চৌগাছায় ভৈরব পাড়ের মাটি চুরি থামছে না

0

এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর)॥ যশোরের চৌগাছায় ভৈরব নদের পাড়ের মাটি অবৈধ ভাবে স্কেভেটর দিয়ে কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছেন প্রভাবশালী একটি মহল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিক বার নিষেধ করা হলেও মাটিচুরি থামছেই না। মাটি চোর চক্রটির সদস্যরা গভীর রাতে মাটি চুরি করে ট্রাক-ট্রলি ভরে নিয়ে যাচ্ছে ভাটায়। এলাকাবাসী বলছেন চক্রটির মূলহোতা পাতিবিলা গ্রামের বাসিন্দা ও পাতিবিলা ইউনিয়নস্বেচ্ছাসেবকলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের ক্ষমতার উৎস কোথায়।
এ এলাকার কৃষকদের অভিযোগ নদের পাড়ের মাটি কেটে ফসলী জমির ওপর দিয়ে ট্রাক্টরের ট্রলি ও ড্রামট্রাকে নিয়ে নিচ্ছে মাটি চোর চক্রটি। এতে একদিকে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতির পাশাপাশি ভৈরব খননকরে জলাধার সৃষ্টির সরকারি উদ্যোগ বিনষ্ট হচ্ছে। চোর চক্রটি উপজেলার নিয়ামতপুর, ইছাপুর, মুক্তদহ, রোস্তমপুর ও সাদিপুর পর্যন্ত ভৈরব নদের পাড়ের মাটি কেটে উজাড় করেছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা জানান, পাড়ের মাটি কাটায় আমরা বাঁধা দিলে তারা বলে আমরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মাটি কাটছি। তা না হলে বারবার তোমরা বাধা দিয়েও কি আমাদের থামাতে পেরেছো ?।
বৃহ¯পতিবার রাতে পাতিবিলা ইউনিয়নের সাদিপুর এলাকায় ভৈরব পাড়ের মাটি কাটতে থাকেন চক্রটির সদস্যরা। রাতেই স্থানীয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) ইরুফা সুলতানার নিকট মোবাইলে অভিযোগ করেন। অভিযোগ পেয়ে তিনি বহিষ্কৃত স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা সিদ্দিকুর রহমানকে মোবাইলে মাটি কাটা বন্ধ করতে বললে তারা মাটি কাটা বন্ধ করেন। তবে গভীর রাতে তারা আবারো নিয়ামতপুর পালপাড়া থেকে মাটি কেটে ট্রাকে নিয়ে গেছে বলে মোবাইলে জানিয়েছেন গ্রামের নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম। বুধবার সকালে রোস্তমপুর এলাকা থেকে নদীর পাড় কাটার সময় খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা পাতিবিলা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানকে মাটি কাটা বন্ধ করতে বলেন। এ সময় তিনি ভবিষ্যতে যেন আর নদীর পাড়ের মাটি না কাটা হয় সে বিষয়েও সতর্ক করেন। একদিন বন্ধ রেখে আবারো স্থান পরির্তন করে পাড়ের মাটি কাটা শুরু করে মাটি চোরেরা। এলাকাবাসী জানান, প্রথমে পাতিবিলা ইউনিয়নের নিয়ামতপুর গ্রাম থেকে পাড়ের মাটি কেটে বিক্রি করে চক্রটি। সেখানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাফী বিন কবিরের নেতৃত্বে কয়েকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা হয়েছে। তবুও থামেনি তাদের এই মাটি চুরি। মাটি চোর চক্রটি নিয়ামতপুর, ইছাপুর, মুক্তদহ, রোস্তমপুর ও সাদিপুর গ্রাম থেকে দিন অথবা গভীর রাতে নদীপাড়ের মাটি চুরি করেই চলেছে।
চৌগাছা থানা সূত্রে জানা যায়, গত ৪ ডিসেম্বর স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে চৌগাছা থানা পুলিশ মুক্তদহ মোড় থেকে কয়েকটি মাটি বোঝাই ড্রামট্রাক থানা হেফাজতে নেন। আর পাড়ের মাটি কাটবেন না বলেথানায় তারা মুচলেকা দেন। প্রশাসন বারবার বাধা দিচ্ছে আর তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। এ বিষয়ে নিয়ামতপুর গ্রামের নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম বলেন, নদের পাড় থেকে রাতে মাটি নিয়ে যাচ্ছে। গভীর রাতে গ্রামের মাঝখান দিয়ে দ্রুতগতিতে এসব গাড়িগুলো যাওয়ায় গাড়ির শব্দে মানুষের নানা অসুবিধা হচ্ছে। সম্প্রতি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এক চালকের তিনমাস জেল দেয়া হয়।প্রশাসন অভিযান চালালে দেখা যায় গরীব চালকরাই জেল-জরিমানার শিকার হয়। মূল হোতারা ধরা ছোয়ার বাইরেই থাকেন। একারণে এই অপকর্ম থামাছে না। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের আহবায়ক জিয়াউর রহমান রিন্টু বলেন, গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত পাতিবিলা ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করায় সিদ্দিককে দলের সব পদ-পদবী থেকে বহিষ্কার করা হয়। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরুফা সুলতানা বলেন, বৃহ¯পতিবার রাতে পুলিশ পাঠানোর পর তারা মাটি কাটা বন্ধা করে। আগেও মাটি কাটাবন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো। তারা কাটবেন না বলে কথা দিয়েছিলেন। তবুও অভিযোগ আসছে এবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। প্রয়োজনে নিয়মিত মামলা করা হবে।