিটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কোম্পানিটি ২০১৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। গত চার বছরে কোম্পানিটির ব্যবসা ও মুনাফা ধারাবাহিকভাবে সাড়ে সাতগুণের বেশি কমেছে। সর্বশেষ ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরেও কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ প্রদান করেনি।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসি’র একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি। এসব কোম্পানির এক একটির অবস্থা একেক রকম। এর মধ্যে কোনো কোম্পানির ব্যবসা ও উৎপাদন বন্ধ রয়েছে, আবার কোনটির আর্থিক অবস্থার ধারাবাহিক অবনতি ঘটছে। আর কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ প্রদান করেনি। তাই এসব বিষয়ে কোম্পানিগুলোর কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। তাদের ব্যাখ্যা শুনে এবং সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে কোম্পানিগুলোকে কিছু নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসের কোম্পানি সচিব বলেন, ‘আমরা এখনও ব্যবসায়িক কর্ম পরিকল্পনা বিএসইসিতে জমা দেইনি। আশা করছি শিগগিরই জমা দেব।’
রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলসের কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন বলেন, ‘বিএসইসি’র নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবসায়িক কর্ম পরিকল্পনা তৈরির কাজ চলছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কর্ম পরিকল্পনা জমা দেব।’