রাস মেলা হচ্ছে না, পূজা ও পূণ্যস্নানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের যাবার অনুমতি

0

মনিরুল হায়দার ইকবাল, মোংলা (বাগেরহাট) ॥ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র সংরক্ষণের স্বার্থে আসন্ন রাস পূর্ণিমায় দুবলার চরের আলোরকোলে রাস মেলার অনুমতি দেয়নি বনবিভাগ। এখন থেকে স্থায়ীভাবে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে রাস মেলার আয়োজন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বনবিভাগ পূজা ও পূণ্যস্নানের জন্য সীমিত পরিসরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সেখানে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। এবারের রাসপূজা ও পূণ্যস্নান অনুষ্ঠানে যেতে পারবে না সনাতন ধর্ম ছাড়া অন্য ধর্মের কোনো লোকজন।
আগামী পূর্ণিমার তিথিতে সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের দুবলার চরে শুরু হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী রাস পূর্ণিমার পূজা ও পূণ্যস্নান। সনাতন ধর্মালম্বী ছাড়া দেশী-বিদেশী পর্যটক বা অন্য কোন ধর্মের লোক দুবলার চরে রাস পূর্ণিমার পূজা ও পূণ্যস্নানে যেতে পারবেন না। তিথি অনুযায়ী আগামী ১৭ থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোর কোল নামক স্থানে তিন দিনব্যাপী এ রাস পূর্ণিমার পূজা ও পূণ্যস্নান অনুষ্ঠিত হবে। সুন্দরবনে চোরাশিকারী ও কাঠ পাচারকারীদের ঠেকাতে এসব নৌপথ দিয়ে ১৭ নভেম্বর ভোর থেকে বন বিভাগসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাহারায় পূণ্যার্থীরা বন বিভাগের নির্ধারিত রাজস্ব দিয়ে বৈধ পাশ-পারমিট নিয়ে রাস পূর্ণিমা পূণ্যস্নান ও রাস পূজায় যেতে পারবেন।
ঐতিহ্যবাহী এ রাস উৎসবকে ঘিরে সুন্দরবন উপকুল জুড়ে নেয়া হচ্ছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তীর্থযাত্রীর ছদ্মবেশে হরিণ শিকার বন্ধে বনবিভাগসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এবারও বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, রাস পূর্ণিমায় তীর্থ যাত্রী ও দর্শনার্থীদের নিরাপদে যাতায়াতের জন্য বনবিভাগ ৫টি নৌ পথ নির্ধারণ করেছে। নির্ধারিত ৫টি পথ হলো মোংলা বন্দরের পশুর নদী হয়ে দুবলার চর। শরণখোলার বগি-বলেশ্বর-কচিখালী হয়ে দুবলার চর। বুড়িগোয়ালিনী, কোবাদক থেকে বাটুলা নদী-পাটকোস্টা হয়ে দুবলার চর। কয়রা ও আড়–য়া হয়ে দুবলার চর। নলিয়ান স্টেশন থেকে শিবসা ও মরজান নদী হয়ে দুবলার চর।
সূত্র আরো জানায়, তীর্থযাত্রীরা ১৭ থেকে ১৯ নভেম্বর তিন দিনের জন্য অনুমতি পাবেন এবং বনে প্রবেশের সময় প্রবেশ পথে তিনদিনের জন্য তীর্থযাত্রীদের জনপ্রতি ৫০ টাকা এবং প্রতি ট্রলারের জন্যে আটশ’ টাকা ভাড়া প্রদান করতে হবে। মেলায় প্রবেশকারীদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দিয়ে বন বিভাগের কাছ থেকে অনুমতিপত্র নিতে হবে। যাত্রীরা নির্ধারিত একটি মাত্র পথ ব্যবহারের সুযোগ পাবেন এবং দিনের বেলায় চলাচল করতে পারবেন। তারা বনবিভাগের চেকিং পয়েন্ট ছাড়া অন্য কোথাও নৌকা, লঞ্চ বা ট্রলার থামানোর সুযোগ পাবেন না। পরিবেশ দূষণ করে এমন বস্তু, মাইক বাজানো, পটকা ফোটানো, বিস্ফোরক দ্রব্য ও আগ্নেয়াস্ত্র বহন সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘সুন্দরবনের জীববৈচিত্র সংরক্ষণের স্বার্থে দুবলার চরের আলোরকোলে রাসমেলা করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না আয়োজক কমিটিকে। ফলে রাস পূর্ণিমার পূজা ও স্নান অনুষ্ঠিত হবে। আর পূজা ও স্নানে সনাতন ধর্মী ছাড়া অন্য কোনো ধর্মের লোকজন যেতে দেওয়া হবে না।’ সুন্দরবনের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো বলেন, প্রতি বছরের মত এ বছরও তীর্থযাত্রীদের সুন্দরবন থেকে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহের অনুমতি দেয়া হবে না। তাদের নিজেদের জ্বালানি সংগ্রহ করে নিয়ে যেতে হবে। কোন রকম মাংস বহনও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া তীর্থযাত্রীরা কোন রকম বনজ সম্পদ যাতে বিনষ্ট না করেন সে জন্যও নেয়া হয়েছে কঠোর ব্যবস্থা। মেলাকে কেন্দ্র করে কেউ যাতে বন থেকে হরিণ শিকার করতে না পারে সে জন্য এবারও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয় হয়েছে। হরিণ শিকার রোধে সুন্দরবনের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বনবিভাগের বিশেষ দল কাজ শুরু করবে। এছাড়া বনবিভাগের স্মার্ট পেট্রোল দলও সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে। দুবলার চরে মেলার তিনদিন বনবিভাগের আরো তিনটি টহল দল সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে।
র‌্যাব-৬ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোস্তাক আহমেদ বলেন, দুবলার চরে আমাদের একটি স্থায়ী ক্যাম্প রয়েছে। মেলায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে কোন অবনতি না ঘটে তার জন্যে আমাদের টহল দল সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রদান করবে। এ ছাড়া তীর্থ যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে এ সকল পথে কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, র‌্যাব, বন বিভাগ, পুলিশ ও বিজিবি যৌথভাবে দায়িত্ব পালন করবে। পূণ্যার্থীর ছদ্মবেশে কেউ যাতে হরিণ শিকার করতে না পারে সেজন্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত টহল ও তল্লাশি চলবে।
উল্øেখ্য, দেশে করোনা পরিস্থিতির কারনে গত বছরও দুবলার চরে রাস মেলা হয়নি। হয়েছিল রাস পূর্ণিমার পূজা ও পূণ্যস্নান প্রতিবছর নভেম্বর মাসে রাস পূর্ণিমার তিথীতে বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, বরিশাল ও চট্টগ্রামসহ দেশেÑবিদেশের নানা প্রান্ত থেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার সনাতন পূণ্যার্থীদের সুন্দরবনে আলোরকোলে রাস পূর্ণিমার পূণ্যস্নান ও রাস পূজায় অংশ নিয়ে থাকেন।