বাজেট বরাদ্দের চেয়ে অতিরিক্ত ভর্তুকির আবেদন বাড়ছে

0

কেএমএ হাসনাত॥ অর্থবছরের চার মাস না যেতেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দের অতিরিক্ত ভর্তুকি চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিচ্ছে। এতে বাজেটে ভর্তুকির চাপ বাড়ছে। অতিরিক্ত ভর্তুকি চাহিদার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে কৃষিমন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়। চলতি অর্থবছরের (২০২১-২০২২) বাজেটে কৃষিমন্ত্রণালয় জন্য ভর্তুকি সংকুলান রয়েছে ৮,৫০০ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কৃষিমন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় এই বরাদ্দকৃত ভর্তুকিতে সার চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে না। এই জন্য প্রয়োজন হবে ১৮,০০০ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, গত ১১ বছরে শুধুমাত্র বিদ্যুৎখাতেই প্রায় ৫৬,০০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগও অতিরিক্ত চাহিদা পাঠিয়েছে। বাজেটে বিদ্যুৎখাতে ভর্তুকি বরাদ্দ রয়েছে ৯,০০০ কোটি টাকা। তারাও বলেছে, এই টাকায় তাদের চাহিদা মিটবে না। চলতি অর্থবছরের জন্য বিদ্যুতের ভর্তুকির প্রয়োজন হবে কম করে হলেও ১২,০০০ কোটি টাকা। যদি বর্ধিত ভর্তুকি না দেওয়া হয় তবে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। চাপ রয়েছে প্রণোদনা ভর্তুকি বরাদ্দ বৃদ্ধিরও। কারণ রেমিট্যান্সখাতে ২ শতাংশ হারে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে গত একবছর ধরে। এটি বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করার দাবি রয়েছে। এ অবস্থায় অর্থ বিভাগ থেকে পুরো ভর্তুকির বিষয়টি নতুন করে বিন্যাস করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। অর্থ বিভাগ থেকে সামষ্টিক অর্থনৈতিক উইং-কে চলতি অর্থবছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় কী পরিমাণ ভর্তুকি প্রয়োজন হতে পারে তার একটি প্রতিবেদন তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও ঋণখাতে বরাদ্দ রয়েছে ৩৪ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভর্তুকি হিসেবে বিদ্যুৎখাতে রয়েছে ৯,০০০ কোটি টাকা। এলএনজিখাতে(তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) ৬,০০০ কোটি টাকা, সারখাতে ৮,৫০০ কোটি টাকা। খাদ্যখাতে ৫,৫০০ কোটি টাকা এবং অন্যান্যখাতেও বেশ কিছু অর্থ বরাদ্দ রয়েছে।
অন্যদিকে, প্রণোদনা হিসেবে ধরা রয়েছে ১১,৬২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে রপ্তানিখাতে প্রণোদনা ৬,৮২৫ কোটি টাকা। পাটখাতে ৮০০ কোটি টাকা। এবং রেমিট্যান্সখাতে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে আরও ৪,০০০ কোটি টাকা। আগস্ট মাসে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং অধিশাখা থেকে অর্থবিভাগকে বলা হয়েছে- সারের দাম বৃদ্ধির কারণে বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজার দাম অনুসারে চলতি অর্থবছরে রাসায়নিক সার বাবদ ১৮,০০০ কোটি টাকারও বেশি ভর্তুকির প্রয়োজন হতে পারে। এই বিষয়ে সিনিয়র অর্থসচিবের কাছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের কাছে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের থেকে অতিরিক্ত ভতুর্কি বরাদ্দের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। অর্থ বিভাগ থেকে তাদের দাবি পর্যালোচনা করে দেখছে আসলে চলতি অর্থবছরে কী পরিমাণ বর্ধিত ভর্তুকির প্রয়োজন হতে পারে। চলতি মাসের শেষে এই সমীক্ষার কাজ শেষ হবে বলে আমরা মনে করছি। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নেব ভর্তুকি পরিমাণ কী পরিমাণ বাড়ানো যায়।’