সরকারি ব্যবস্থায় নিত্যপণ্যের বিক্রি বাড়াতে হবে

0

সরকারিভাবে ন্যায্য মূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রির যথেষ্ট ব্যবস্থা না থাকা মুনাফাখোরেরা বছরের বিভিন্ন সময়ে দফায় দফায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে চলেছে। এ জন্য তাদের অজুহাতেরও শেষ নেই। অতিরিক্ত মুনাফার জন্য অনৈতিক এবং অযৌক্তিকভাবে তারা দাম বাড়াতে একটুও দ্বিধা করে না। পণ্য মজুদকারী এই চতুর ব্যবসায়ীদের গুদামে যে একেবারেই যে অভিযান হয় না, তা নয়। হয় মাঝে মধ্যে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মজুদদারদের সন্ধানে নেমে পড়ে। কখনও কখনও হাতেনাতে তাদের ধরেও ফেলে। তবে সামান্য জরিমানা ছাড়া শাস্তি হয় খুব কম।
গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা এবং মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বেসরকারি বা ব্যক্তিউদ্যোগে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠান পণ্য আমদানি ও বিপণনে যুক্ত থাকে। সরকারের একার পক্ষে সার্বিক বাজার সামাল দেয়া সম্ভব হয় না। সরকারকে তাই নির্ভর করতে হয় বেসরকারি সংস্থার ওপর। এই সুযোগটাই বেসরকারি খাত গ্রহণ করে এবং অসৎ ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট গড়ে তুলে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। সরকারি সংস্থা টিসিবি (ট্রেডিং কর্পোরশন অব বাংলাদেশ)-এর নিজস্ব মজুদ সক্ষমতা যদি শক্তিশালী হয় এবং তারা যদি দেশব্যাপী নিত্যপণ্যের সরবরাহে গতি আনতে পারে, তাহলে মুনাফালোভীরা সুবিধা করতে পারে না। তাই পর্যবেক্ষক মহল বারবারই টিসিবিকে শক্তিশালী করার কথা বলে আসছে। বিশেষ করে গরিব, দুস্থ ও স্বল্প আয়ের মানুষকে বাঁচাতে টিসিবির পণ্য সরবরাহ বাড়ানো চাই। কেননা, টিসিবির পণ্য বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে বিক্রি হয়। যখন তেল, চিনি ও পেঁয়াজের দাম এক লাফে অনেকটা বেড়ে যায়, তখন সাধারণ মানুষের ভরসাস্থল হয়ে ওঠে টিসিবিরি ট্রাক। পক্ষান্তরে অতিচাহিদাসম্পন্ন নিত্যপণ্য সুলভে পাওয়া গেলে মুনাফালোভীরা সংযত হয়।
এর কারণ টিসিবি সর্বত্র এবং পর্যাপ্ত পণ্য সরবরাহ করতে পারে না। তবে, দেরিতে হলেও টিসিবি নিজস্ব মজুদ সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে। বলা হচ্ছে- সারাবছরই বিক্রি হবে টিসিবির পণ্য। স্বল্প আয়ের মানুষ অর্ধেক দামে না হলেও ন্যায্যমূল্যে কিনতে পারবেন ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, ডাল ও চিনির মতো ভোগ্য পণ্যসামগ্রী। এ লক্ষ্যে ধাপে ধাপে দেশের বিভিন্ন স্থানে আঞ্চলিক অফিস ও গুদাম নির্মাণ করবে টিসিবি। খবর অনুযায়ী এরই মধ্যে জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়েছে। আগামী দিনে নিজস্ব গুদাম নির্মিত হলে টিসিবি আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারবে। সারাবছর নিত্যপণ্য বিক্রি কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বাজারে কিছুটা হলেও প্রভাব পড়বে। টিসিবির এই কার্যক্রম জোরালো করতে হলে তালিকাভুক্ত ডিলারদের ওপরও নজর রাখতে হবে। প্রায়ই কিছু অসাধু ডিলার পণ্য বাজারে অবৈধভাবে বিক্রি করে দেন। তাই টিসিবির পণ্যক্রয়, পণ্য মজুদ ও সরবরাহে গতি আনতে হলে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে। আমরা আশা করব, আগামী দিনগুলোতে টিসিবি দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে সমর্থ হবে। এর মধ্য দিয়ে মুনাফাখোরদের লাগাম টানাও সম্ভব হবে।