ক্যাসিনো, ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা

0

ফাহিমা আক্তার সুমি॥ মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে অনলাইনে জুয়া খেলার অ্যাকাউন্ট তৈরি করে চক্রটি। এসব অ্যাকাউন্টে বাড়ানো হয় সদস্য সংখ্যা। গ্রুপে এডমিন, সুপার এডমিন, সাব-এজেন্ট ও এজেন্ট থাকে। খেলা পরিচালনার আগে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা বাজি ধরা হয়। সেই বাজির টাকা ডলারে রূপান্তরিত করা হয়। পরবর্তীতে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ওই টাকা লেনদেন হয়। ওই ডলার তারা বিভিন্ন অপরিচিত ব্যক্তির কাছ থেকে সংগ্রহ করে। অনলাইনে জুয়া খেলার মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থ পাচার হতো বিদেশে।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, জুয়া খেলার রয়েছে বিভিন্ন ইউনিট। প্রতিটি ইউনিটের জন্য একটি আর্কষনীয় মূল্য নির্ধারণ করা থাকে। ইউনিট অনলাইনের মাধ্যমে গ্রুপের অন্য সদস্যের কাছে বিক্রি করে দিলে সে নগদ টাকা পেয়ে যায়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, অনলাইনে সংঘবদ্ধ খেলাটি যেভাবে দিন দিন বাড়ছে তা সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত মঙ্গলবার রাজধানীর খিলগাঁও থেকে পেশাদার অনলাইনের জুয়াড়ি চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা রমনা বিভাগ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মো. সাজ্জাদ হোসেন, মো. আক্কাছ আলী, মো. রিয়াজ মো. শাহাবুদ্দিন ওরফে শাবু ও মো. ইমরান বিন রেহান ওরফে বাপ্পি।
এর আগে ১৪ই আগস্ট অনলাইন জুয়াড়ি চক্রের আরও ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। ডিবি জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতরা একটি অনলাইন জুয়াড়ি চক্রের সক্রিয় সদস্য। চক্রটি অনলাইনভিত্তিক প্লে বিট ৩৬৫ সফটওয়্যারে জুয়া খেলার মাধ্যমে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা বাজি ধরতো। চক্রটি মূলত বাজির টাকা ডলারে রূপান্তরিত করে বাজি খেলতো। ওই ডলার তারা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে সংগ্রহ করতো। গ্রেপ্তারকৃতদের প্রত্যেকের প্লে বিট ৩৬৫ সফটওয়্যারে নিজস্ব অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ওই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অনলাইন জুয়ার টাকা ডলারে লেনদেন ও স্থানান্তর করা হতো। ডিবি রমনা জোনের সহকারী কমিশনার নাজিয়া ইসলাম বলেন, জুয়াড়িরা দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনভিত্তিক ডিজিটাল জুয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। এর মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থ পাচার হতো বিদেশে। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে জুয়াড়িদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ব্যবহৃত ৫টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়। এ বিষয়ে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানায় মামলা দায়ের হয়েছে বলেও জানান গোয়েন্দা পুলিশের এ কর্মকর্তা। এ বিষয়ে গোয়েন্দা রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক মানবজমিনকে বলেন, ভয়াবহ এই অনলাইনভিত্তিক জুয়া খেলাটি বেড়েই চলছে। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি যেভাবে ছড়াচ্ছে তাতে অল্প বয়সীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অনেকে জুয়ায় নেশাগ্রস্ত হয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়বে। এই জুয়া খেলার জন্য কোনো ক্যাসিনো বা বারের প্রয়োজন হয় না।
সূত্র জানায়, সক্রিয় পেশাদার জুয়াড়ি চক্রের ৫ সদস্যকে গেপ্তারের আগে ঢাকার ডেমরা থেকে আরও ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়। আগে জুয়া খেলতো ক্যাসিনো বা সরাসরি বিভিন্ন স্থানে। সেটা স্থানভিত্তিক ছিল। কিন্তু এখন অনলাইনভিত্তিক জুয়া খেলার প্রবণতা বেড়ে চলছে। প্লে স্টোরের মাধ্যমে অ্যাপসটি চালু করতে হয়। অ্যাপসের মাধ্যমে ছোট ছোট গ্রুপ তৈরি করে। গ্রুপে এডমিন, সুপার এডমিন, সাব এজেন্ট ও এজেন্ট থাকে। তাদের মাধ্যমে এই গ্রুপটিকে আরও প্রসার করা হয়। প্রথমে এই চক্রের সদস্যরা অভ্যন্তরীণভাবে জুয়া খেলা শুরু করে। এর পরে এটা বিস্তার আকার ধারণ করে ছড়িয়ে যায়। লেনদেনের মাধ্যমটি আরও উন্নত প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসছে চক্রটি। এখন টাকা পরিশোধে বিকাশ বা রকেট ব্যবহার করতে হয় না। বিভিন্ন উৎসবে ও বিশেষ বিশেষ দিনে জুয়ার এই আসরটি বেশি বসে।