পুলিশ পাহারায় পণ্যবাহী ট্রাক

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ প্রতি ভোরেই সিলেটে এসে পৌঁছে পণ্যবাহী ট্রাক। দূর-দূরান্ত থেকে আসা এসব ট্রাকের গন্তব্য থাকে সিলেটের পাইকারি আড়ত কাঁচাবাজারে। ধর্মঘটের মধ্যে শনিবার ভোররাতে সিলেটে প্রবেশ করে বেশ কয়েকটি পণ্যবাহী ট্রাক। রাস্তায় কোনো বাধার মুখে না পড়লেও সিলেটে ঢোকার মুহূর্তে বিক্ষুব্ধ পরিবহন শ্রমিকরা হুমায়ুন রশীদ চত্বর সহ কয়েকটি এলাকা ট্রাক চলাচলে বাধা দেয়। তারা কয়েকটি ট্রাক আটকেও রাখে। এ নিয়ে ভোররাতে চলাচলকারী ট্রাকচালকদের সঙ্গে ধর্মঘটে থাকা চালকদের বাক-বিতণ্ডারও ঘটনা ঘটে। কয়েক ঘণ্টা আটকে থাকার পর সকালের দিকে পুলিশের সহযোগিতায় পণ্যবাহী ট্রাক পাইকারি বাজারে ঢুকে। নরসিংদী থেকে সিলেটের কাঁচাবাজারের পথে আসা ট্রাকচালকরা জানিয়েছেন; ধর্মঘটে সব অচল।
এই অবস্থায় কাঁচাবাজারে নিত্যপণ্য নিয়ে আসতে মানবিক কারণেই তারা এসেছেন। কারণ- নিত্যপণ্য না এলে সংকটে পড়বে, দামও বাড়বে। এ কারণে তারা সিলেটে পণ্য নিয়ে এসেছেন। জানান- ধর্মঘটে তাদেরও মত রয়েছে। কিন্তু নিত্যপণ্য নিয়ে ট্রাক দেশের সব বাজারেই ঢুকছে। এদিকে- সিলেটের পরিবহন শ্রমিকদের যানবাহন আটকানোর এই দাপট গতকাল সকাল ১০ টা পর্যন্ত চলে সিলেটে। তারা অবস্থান নিয়েছিল নগরীর প্রবেশমুখ চণ্ডীপুল, হুমায়ুন রশীদ চত্বরসহ কয়েকটি এলাকায়। এসব এলাকায় তারা পণ্যবাহী সহ জরুরি প্রয়োজনে সিলেটে আসা ট্রাক, পিকআপ চলাচলে বাধা প্রদান করে। অনেকে যানবাহন তারা আটকে রাখে দক্ষিণ সুরমার বিভিন্ন স্থানে। জোরপূর্বক যানবাহন আটকে দেওয়ার বিষয়ে পুলিশ কঠোর হলে দুপুরের পর শ্রমিকরা চলে যায়। এরপর বিভিন্ন পণ্য নিয়ে আসা ট্রাক ও পিকআপ নগরে প্রবেশ করতে পারে। সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ময়নুল ইসলাম জানিয়েছেন- ‘আমরা ধর্মঘট ডেকেছি। অবরোধ কিংবা হরতাল না। গাড়ি আটকানোর কোনো নিয়ম নেই। তবে- কিছু কিছু পরিবহন শ্রমিকরা মনে দুঃখে রাস্তায় গিয়ে যানবাহন আটকাচ্ছেন। কারণ ধর্মঘট সবাই একসঙ্গে পালন করলে দাবি আদায় করা সম্ভব হয়। চলাচল করা গাড়ি আটকে চালকদের এইসব বিষয়ে বোঝানো হয়েছে। এর বাইরে আর কিছু নয় বলে জানান তিনি।’ সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) আশরাফ উল্লাহ তাহের সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- পরিবহন ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে কারণে দক্ষিণ সুরমা সহ নগরীর কয়েকটি স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের টহলও অব্যাহত রয়েছে। এদিকে- পরিবহন ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়া সিলেটে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন পর্যটকরা। হাজার হাজার পর্যটক সিলেটে আটকা পড়েছেন। সাধারণত পর্যটকরা সিলেটে বেড়াতে আসেন বৃহস্পতিবার দিন ও রাত। শুক্রবার, শনিবার তারা পর্যটকস্পটগুলো ঘুরে ফের শনিবার দিনেও রাতে