টানা বৃষ্টিতে যশোরাঞ্চলের রোপা আমন ও রবিশস্যের ব্যাপক ক্ষতি

0

আকরামুজ্জামান ॥ তিন দিনের বৃষ্টিপাতে যশোরে উঠতি রোপা আমন ও রবি শষ্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে কেটে রাখা আমন ধান এখন পানিতে পচে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। কৃষক বলছেন, এ বছর আমনের বাম্পার ফলন হলেও শেষ সময়ে এসে বৈরি আবহাওয়ার কবলে পড়ে তারা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন। অবশ্য কৃষি বিভাগের দাবি আবহাওয়া অনুকুলে আসলে কৃষকের ক্ষতির পরিমাণ অনেক কম হবে। তবে গোখাদ্যর জন্য নির্ভরশীল বিছালির মারাত্মক সংকট দেখা দিতে পারে। এ অবস্থায় যেসব জমিতে পানি জমে আছে সেখান থেকে পানি অপসারণে কৃষককে পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে যশোর জেলায় ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯ শ ৮৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। ইতিমধ্যে বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে আমন ধান জেলায় প্রায় ৩৫ শতাংশ জমির আমন ধান কাটা শেষ হয়েছে এরই মধ্যে। বাকি ধানগুলো কয়েকদিনের মধ্যে কেটে কৃষক ঘরে তুলতে পারবে বলে কৃষি বিভাগ আশা করছে। তবে ধান ঘরে তোলার উপযুক্ত সময়ে বৈরি আবহাওয়ার কবলে পড়ে এ অঞ্চলের শত শত কৃষক চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন। গত রবি ও সোমবারের দুদিনের টানা বৃষ্টিতে এ অঞ্চলের মাঠে মাঠে কেটে রাখা আমন ধান পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষক বলছেন, আর কয়েকদিন সময় পেলেই এসব ধান তারা ঘরে তুলতে পারতেন। কিন্তু অসময়ের বৃষ্টিতে তাদের সে স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। যশোর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানাগেছে। নিম্মচাপের প্রভাবে গত ১৩ তারিখ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৫ নভেম্বর সোমবার। এদিন যশোরে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। কৃষি বিভাগ বলছে, বর্তমানে আমন মৌসুমের পাশাপাশি রবি শস্য চাষের মৌসুম চলছে। কৃষক ইতিমধ্যে আমন ক্ষেতে সরিষার বীজ বপন করেছেন। এসব বীজ অঙ্কুর গজানোর আগেই ২ দিনের এই বৃষ্টিতে নিশ্চিত ক্ষতির মুখে পড়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে যশোর সদর উপজেলার হাশিমপুর, কাশিমপুর ও এনায়েতপুর গ্রামের মাঠে গিয়ে কৃষকের দুর্দশার চিত্র দেখা যায়। বিস্তীর্ণ মাঠে কেটে রাখা ধান পানিতে ভাসছে। পানিতে ডোবা এসব ধানের কিছু অংশ রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। কথা হয় হাশিমপুর মাঠে কর্মরত কৃষক তরিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, আর কয়েকদিন সময় পেলেই ফসল ঘরে তুলতে পারা যেতো। কিন্তু শেষ সময়ের এই কপাল পুড়ানো বৃষ্টি তাদের সব কিছু উলটপালট করে দিয়েছে।
একই মাঠে কথা হয় কৃষক আসিফ হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, এমনিতেই সার, কীটনাশকের দাম বেশি। তারপর জোন(কামলা) খরচতো আছেই। এ অবস্থার পরও ভালো ফলনে যাওবা লাভের আশা ছিলো। সর্বনাশা বৃষ্টি তা কেড়ে নিয়েছে। তিনি আরো জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে এ ধান ঘরে তুলতে গেলে বিঘা প্রতি বাড়তি এক থেকে দেড় হাজার টাকা খরচ হবে। এনায়েতপুর গ্রামের মাঠে কথা হয় কৃষক তৈয়ব আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ধান চাষে লাভ নেই। লাভ হয় বিছালিতে। বৃষ্টিতে ধান গাছ ভিজে যাওয়ায় বিছালি বিক্রি করা যাবেনা। ধান ঘরে তুললেও তার মান কমে যাবে। ফলে বাজারে বিক্রি করতে গেলে দাম অনেক কম পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, ধানের পাশাপাশি এ বৃষ্টিতে তাদের সরিষার অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমন ক্ষেতে সরিষা বুনেছিলেন। ইতিমধ্যে চারা গজাচ্ছিলো, কিন্তু বৃষ্টির কারণে সেখানেও ধরা খেয়েছেন তারা। এখন নতুন করে সরিষা বুনতে হবে। এবিষয়ে হাশিমপুর মাঠে কথা হয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবু ছায়াদ মো. আরিফের সাথে। তিনি বলেন, অসময়ের এই বৃষ্টিপাতে আমন ও রবি শস্যের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে কৃষক যতটা আশঙ্কা করছেন ততটা নয়। তার মতে, বৈরি আবহাওয়া কেটে গেলে ক্ষতির পরিমাণ অনেক কম হবে। তিনি বলেন, এ অবস্থায় আমরা কৃষককে ক্ষেতের পানি সরিয়ে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছি। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ বাদল চন্দ্র বিশ্বাসের দাবি বৃষ্টিতে কৃষক ধান আবাদের যে ক্ষতির আশঙ্কা করেছেন তা সঠিক না হলেও বিছালি ও রবি শস্যের বেশ ক্ষতি হয়েছে। এসব ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষককে নানাভাবে সহযোগিতা করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। কৃষিবিদ বাদল চন্দ্র বিশ্বাস আরো বলেন, আমন ধান ও রবিশস্যের পাশাপাশি এ অঞ্চলের মাঠ জুড়ে রয়েছে নানা জাতের শীতকালীন সবজি। প্রাথমিকভাবে আমরা ধারনা করছিলাম বৃষ্টিতে শীতকালিন সবজির কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে মাঠ পর্যায়ে কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন বৃষ্টি ধান ও রবিশস্যের জন্য ক্ষতি হলেও সবজির জন্য আর্শীবাদ হয়ে দেখা দিয়েছে।