পাঁচ ম‌্যাচে পাকিস্তানের ৫ পারফরমার

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ এই পাকিস্তান উড়ছে, ডানা মেলে সবাইকে ছাড়িয়ে। আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান যেন এখন প্রেডিক্টেবল। কী হবে না হবে এখনই বলা যাচ্ছে না, তবে যে ছন্দে দলটি, তাতে ট্রফি তাদের হাতেই দেখা যাচ্ছে। কত ঝড়ঝাপ্টা পেরিয়ে পাকিস্তান অংশ নিয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে, তা অজানা নয় কারোরই। প্রধান কোচ মিসবাহ উল হক ও বোলিং কোচ ওয়াকার ইউনুস বিশ্বকাপ দল ঘোষণার দিন পদত্যাগ করলেন। দল নিয়েও শুনতে হলো সমালোচনা। বিশ্বকাপ প্রস্তুতি হিসেবে নিউ জিল্যান্ড ও ইংলান্ডের বিপক্ষে যে সিরিজ আয়োজনের কথা ছিল, তাও হুট করে স্থগিত। কোনো রকমে ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি কাপে প্রস্তুতি নিয়ে প্রতিযোগিতায় তারা।
বাবর আজমের নেতৃত্বে এই দলকে কতদূর দেখতে পেয়েছিল ক্রিকেট সমর্থকরা! বড়জোর দুই-তিনটি জয়। দলে নেই বড় তারকা। নেই হাল ধরার মতো কেউ। কিন্তু সব হিসাব পাল্টে গেল সুপার টুয়েলভের শুরুতেই। ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপ ব্যর্থতা কাটিয়ে সেই যে শুরু, একে একে নিউ জিল্যান্ড, আফগানিস্তান, নামিবিয়া ও স্কটল্যান্ডকে হারাল। পাঁচে পাঁচ নম্বর (পড়তে হবে জয়) পেয়ে দুই নম্বর গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনালে। শুধু আফগানিস্তান ছাড়া আর কেউই প্রতিরোধ গড়তে পারেনি। অধিনায়ক বাবর পাঁচ ম্যাচে চারটি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। ভাবতে পারেন, দল তার ওপর নির্ভরশীল। তার ব্যাটে চড়ে সাফল্য পেয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। কিন্তু ধারণা ভুল। এই দল যে কারো একার ওপর নির্ভর করে না, তার প্রমাণ পাঁচ ম্যাচেই ৫ জনের ম্যাচসেরা হওয়া। এই পাঁচ জনের মধ্যে কিন্তু নেই বাবরের নাম!
ভারতের বিপক্ষে ১০ উইকেটের জয়ের ম্যাচে সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন শাহীন শাহ আফ্রিদি। পাকিস্তানি পেসার ৩১ রান খরচায় শুরুতেই দুই ওপেনার ছাড়াও বিরাট কোহলির গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নেন। ভারতকে ৭ উইকেটে ১৫১ রানে আটকে দেওয়ায় তারই অবদান বেশি। নিউ জিল্যান্ডকেও আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে পাকিস্তান দুর্দান্ত। এবারো ম্যাচসেরা আরেক পেসার হারিস রউফ। ২২ রান খরচায় ৪ উইকেট নিলেন। ৮ উইকেটে ১৩৪ রান নিউ জিল্যান্ডের। পরে ৫ উইকেট হাতে রেখে দাপুটে জয় পাকিস্তানের। আফগানিস্তান ম্যাচে তো হারতেই বসেছিল পাকিস্তান। ১৪৮ রানের লক্ষ্যে নেমে সহজ জয় একসময় হাতছাড়া হতে বসেছিল ৬ বলে বাবর (৫১) ও মালিকের (১৯) বিদায়ে। সদ্য ক্রিজে নামা আসিফ আলী সব আশঙ্কা দূর করলেন ১৯তম ওভারে চার ছক্কা মেরে। ব্যস ম্যাচ জয়ের নায়ক আসিফের হাতেই উঠল ম্যাচসেরার পুরস্কার। নামিবিয়ার বিপক্ষে তো ঝড় উঠল। কার ব্যাটে? ভারতের বিপক্ষে ব্যাটকে তলোয়ার বানানো মোহাম্মদ রিজওয়ান তুলোধুনো করলেন নবাগত দেশের বোলারদের। ৪২ বলে আসরের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি করলেন, তবে শেষ ওভারে চারটি চার ও একটি ছয় পিটিয়ে রান নিয়ে গেলেন ১৮৯-তে। ৪৫ রানের জয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠে গেল ৫০ বলে ৭৯ রানে অপরাজিত থাকা রিজওয়ানের হাতে। আর স্কটল্যান্ডের বিপক্ষেও পাকিস্তান একই সংগ্রহ করল, মানে ১৮৯ রান। তাতে ৬৬ করে অবদান রাখলেন বাবর। কিন্তু ম্যাচসেরার পুরস্কার এবারো বঞ্চিত তিনি। কারণ ১৮ বলে ফিফটি করে ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দেন শোয়েব মালিক। শেষ ওভারে তিন ছক্কা ও একটি চারে রান মোট ২৬ রান আসে। বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ফিফটি করেন শেষ বলে ছক্কা মেরে, অপরাজিত থাকেন ৫৪ রান করে। এমন দানবীয় ব্যাটিংয়ের পর তার হাতেই উঠেছে ম্যাচসেরার পুরস্কার। বারবার ব্যাট হাতে ফর্মে থেকে টি-টোয়েন্টি র‌্যাংকিংয়ের এক নম্বর ব্যাটসম্যান হলেও ম্যাচসেরা হচ্ছেন না বাবর। আক্ষেপ কী হচ্ছে? মনে হয় না। কারণ দল হিসেবেই তো তারা এসেছে। লক্ষ্য একটি- ট্রফি নিয়ে ঘরে ফেরা।