মুরাদ আসলে কি চেয়েছিলেন?

0

শামীমুল হক॥ প্রচলিত রয়েছে- বেশি কথায় দন্ত নষ্ট। বেশি খেলে পেট হয় নষ্ট। বেশি কথা বলিস না ভাই, বেশি কিছুই ভালো না। কিন্তু আমরা ক’জন এ কথা মেনে চলি? নিজেকে জাহির করতে যা নয়, তা বলি। যা নয়, তা করি। আখেরে দিতে হয় এর খেসারত। যুগে যুগে মানুষ তা দেখে আসছে। তারপরও কেউ কেউ শিক্ষা নেয় না। এমন হাজারো উদাহরণ আমাদের সামনে। এই তো বর্তমান সময়ে সদ্য পদত্যাগী প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। গত দুই মাস ধরে মুরাদ যা বলে আসছিলেন, যা করে আসছিলেন- তা দেখে স্তম্ভিত সবাই। অবস্থা এমন দাঁড়ায়, তার অডিও রেকর্ড শুনে লজ্জায় মাথা নোয়ায় মানুষ। কিন্তু লাজ শরমের বালাই ছিল না মুরাদের মুখে। বীরদর্পে মুরাদ একের পর এক অকাণ্ড চালিয়ে গেছেন। নিজেকে জ্ঞানী, মহাজ্ঞানী, যোগ্য প্রমাণ করতে সবকিছু করেছেন। আরে পাগলও নিজের বুঝ বুঝেন। কিন্তু মুরাদ? কোন ধরনের মানুষ। কেউ কেউ বলেন, সে প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণমন্ত্রী হওয়ার জন্য এসব করছিলেন। কিন্তু হিতে বিপরীত হয়েছে। তার অতি পাগলামীতে সব গোলমাল হয়ে যায়। কথায় বলে- ‘পাগল পাগল মানুষগুলো/ পাগল সারা দুনিয়া/ কেহ পাগল রূপ দেখিয়া/ কেহ পাগল শুনিয়া।’ যুগে যুগে সমাজে বহু পাগলের আবির্ভাব দেখা যায়? কেউ হাসতে পাগল। কেউ হাসাতে পাগল। কেউ কাঁদতে পাগল। কেউ কাঁদাতে পাগল। আবার কেউ খেতে পাগল। কেউ খাওয়াতে পাগল। কেউ দিতে পাগল। কেউ নিতে পাগল। কেউ টাকার পাগল। কেউ টাকা বিলাতে পাগল। কেউ অন্যকে ঘায়েল করতে পাগল। কেউ দেখে পাগল। কেউ শুনে পাগল। কেউ নাচতে পাগল। কেউ নাচাতে পাগল। কেউ ধরতে পাগল। কেউ ছাড়তে পাগল। কেউ বলতে পাগল। কেউ বলাতে পাগল। কেউ নেশার পাগল। কেউ নেশা তাড়াতে পাগল। কেউ লোক দেখাতে পাগল। কেউ লোক হাসাতে পাগল। কেউ ভালোবাসার পাগল। কেউ প্রেমের পাগল। কেউ বিরহে পাগল। কেউ আবেগে পাগল। কেউ সুখে পাগল। কেউ দুঃখে পাগল। কেউ প্রভাব আঁকড়ে রাখতে পাগল। কেউ অভাবে পাগল। কেউ স্বভাবে পাগল। এই স্বভাবে পাগল নিয়েই হলো যত সমস্যা। এ ধরনের পাগল নিজেরটা ষোলআনা বুঝে। আর নিজে যা বুঝে তাই ফাইনাল। এখানে অন্যকোনো কথা চলবে না। এ ধরনের পাগলের কিছু সমর্থকও থাকে। যারা তাকে সমর্থন দিয়ে আরও পাগল বানিয়ে ফেলে। অবশ্য তারা নিজেকে পাগল বলতে রাজি নন। মানতেও রাজি নন। এ জাতীয় পাগলরা সবকিছুতে নাক গলাতে ওস্তাদ। যেকোনো বিষয়ে বাম হাত ঢুকিয়ে দেয়। এতে মূল বিষয় হয়ে পড়ে দূষিত। নিজের পাণ্ডিত্য জাহির করতে নানা কসরত করে। তাদের এ কসরত দেখে হাসেন সবাই। এ ধরনের পাগল সমাজটাকে একেবারে নষ্ট করে দিচ্ছে। ডা. মুরাদ কি আসলেই এইসব পাগলদের দলে পড়েন? প্রশ্ন জাগে মনে। একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে, মন্ত্রিসভার একজন সদস্য হয়ে তিনি কি করে গোটা সরকারকে বিতর্কের মধ্যে ফেলে দেন? নাকি তিনি কৌশলে সরকারকে বিতর্কিত করতে চেয়েছিলেন? এমন হাজারো প্রশ্ন মানুষের মনে। তার মুখের যে ভাষা তা কোনো মানুষের মুখে শোভা পায় না। ভদ্র মানুষ তো এর থেকে হাজার মাইল দূরে থাকেন। আফসোস! মন্ত্রী হয়ে দেশকে অনেক কিছু দেয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু তিনি যা দিতে চেয়েছেন তা সরকারকে বেকায়দায় ফেলার কৌশল ছাড়া কিছুই নয়। আওয়ামী লীগকে নিচে নামানো ছাড়া কিছুই নয়। তাই তো আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়ে তার দল ও সরকারকে কলঙ্কের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। এটি আরও আগে হলে হয়তো আরও ভালো হতো। যে বিশ্রী ভাষায় একজন নায়িকার সঙ্গে মুরাদ কথা বলেছেন, তাতেই বুঝা যায় মুরাদের রুচি। তার সংস্কৃতি। তার আভিজাত্য। মুরাদ যেন পণ করেছিলেন- লাজ, লজ্জা, ভয়- এ তিন থাকতে নয়। ধিক মুরাদ। ধিক। ক্ষমতার অপব্যবহার দেখেছি। কিন্তু মুরাদের মতো এমন অপব্যবহার ক’জন দেখেছে? মুরাদ নামটিই এখন ঘৃণার। লজ্জার। প্রধানমন্ত্রী এমন লজ্জা থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করেছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেই এমনটা করতে পেরেছেন।