লোকসমাজ ডেস্ক॥ রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের তদন্তে নাম আসা অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধরের অ্যাকাউন্টে গত ৬ বছরে ১০ কোটি টাকার লেনদেনের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। সেই অর্থের সন্ধান করতে গিয়ে গোয়েন্দারা প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে এই শিক্ষকের সম্পৃক্ততা পেয়েছেন। এ ছাড়া, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের একজনের স্বীকারোক্তিতেও এসেছে ওই শিক্ষকের নাম। পাঁচ সরকারি ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের তদন্তে নাম আসা অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান ছিলেন। এ ঘটনায় তার নাম আসার পর বুয়েট কর্তৃপক্ষ তাকে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। একই সঙ্গে ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, “গোয়েন্দা পুলিশ আমাদের যোগাযোগ করে কিছু তথ্য দিয়েছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই এই ব্যবস্থা। আমরা তদন্ত কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবস সময় দিয়েছি। তাদের রিপোর্ট পাওয়ার পর আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশকেও বিষয়টি জানাব।” নিখিল রঞ্জন ধর তার বিরুদ্ধে আনা এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, “প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনার সঙ্গে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। দায়িত্ব থেকেই তিনি প্রেসে গেছেন এবং কাজটি তদারকি করেছেন।”
ছয় বছরে অ্যাকাউন্টে ১০ কোটি টাকার লেনদেন ও তিন বছরে ১ কোটি ৮২ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি ১৯৮৬ সাল থেকে বুয়েটে শিক্ষকতা করি। এটা সারা জীবনের সঞ্চয়। পাশাপাশি পারিবারিকভাবে মাছের ঘেরসহ কিছু ব্যবসাও আছে। সেখান থেকেও টাকা আসে। এসব টাকা দিয়েই আমি সঞ্চয়পত্র কিনেছি। সব টাকার হিসাব আছে।” রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকের সমন্বিত নিয়োগ পরীক্ষার দায়িত্ব পেয়েছিল আহসানউল¬াহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (এইউএসটি)। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধর। গত ৬ নভেম্বর এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
কিভাবে এই শিক্ষকের নাম প্রশ্ন ফাঁস চক্রের মধ্যে এল জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, “সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকের সমন্বিত নিয়োগ পরীক্ষার পর প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠে। তখন গোয়েন্দা পুলিশ এটা নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। তদন্তের একপর্যায়ে আমরা জানতে পারি আহসানউল¬াহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস থেকেই প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। এই ঘটনায় আমরা ১১ জনকে গ্রেফতার করি। তাদের মধ্যে একজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে ওই শিক্ষকের নাম বলেছেন। পাশাপাশি আরও কিছু তথ্য আমরা পেয়েছি। এগুলো নিয়েই এখন আমাদের অনুসন্ধান চলছে। তিনি সম্পৃক্ত থাকলে আইনের আওতায় আনা হবে।” প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গোয়েন্দা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধর নিয়োগ পরীক্ষা কমিটিতে ছিলেন না। কিন্তু তিনি প্রশ্ন ছাপার দিন আহছানিয়া মিশনের ঢাকার আশুলিয়ার ছাপাখানায় অবস্থান করতেন। ফেরার সময় দুই কপি প্রশ্ন তিনি সঙ্গে আনতেন। প্রশ্ন ব্যাগে ঢুকিয়ে দিতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পিয়ন দেলোয়ার হোসেন। গ্রেফতারের পর দেলোয়ার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিতে এই তথ্য জানিয়েছেন।” এ বিষয়ে অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধর বলেন, মূলত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ডাকে তিনি ছাপাখানায় যেতেন। পরীক্ষা কমিটিতে না থেকেও কেন যেতেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, মূলত পরীক্ষার সিট প¬্যান করতাম, অন্য শিক্ষকরাও থাকতেন। সবাই মিলে একসঙ্গে সিট প¬্যান তদারক করতাম। আর ছাপা প্রশ্নে কোন ভুল আছে কিনা সেটা দেখার জন্যই দুই কপি ব্যাগে আনতেন। তার কাছ থেকে এটা বাইরে যায়নি বলে দাবি তার।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে।