চৌগাছায় এশিয়ার সর্ববৃহৎ তুলা গবেষণা খামারে ২৬টির মধ্যে ১৯ পদ শূন্য

0

এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর)॥ যশোরের চৌগাছায় এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ তুলা গবেষণা কেন্দ্র ও বীজবর্ধন খামারটিতে ২৬ জনের মধ্যে ১৯ জনের পদ শূন্য রয়েছে। যুগের পর যুগ এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ এই খামারটিজনবল সংকটে রয়েছে। জনবল সংকটে পড়ার ফলে দারুণ ভাবে ব্যাহত হচ্ছে খামারটির সকল কার্যক্রম। ২৬টি কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ রয়েছে খামারটিতে । যার মধ্যে বর্তমানে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা একজন, সহকারি বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা একজন, ফোরম্যান একজন, পা¤প ম্যান একজন, নৈশপ্রহরী একজন, ড্রাইভার একজন এবং জিন মেকানিক একজন কর্মরত আছেন। বর্তমানে ব্যবস্থাপক, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, এসও কর্মকর্তা, ল্যাব এ্যাসিসট্যান্ট, মাঠ সহকারী, ক¤িপউটার অপারেটর, উচ্চমান সহকারী, ক্যাশিয়ার, এম এল এস এস, নিরাপত্তা কর্মী, ইলেকট্রিশিয়ান, ক্যাটল কিপার ও পরিচ্ছন্ন কর্মীসহ মোট ১৯ টি পদে জনবল শূন্য রয়েছে।
এ ব্যাপারে জগদীশপুর তুলা গবেষণা ও বীজ বর্ধন খামারের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক ড. এম এম আবেদ আলী বলেন, ১৯৮০ সালে এ খামারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। খামারটি বাংলাদেশ সরকার এবং ইইসি (ইইউ) এর আর্থিক সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত হয়। খামারটিতে মোট ৬৩.৭০ হেক্টর (১৫৭ একর) জমি রয়েছে। এর মধ্যে গবেষণা কাজে ব্যবহার করা হয় ৪ হেক্টর জমি। এ ছাড়া প্রজনন বীজ উৎপাদন ২ হেক্টর, ভিত্তি বীজ উৎপাদন ২১ হেক্টর, সবুজ সারের বীজ উৎপাদন ৮ হেক্টর, ডাল জাতীয় ফসল উৎপাদন ৬.১৪ হেক্টর, খেজুর বাগান দশমিক ৬০ হেক্টর, বিভিন্ন গাছের বাগান ৩.১০ হেক্টর, প্রশাসনিক ভবণসহ বিভিন্ন ভবন আছে ১.৮০ হেক্টর, পুকুর দশমিক ৪০ হেক্টর, রাস্তা ১.৪০ হেক্টর এবং ওষধি বাগান আছে দশমিক ৫০ হেক্টর জমিতে। তা ছাড়া ১৪.৭২ হেক্টর জমি এখন পর্যন্ত পতিত রয়েছে। তুলা গবেষণা ও বীজ বর্ধন খামারের ফোরম্যান আব্দুল কায়ুম ভূইয়া বলেন, খামারটিতে প্রজনন বিভাগ, কৃষিতত্ত্ব বিভাগ, কীটতত্ত্ব বিভাগ, মৃত্তিকা বিভাগ ও রোগতত্ত্ব বিভাগসহ মোট ৫টি ডিসিপ্লিনের আওতায় গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কাজের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ অত্যন্ত জরুরি বিষয়। তাই মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য এখানে ডরমেটরীর ব্যবস্থা রয়েছে। যেখানে ১২০ জনের থাকা খাওয়া ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা যায়। ৪ দিন করে বছরে দুইবার বৃহত্তর যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া থেকে আগত কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ ছাড়া এখানে স্টাফ ট্রেনিং প্রদান করা হয়।
জগদীশপুর খামার থেকে তুলার উন্নত জাত সি,বি-৫ উদ্ভাবিত হয়েছে। যা উচ্চ ফলশীল জাত, যার আশের শতকরা হার বেশি, তুলনামূলকভাবে পোকার আক্রমণ কম। এই গবেষণা কেন্দ্র থেকে বিজ্ঞানী ও মাঠ কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে একটি হাইব্রিড তুলার একাধিক জাত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ছাড়া তুলা ফসলের সারের প্রয়োগ মাত্রা উদ্ভাবিত হয়েছে। এ সময় কথা হয় মির্জাপুর গ্রামের তুলা চাষি মিজানুর রহমানের সাথে তিনি বলেন, জগদীশপুর তুলা উৎপাদন, গবেষণা খামার প্রতিষ্ঠার পর তুলা চাষিদের প্রশিক্ষণ ছিল ব্যাপক হারে। স্থানীয় তুলা চাষিদের সঙ্গে খামার কর্তৃপক্ষের গভীর সু-স¤পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু ধীরে ধীরে তুলা চাষ বন্ধের উপক্রম দেখা দিয়েছে। স্থানীয় কৃষকেরা এখন আগের মতো তুলা চাষ করেন না।খামারটির প্রবেশ পথসহ খামারের ভেতরের সকল সড়ক এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। জনবল না থাকায় খামারে লাখ লাখ টাকার কৃষি যন্ত্রপাতি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। যা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে অকেজো হয়ে পড়ছে। শূন্য পদগুলোতে জনবল নিয়োগ হলে খামারটির কার্যক্রমে গতি ফিরে আসবে বলে মনে করেন তুলা চাষিরা। তুলা চাষিরা বলেন, এক সময় এই তুলা ফার্মটি দেখতে বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ এসে ভিড় করতেন। ফার্মের চারদিকে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-গাছালি ছিল। ভেতরে ছিল ফুলের বাগান রাস্তাগুলোও ছিল সুন্দর। কিন্তু বর্তমানে রাস্তাগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। রাস্তা সংস্কার ও জনবল নিয়োগের মাধ্যমে খামার আগের মতো প্রাণ ফিরে পাবে। ফার্ম ব্যাবস্থাপক ড. এম এম আবেদ আলী বলেন, ‘গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও বীজ বর্ধন খামারটি বর্তমানে চরমজনবল সংকটে রয়েছে। শূন্য পদগুলোতে জনবল চেয়ে বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে শূন্য পদে লোক নিয়োগ দেওয়া হবে। জনবল সংকট কেটে গেরে খামারটির কার্যক্রমে গতি ফিরে আসবে। সেই সাথে বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের তুলা উৎপাদন সম্ভব হবে।