লোকসমাজের প্রতীষ্ঠাবার্ষিকী সংখ্যা-১

0

আগামী নির্বাচন কেমন হবে
সৈয়দ আবদাল আহমদ

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ ফেব্রুয়ারি ২০২২ শেষ হচ্ছে। ফলে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে ক্ষমতাসীন সরকার সার্চ কমিটি করতে যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনের আরো দুই বছর বাকি। কিন্তু এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডেকে দলকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন ও সরকারি দলের নির্বাচনী প্রস্তুতির প্রেক্ষাপটে রাজনীতির মাঠে শুরু হয়েছে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা। দেশের ৫৪ বিশিষ্ট নাগরিক এক যুক্ত বিবৃতিতে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন। এ বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এর আগেও যেভাবে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে, এবারো সেভাবেই হবে। সার্চ কমিটি গঠন করে রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের সুপারিশ পাঠানো হবে। সেই তালিকা থেকে রাষ্ট্রপতি নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সদস্যদের নিয়োগ দেবেন। আগামী নির্বাচন নিয়ে বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদা, কমিশনার মাহবুব তালুকদার ও কবিতা খানমও নানা মন্তব্য করেছেন। বিশিষ্টজনদের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি আবদুল মতিন ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান তাদের নির্বাচনী অভিমত তুলে ধরেছেন। দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।


