গুচ্ছ পরীক্ষা: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবেদন ফি নিয়ে অসন্তোষ

0

পিয়াস সরকার॥ পরীক্ষার নামে ব্যবসা করছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ১২০০ টাকা দিয়ে পরীক্ষা দেয়ার পর কেন ফের অনুষদভিত্তিক আবেদন ফি দিতে হবে? এখন আবেদনের জন্য আমাদের একেকজনের প্রয়োজন ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এই অর্থ কোথা থেকে পাবো? কথাগুলো বলছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থী রকি শেখ। তিনি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নিয়েছেন। পেয়েছেন ৪৮ নম্বর। এখন দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে সময় পার করছেন। কারণ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী প্রতিটি অনুষদে আবেদনের জন্য দিতে হবে ৬৫০ টাকা করে। আসাদ নিলয় নামে শিক্ষার্থী বলেন, এখানে টাকার খেলা হচ্ছে। নিম্নবিত্ত অনেকেই টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারবেন না। আমরা ১২০০ টাকা ফি দিয়ে পরীক্ষা দিয়েছি। ধরেন আমি মোটামুটি একটা নম্বর পেয়েছি। এখন আমাকে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদে অ্যাপ্লাই করতে হবে। একেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি যদি ২ হাজার টাকার আবেদন করি তবে আমাকে ১০ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে লাগবে ২০ হাজার টাকা। এত টাকা জোগাড় করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘবে দেশে প্রথমবারের মতো ২০টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। যাতায়াতের ভোগান্তি লাঘব হলেও নানা কারণে অসন্তোষ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষার ফি বাড়িয়ে ১২০০ টাকা করা, পছন্দের কেন্দ্রে পরীক্ষার সিট না পড়া, মানবিক বিভাগে ফলে অসন্তোষ। এ ছাড়াও বিভাগ পরিবর্তনকারী ‘ঘ’ ইউনিট না থাকা ও সিলেকসন প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে হয়েছে আন্দোলন, মানববন্ধন এমনকি আদালতেও গড়িয়েছে বিষয়টি। এ ছাড়াও দ্বিতীয়বার পরীক্ষার সুযোগ না থাকাতে আছে হতাশা। ৩রা নভেম্বর যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। আর এরপর ফের অসন্তোষ দেখা দেয়। এতে দেখা যায়, ৭টি অনুষদের জন্য আবেদন চাওয়া হয়েছে। ৯৩০টি আসনের বিপরীতে বিভাগ রয়েছে ২৫টি। প্রতিটি অনুষদের জন্য আলাদা অত্যাবশ্যকীয় শর্তাবলীর পাশাপাশি করা হয়েছে আবেদন ফি। এতে বলা হয়, এসএসসি/সমমান ও এইচএসসি/সমমানের পরীক্ষার প্রাপ্ত জিপিএ’কে ২ দ্বারা গুণ করা হবে। যেকোনো ইউনিটের ফলাফল প্রাপ্তরা কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত বিভাগে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। গুচ্ছ পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের জন্য রাখা হয়নি কোনো পাস-ফেল মার্ক। অর্থাৎ সকলেই আবেদন করতে পারবেন ভর্তির জন্য। এখন প্রশ্ন হচ্ছে সকল শিক্ষার্থীই যেন আবেদন করতে পারেন সেজন্যই কি পাস-ফেল উঠিয়ে দেয়া হলো? এমনটাই বলেন আফজাল খান নামে এক শিক্ষার্থী।
আরেক শিক্ষার্থী আফসানা মিমি বলেন, আমার মার্ক অনেক কম। এখন আমি চাইবো ভর্তি হতে। এখন আমার ২০টা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে প্রয়োজন হবে ২০-৩০ হাজার টাকার বেশি। তারপরও যে ভর্তি হতে পারবো তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাহলে গুচ্ছ ভর্তি কমিটি কি ইচ্ছা করেই এই নীতি চালু করলো, যাতে অধিক অর্থ গুনতে হয়? আবার এইচএসসি’র ফল দেখে যদি ভর্তি নেয় তাহলে পরীক্ষা নেয়ার কি দরকার ছিল? আরিফুল ইসলাম নামে এক ভর্তি প্রত্যাশী শিক্ষার্থী বলেন, আমি পেয়েছি ৩৮ নম্বর। যদিও ৪১ পাওয়ার কথা ছিল। বাসায় এসে প্রশ্ন মিলিয়ে দেখেছি। এখন এই নম্বর নিয়ে আমি আবেদন করবো নাকি চুপ করে বসে থাকবো? আমার নম্বর কম হওয়ায় স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সব অনুষদে আবেদন করতে হবে। আমি গরিব ঘরের ছেলে। এখন ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ করে কীভাবে আবেদন করবো?
গুচ্ছ বিভাগ পরিবর্তনকারী ইউনিটের জন্য আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এর অন্যতম একজন মোহাম্মদ রাকিব বলেন, গুচ্ছে বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞানের ভিত্তিতে পরীক্ষা না হওয়ায় এক লাখ শিক্ষার্থী পরীক্ষার সুযোগ পাননি। এসএসসি ২০১৬ সালের শিক্ষার্থীদের প্রথমে বলা হয়েছিল পরীক্ষার সুযোগ দেয়া হবে। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের বাদ দেয়া হয়। এই শিক্ষার্থীরা গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা না থাকলে কমপক্ষে ৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার সুযোগ পেতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনে রাখছে ৬৫০ টাকা করে। এভাবে কোটি কোটি টাকা আয়ের পাঁয়তারা করছেন তারা। গুচ্ছ কমিটি কতোটা শিক্ষার্থী বান্ধব হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। রাকিব আরও বলেন, এখন দুটো পথ খোলা রয়েছে। অভিযোগ এবং যেসব সমস্যা রয়েছে তা সমাধান করা এবং পুনরায় ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা। আর দ্বিতীয় পথটি হচ্ছে গুচ্ছ পদ্ধতি বাতিল করা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, গুচ্ছের সিদ্ধান্ত ছিল তিনটি ভাগ করে পরীক্ষা নিয়ে স্কোর দেয়া। গুচ্ছ পরীক্ষা সেটি করেছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের মতো করে পরিচালনা করবে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ও গুচ্ছ ভর্তি কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এগুলো স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয় ঠিক করবে। তারা কীভাবে শিক্ষার্থী নির্বাচন করবেন। এই বিষয়ে গুচ্ছের কমিটির সদস্য হিসেবে আমার কোনো মন্তব্য নেই। আমাদের দায়িত্ব ছিল শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের একটা সমন্বিত পরীক্ষার মাধ্যমে একটা স্কোর দেয়া। সেটি আমরা করেছি। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা এখন সিদ্ধান্ত নেবেন তারা একটা না অধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন বিষয়ে আবেদন করবেন।