ঢাকায় ফিরেন। কিন্তু হঠাৎ করে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সিলেটে পর্যটকরা আটকা পড়েছেন। তারা ঢাকায় ফেরার জন্য গতকাল তীব্র লড়াই করেছেন। কেউ কেউ মাইক্রোবাস রিজার্ভে ভাড়া নিয়ে ঢাকায় ফেরেন। আবার অনেকেই ট্রেনের টিকিটের জন্য দৌড়ঝাঁপ করেন। কিন্তু সিলেটে ট্রেনের টিকিট যেন সোনার হরিণ। দ্বিগুণ টাকা দিয়ে পাওয়া যাচ্ছে না টিকিট। সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার নুরুল ইসলাম গতকাল বিকেলে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- রাতের ট্রেনের সব টিকিট আগেই শেষ হয়ে যায়। যাত্রীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে সন্ধ্যার পর ট্রেনের আরও একটি বগি সংযোগ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিশেষ করে জরুরি প্রয়োজনে ঢাকা সহ দেশে বিভিন্ন এলাকায় গমনকারী যাত্রীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে এমনটি করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। পরিবহন ধর্মঘটের এই নাকাল অবস্থায় সিলেটে মাইক্রোবাসের কিছু কিছু সার্ভিস স্বাভাবিক রয়েছে। নগরীর কদমতলী সহ কয়েকটি এলাকা থেকে মাইক্রোবাস চালকরা যাত্রী পরিবহন করছেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ কয়েকটি এলাকায় তারা যাত্রীদের নিয়ে টানছেন। এতে করে তারা প্রতি যাত্রীর কাছ থেকে ভাড়া নিচ্ছেন এক হাজার টাকা করে। মাইক্রোবাস চালকরা জানিয়েছেন- অনেকেই রয়েছেন চাকরিজীবী, কেউ কেউ বিদেশ যাত্রী। তাদের গন্তব্যে গিয়ে পৌঁছতেই হবে। এ কারণে যাত্রীদের স্বার্থ বিবেচনায় কয়েকজনকে একসঙ্গে মিলিয়ে রিজার্ভ দেখিয়ে যাত্রী নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আর স্বল্প পাল্লার দূরত্বের যাত্রীরা সিএনজি, অটোরিকশা ও বিভিন্ন রাইডের মোটরসাইকেল নিয়ে উচ্চভাড়ায় যাতায়াত করছেন। যাত্রীরাও প্রয়োজনের তাগিদে গলাকাটা ভাড়া দিয়েও গন্তব্যে যাচ্ছেন। সিলেটের পরিবহন মালিকরা জানিয়েছেন- পরিবহন ভাড়া পুনঃনির্ধারণ ছাড়া গাড়ি চালানো সম্ভব নয়। ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামে একটি বাস কিংবা ট্রাকে কম করে হলেও ৫-৬ হাজার টাকার অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যবহার হবে। অতিরিক্ত খরচ হলে একটি ট্রিপে আর লাভই থাকে না। এ কারণে তারা গাড়ি চালানো বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন সরকার থেকে গাড়ি ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করা হলে তারা আগামীকাল বিকালে সিদ্ধান্ত নিয়ে গাড়ি চালাবেন। নতুবা তাদের ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে। সিলেট জেলা পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম জানিয়েছেন- ‘হঠাৎ করে তেলের দাম বাড়ানোর কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে সবার সিদ্ধান্তক্রমে পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।’