ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতা বাড়ছে। দেশজুড়ে সংঘাত, সংঘর্ষ,

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ হামলা, পাল্টা হামলা, গুলি, ককটেল বিস্ফোরণ ভোটকেন্দ্র দখলের ঘটনা চলছেই। রক্তক্ষয়ী দুই ধাপের নির্বাচনের আগে ও পরে এখন পর্যন্ত ৩৯ জনের প্রাণহানি হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের প্রচারণা থেকে শুরু করে নির্বাচনের পর পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩১ জন। এর আগে প্রথম ধাপের নির্বাচনের প্রচারণা থেকে নির্বাচন পর্যন্ত নিহত হয়েছিলেন ৫ জন। আরও তিনজন বিভিন্ন সময়ে নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন হাজারখানেক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। সহিংসতার বেশির ভাগ ঘটনাই ঘটেছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত, আধিপত্য বিস্তার, অবৈধ অস্ত্রের সহজলভ্যতার জন্য সহিংসতার ঘটনাগুলো ঘটছে। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১০ই নভেম্বর পর্যন্ত নির্বাচনকে ঘিরে ৪৬৯টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন ৬ হাজারের বেশি মানুষ। নিহত হয়েছেন ৮৫ জন। ১০ তারিখের পর আরও ১১ জন নিহত হয়েছেন। সবমিলিয়ে চলতি বছরে নির্বাচনী সহিংসতায় ৯৬ জনকে প্রাণ দিতে হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ৮৩৪টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ করা হয়। ওইদিন চারটি জেলায় সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে নরসিংদী, কক্সবাজার, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে সহিংসতায় সাতজন নিহত হয়েছেন। নির্বাচনের পরদিন ধামরাই ও রাজবাড়ীতে সহিংসতায় আরও তিনজন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে ধামরাইয়ে দুইজন ও রাজবাড়ীতে ১ জন। এ ছাড়া গত শুক্রবার গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য আব্দুর রউফ মাস্টারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। চলতি ইউপি নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি রক্তক্ষয়ী ঘটনা ঘটেছে নরসিংদী জেলায়। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের দিন গত বৃহস্পতিবার রায়পুরার বাঁশগাড়ি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে সালাউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর হক আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রাতুল হাসানের সমর্থক ছিলেন। আর নিহত দুলাল মিয়া বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. আশরাফুল হকের সমর্থক। ৪ঠা নভেম্বর সদর উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চল আলোকবালী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন ও ২৮শে অক্টোবর রায়পুরার চরাঞ্চল পাড়াতলী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন মারা যান। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গত ১০ বছরে নরসিংদীর চরাঞ্চলে রাজনৈতিক সহিংসতায় ২০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ১৫ই অক্টোবর মাগুরা সদর উপজেলার জগদল ইউনিয়নে দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের বিরোধের জেরে দুই ভাইসহ চারজন নিহত হন। ২৪শে অক্টোবর ফরিদপুরের সালথা উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের খারদিয়া গ্রামে নির্বাচনী সংঘর্ষে নিহত হন এক ব্যক্তি। ২৩শে অক্টোবর সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থক আলাউদ্দিন ওরফে আলাল (৪৫) প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন। ৮ই নভেম্বর মেহেরপুরের গাংনীতে নির্বাচনী সহিংসতায় দুই ভাই নিহত হয়েছেন।
এদিকে ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে অস্ত্রের চাহিদা বেড়েছে। নির্বাচনে পক্ষ-বিপক্ষ উভয় দলই অস্ত্র মজুত করছেন। চলমান নির্বাচনে যতগুলো সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তার শতকরা ৯০টিতেই গুলি ও ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে। কিছু কিছু স্থানে দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, যেভাবে নির্বাচনী সহিংসতা ও গোলাগুলির ঘটনা বাড়ছে আগামী নির্বাচনগুলোতে এসব ঘটনা আরও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। যেখানেই সংঘর্ষ হচ্ছে সেখানেই অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। আর এসব অস্ত্র আগেভাগেই সংগ্রহ করা হয়েছে। শুধুমাত্র ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে অস্ত্রের বাজার চাঙ্গা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চলতি বছরে শ’শ’ অবৈধ অস্ত্র ও অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে এদের অনেকেই বলেছে তাদের টার্গেট ছিল ইউপি নির্বাচন। সময় যত ঘনিয়ে আসছিল অস্ত্রের চাহিদা ততো বাড়ছিল। করোনার কারণে ঝিমিয়ে পড়া অস্ত্রের বাজার গত কয়েকমাস ধরে চাঙ্গা হচ্ছিল। তাই অস্ত্র ব্যবসায়ীরা সাতক্ষীরা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, চাঁপাই নবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন সীমান্তবর্তী জেলার সীমান্ত দিয়ে কৌশলে অস্ত্র নিয়ে আসতো। সীমান্ত পেরিয়ে এসব অস্ত্র চলে যেতো রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে সন্ত্রাসীদের হাতে।