সিডরের ১৪ বছর: আশ্রয়কেন্দ্র ও বাঁধের জন্য শরণখোলা বাসীর আকুতি

0

বাগেরহাট সংবাদদাতা॥ প্রাকৃতিক দূর্যোগ সুপার সাইক্লোন সিডরের পর উপকুলীয় বাসির দাবী টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মানের ৯৫ ভাগ কাজ শেষ হলেও নদী ভাঙ্গনের ফলে আতংক কাটছে না সেখানকার বাসিন্ধাদের। নদী শাসন করে টেকসই বেড়িবাধঁ নির্মানের দাবি জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধি ও উপকুলবাসি। পর্যাপ্ত সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় ঝড়জলচ্ছাসে মৃত্যুঝুকি রয়েছে এই অঞ্চলের মানুষের। অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে টেকসই বেরিবাঁধ নির্মাণ শেষ এবং পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র নির্মানের দাবি জানিয়েছেন শরণখোলাবাসী।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর এই দিনে সুপার সাইক্লোন সিডরের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় বাগেরহাটসহ উপকূলীয় কয়েকটি জেলা। সরকারি হিসেবে এই দিনে প্রায় ৯‘শ ৮ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল সিডরের আঘাতে। আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল কয়েকশ কোটি টাকার। স্বজন হারানো বেদনা ও আর্থিক ক্ষতি ভুলে শরণখোলা-মোরেলগঞ্জবাসীর একমাত্র দাবি ছিল টেকসই বেরিবাঁধ। গণ মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সরকার ২০১৫ সালে সাড়ে তিনশ কোটি টাকা ব্যয়ে উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প (সিইআইপি) নামে একটি প্রকল্পের অধীনে মোরেলগঞ্জ থেকে শরণখোলা উপজেলার বগী-গাবতলা পর্যন্ত ৬২ কিলোমিটার টেকসই বাঁধ নির্মান শুরু হয়। বেড়িবাঁধের প্রায় ৫৮ কিলোমিটার কাজ সম্পন্ন হলেও অরক্ষিত রয়েগেছে সাউথখালী ইউনিয়নের গাবতলা আশার আলো মসজিদ থেকে বগী, তেরাবাকা-শরণখোলা পর্যন্ত চার কিলোমিটার বাঁধ। এই চার কিলোমিটার বাঁধ এখনও নিচু রয়েগেছে। এখানে ব্লক দেওয়া শুরু করেনি। এই বাঁধে মাটির পরিবর্তে বালু দেওয়ারও অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। এই চার কিলোমিটার বাঁধ দিয়ে প্রতিবছর কয়েকবার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয় কয়েকটি গ্রামের সহগ্রাধিক পরিবার। অনেক সময় পানিবন্ধিও থাকতে হয় ০৭ থেকে ১০ দিন। শরণখোলার সব এলাকায় প্রয়োজনীয় সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রিয়াদুল পঞ্চায়েত বলেন, মূলবাঁধের অনেকাংশ নির্মান শেষ করেছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গাবতলা আশার আলো মসজিদ থেকে বগী, তেরাবাকা-শরণখোলা পর্যন্ত চার কিলোমিটার বাঁধ এখনও অরক্ষিত রয়েছে। এই চার কিলোমিটার বাঁধে বালুরও ব্যবহার করছেন ঠিকাদাররা। দুই পাশে মাটি দিয়ে ভিতরে ড্রেজার দিয়ে বালু ভরছেন তারা। এর ফলে এই বাঁধ খুব বেশি টেকসই হবে। বালু না দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন স্থানীয় এই জনপ্রতিনিধি।
স্থানীয় সিদ্দিক ফকির, সিয়ামসহ কয়েকজন বলেন, সিডরের পর থেকে আমাদের একমাত্র দাবি ছিল টেকসই বেরি বাঁধ ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র নির্মান। কিন্তু ১৪ বছরেও আমাদের এখানে বেরিবাঁধ নির্মান শেষ করতে পারেনি সরকার। কোথায় যাব আমরা প্রতিবছরই ঝড়-জলচ্ছাসে আমাতের জান মালের ক্ষতি হয়। এভাবে চলতে থাকলে অন্যান্যদের মত এলাকা ছেড়ে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকবে না আমাদের।
বগী গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা রুস্তম আলী বলেন, বাঁধ নির্মান ঠিকই সরকার শুরু করেছে। কিন্তু যে এলাকা সব থেকে বেশি ঝুকিপূর্ণ সেই এলাকা এখনও অরক্ষিত রয়ে গেছে। ১৪ বছরেও আমাদের বাঁচার মত ব্যবস্থা করে দিতে পারল না সরকার এই বলে আক্ষেপ করেন এই মুক্তিযোদ্ধা। উত্তর সাউথখালী এলাকার ইউপি সদস্য আল আমিন খানা বলেন, আমার এলাকায় কোন আশ্রয়কেন্দ্র নেই। অথচ আমার এলাকায়ই সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছিল মানুষের। শুধু উত্তর সাউথখালী নয়, শরণখোলার অনেক এলাকায়ই আশ্রয়কেন্দ্রের সংকট রয়েছে।
এদিকে সম্পন্ন হওয়া বেরিবাঁধে পর্যাপ্ত স্লুইজ গেট না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। বৃষ্টির পানি নিস্কাসিত না হওয়ায় পানিবন্দি থাকতে হয় কয়েক গ্রামের মানুষের। দক্ষিন সাউথখালী এলাকার রবিউল ইসলাম বলেন, আমাদের এলাকায় বেরিবাঁধ দিয়ে পানি নামতে না পাড়ায় এক ধরণের বন্দি অবস্থায় রয়েছি আমরা। এই বাঁধে পর্যাপ্ত স্লুইজ গেট না থাকায় পানি নামে না। একদিন বৃষ্টি হলে, আমাদের কয়েকদিন ধরে পানিবন্দি থাকতে হয়। আমরা এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ চাই।
শরনখোলা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত বলেন, সিডর বিদ্ধস্ত মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বর্তমান সরকার ব্যাপক কাজ করেছে। এ জন্য আমি সরকারকে স্বাধুবাদ জানাই। কিন্তু টেকসিই বেরিবাঁধের নামে যে বাঁধ করেছে তা পরিকল্পিত ভাবে হয়নি। পর্যাপ্ত স্লুইজ গেট না থাকায় এই এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। সম্পন্ন হওয়া বাঁধে আরও স্লুইজ নির্মান এবং অসম্পন্ন যে বাধ রয়েছে সেই বাঁধ দ্রুত নির্মানের দাবি জানান এই জন প্রতিনিধি। এদিকে সিডরে ক্ষতিগ্রস্থ মোরেলগঞ্জবাসীর দাবি পানগুছি নদীতে বেরিবাঁধ নির্মানে দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ নেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের। একের পর এক আশ্বাসের পরে বাঁধ নির্মান শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
সিইআইপি প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, ৩৫/১ পোল্ডারের বেরিবাঁধ নির্মানের ৯৫ ভাগ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। বর্তমানে আড়াই কিলোমিটার বেরিবাধের কাজ চলছে। আসাকরি আগামী জুন মাসের মধ্যে কাজ সমাপ্ত করতে পারব। তিনি আরও বলেন, নদী শাসনের একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন পেলে নদী শাসনের কাজ শুরু হবে। মাটির স্থলে বালু দিলে বাঁধ নির্মানের বিষয়ে প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন তিনি।