সুপারির হাট কচুয়া বাধাল বাজার

0

বাগেরহাট সংবাদদাতা॥ বাগেরহাট জেলার অন্যতম অর্থকরী ফসল সুপারি। জেলার কচুয়া বাধাল বাজার অন্যতম বৃহৎ সুপারির হাট। এখানেই প্রতি হাটবারে বিক্রি হয় কোটি টাকার সুপারি। সপ্তাহে রোববার ও বৃহস্পতিবার এই দুদিন হাট বসে। গত রোববার সকালে সরেজমিনে বাধাল বাজার দেখা যায় হলুদের সমারোহ। পাকা সুপারিতে হাট জুড়ে রঙের ছাড়াছড়ি। বাজারে বিক্রেতা ও ক্রেতার সমাগমও চোখে পড়ার মত। ভোরের শুরুতেই বিভিন্ন এলাকা থেকে ভ্যান, নছিমন, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেলে বস্তা বা ঝাঁকা ভর্তি সুপারি নিয়ে হাটে হাজির হচ্ছেন বিক্রেতারা। চলছে দাম কষাকষি। বিক্রিও হচ্ছে খুব। পাইকাররা সুপারি ক্রয় করে নিজেদের ঘরে স্তুপ করে রাখছেন। সেই সুপারি আবার বাছাই এবং চুড়ান্ত গণনা করে বস্তা ভর্তি করতে কাজ করছেন শতাধিক শ্রমিক।
এখনে উৎপাদিত সুপারি জেলার চাহিদা মিটিয়ে পাইকারি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর, সৈয়দপুর, রংপুর, দিনাজপুর, নাটোর, গাইবান্ধাসহ ২০টি জেলায় যায় এই সুপারি। এছাড়াও উপজেলার তালেশ্বর, টেংরাখালি, গজালিয়া বাজারেও সুপারি বিক্রি হয়। চাহিদা থাকায় ভালো দামও পাচ্ছেন বিক্রেতারা। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে ২০২০ সালে জেলায় ৩ হাজার ৭শ হেক্টর জমিতে সুপারি চাষ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকলে চাষ হয়েছিল ৪হাজার ৯৭ হেক্টর জমিতে। এতে উৎপাদন হয়েছিল ২৫ হাজার ৬০৫ টন সুপারি। ২০২১ সালে ৪হাজার ৯৭ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ হাজার ৬০৫ টন। তবে এবার আবাদ হয়েছে ৪হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে, এতে উৎপাদন ২৫ হাজার ৬৬৩ মেট্রিক টন। জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে সব থেকে বেশি সুপারি উৎপাদিত হয় কচুয়া উপজেলায়। এই উপজেলায় এবছর ১ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে ৪ হাজার ১১৪ মেট্রিক টন সুপারি উৎপাদিত হয়েছে।
আবুল কালাম আজাদ নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, সুপারি হাটের জন্যে বিখ্যাত কচুয়ার বাধাল বাজার। বাগেরহাট শহর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই হাটে লাখ লাখ টাকার সুপারি বেচা-কেনা হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি হাটে খাজনা বেশি নেওয়া হয় দাবি করে বলেন, সুপারির বস্তাপ্রতি ১০০ টাকার ইজারা নেওয়া হয়। খাজনা যদি একটু কম হয় তাহলে একদিনে যেমন আমদানি বৃদ্ধি পাবে অপরদিকে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবে। উপজেলার গোপালপুর থেকে সুপারি বিক্রি করতে আসা চাষি মিরাজুল ইসলাম জানান, এ বছর তাদের সুপারির ফলন ভালো হয়েছে। সুপারির আকারও রঙ অনেক ভালো। পাশাপাশি দামও ভালো পাচ্ছেন। সুপারি গণনা ও বাছাই কাজে নিয়োজিত শ্রমিক শহিদ, ইউনুস ও মোবারেক বলেন, সপ্তাহে দুইদিন এই কাজ করার সুযোগ পান। ফজরের নামাজ পর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করেন এই দুই দিন। এক কুড়ি সুপারি বাছাই শেষে গণনা করে বস্তায় ঢুকালে ৫ টাকা হারে মজুরি পান। প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৬‘শ টাকা আয় হয় তাদের। বাধাল বাজারের আড়তদার কেয়াম গাজী জানান, হাটে তারা ৯জন আড়তদার রয়েছেন। প্রতি হাটে দেড় থেকে ২ হাজার বস্তা সুপারি ওঠে বাজারে। গত বছরের তুলনায় এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় সুপারির উৎপাদনও ভালো হয়েছে।
ব্যাপারী ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, বাধাল সুপারি হাট থেকে সুপারি কিনে তারা সরাসরি রংপুরে নিয়ে যান। রংপুরের আশেপাশের জেলাতেও তারা সুপারি বিক্রি করেন। এবছর সুপারির বাজার ভালো। এক কুড়ি সুপারি কখনো ২৩০ থেকে ৫শ টাকায় বিক্রি হয়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রশিক্ষণ অফিসার মোতাহের হোসেন বলেন, ‘সুপারি এবং নারকেলের জন্য বাগেরহাট জেলা প্রসিদ্ধ। কচুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা সরোয়ার বলেন, কচুয়া উপজেলায় প্রচুর সুপারি উৎপাদিত হয়। উত্তরাঞ্চলের অনেক জেলায় এই সুপারি নিয়ে যান ব্যাপারীরা।