প্রশ্ন হচ্ছে, আগামী নির্বাচনটি কেমন হবে? কারণ নির্বাচন নিয়ে দেশের মানুষের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। গণমাধ্যমে নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের যে মন্তব্য প্রকাশিত ও প্রচারিত হচ্ছে তাতে দেখা যায়, তারা স্পষ্ট করেই বলছেন, তাদের এ নিয়ে তেমন কোনো মাথা ব্যথা নেই; কারণ যেখানে ভোট দেয়ারই সুযোগ নেই, সেখানে ভোট নিয়ে আলোচনা নিরর্থক বলেই তারা মনে করেন। বিশ্ব গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে বিবিসি ১৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোট দিয়েছিলেন কয়েকজন ভোটারের ভাবনা কী জানতে চেয়েছিল। অনেকেই বলেছেন, তারা এখন আর ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ পান না। গৃহিণী সালসাবিল বলেন, যদি আমি ঠিকঠাক মতো ভোটটি দিতে পারতাম তা হলে কোন সরকারকে নির্বাচন করা উচিত সে জিনিসটি অন্তত ভোট দিয়ে আমি বোঝাতে পারতাম। যেহেতু আমি ভোটই দিতে পারছি না, আমার মতামতের তো কোনো গুরুত্ব নেই। শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান ঐশী বলেন, আমি যখন নাম এন্ট্রি করলাম একজন লোক এসে বলল, আমার সামনে ভোট দিতে হবে। অবশ্যই এ তৎপরতায় আমি মর্মাহত হয়েছি। আমি চাই আমার গণতান্ত্রিক যে অধিকার সেটি চর্চা করতে। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতার কারণে আমি দ্বিতীয়বার আবার ভাবব, আগামীতে ভোট দিতে যাবো কি না। যদি ভোট দেয়ার ব্যাপার থেকে উপসংহারে আসতে চাই, সে ক্ষেত্রে বলব, আমি গণতন্ত্র চর্চা করতে পারছি না। শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন মাহি বলেন, গণতন্ত্র সম্পর্কে বই পড়ে যতটা না উৎসাহিত হই, বাস্তবে বা মাঠে চর্চা দেখে ততটা হতাশ হই। শিক্ষার্থী মরিয়ম আজিজ মৌরিন বলেন, শুধু রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ভোট দিতে পারছি না, গণতন্ত্র চর্চা করতে পারছি না, ব্যাপারটি এমন নয়। আমরা ব্যক্তিগত জীবনেও কোনো ক্লাব বা সংগঠনে সে ভোটাধিকার চর্চাটা পাচ্ছি না। কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি এসে সে ভোটটি দিয়ে দিচ্ছেন। ব্যক্তি হিসেবে যে মতামত প্রকাশ করব; সে জায়গাটি পাচ্ছি না। ব্যবসায়ী মাহমুদুল হাসান বলেন, ভোটের ক্ষেত্রে দেশে এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, মনে হয় না আর ভোট দিতে যাবো। তারা আরো বলেন, গণতন্ত্রে প্রথম যে জিনিসটি সেটি হচ্ছে ভোটাধিকার। যে দিন সেই ব্যক্তিস্বাধীনতাটা পাবো, নিজের ভোট নিজে দিতে পারব, সে দিন হয়তো বা আমার ভোট দেয়ার ইচ্ছা তৈরি হবে। গণতন্ত্র চর্চার প্রথম যে ধাপ, সেখানেই আমি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছি এবং আমাকে থামিয়ে দেয়া হচ্ছে। তখন আমরা সবাই চুপ করে থাকতে থাকতে আরো চুপ হয়ে যাই। প্রতিবাদ করারও উপায় নেই। মামলার ভয়, জেলে যাওয়ার ভয় এবং আরো নানা ধরনের ভয়। এক কথায় বলতে গেলে বলা যায়, দেশে গণতন্ত্র হারিয়ে গেছে। নির্বাচনী ব্যবস্থা বলতে এখন আর কিছু নেই। চলছে ভয়ের শাসন।
ওয়ান-ইলেভেন সরকারের আমলে ২০০৮ সালে ২৯ ডিসেম্বর দেশে যে নির্বাচনটি হয়েছিল, সেটিও ছিল একটি বিতর্কিত নির্বাচন। কিন্তু জরুরি অবস্থার অবসানে গণতন্ত্রের স্বার্থে সে নির্বাচনটি মানুষ মন্দের ভালো হিসেবে মেনে নিয়েছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর বর্তমান ক্ষমতাসীনদের অধীনে যে দু’টি নির্বাচন হয়, তা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রশ্নবিদ্ধ, কলঙ্কিত নির্বাচন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটি ছিল ভোটহীন, ভোটারহীন ও প্রার্থীহীন একটি নির্বাচন। এ নির্বাচনে ভোট ছাড়াই সরকারি দলের ১৫৪ জন প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করে দেয়া হয়। এসব আসনের চার কোটি ৫৩ লাখ ভোটারকে ভোটদানে বঞ্চিত করা হয়। তারা ভোটকেন্দ্রেই যেতে পারেননি, বাকি ১৪৬টি আসনে গড়ে ৫ শতাংশ ভোটও পড়েনি। সে দিন নির্বাচন কেন্দ্রগুলোতে কুকুর-বিড়াল ঘুমিয়ে থাকার দৃশ্য দৈনিক পত্রিকার প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছিল। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনটি ছিল আরো বাজে; কারণ ওই নির্বাচনে দিনের ভোট রাতেই হয়ে গিয়েছিল। কেন্দ্রে কেন্দ্রে ৩০ ডিসেম্বরের আগের রাতে ক্ষমতাসীনদের ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঢুকে ব্যালটে সিল মেরে বাক্সভর্তি করে রেখেছিল, যা ভোটের দিন গণনা করে ক্ষমতাসীন প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এরপর স্থানীয় পর্যায়ের যেসব নির্বাচন হয়, সেগুলোও একই কায়দায় হয়।
তাই প্রশ্ন উঠেছে দুই বছর পর যে নির্বাচনটি হবে, সেটি কেমন নির্বাচন হবে? দেশে ভোটারবিহীন নির্বাচন এবং দিনের ভোট রাতে হওয়ার নজির সৃষ্টি হয়েছে। আর আগামী নির্বাচনটি যে ‘ইভিএম জালিয়াতি’ করে হবে, তা এরই মধ্যে স্পষ্ট হয়ে গেছে; কারণ এরই মধ্যে ইভিএম জালিয়াতি করে নির্বাচনের বেশ কয়েকটি মহড়া অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে। ইভিএম জালিয়াতির পাশাপাশি আর কোনো খারাপ নজির সৃষ্টির যে ছক আঁকা হবে না, তাও বলা যায় না। সাধারণ মানুষের এখন বদ্ধমূল ধারণা হয়ে গেছে, এ সরকারকে অন্তত ভোটে কিংবা নির্বাচনে সরানো যাবে না; কারণ নির্বাচন জালিয়াতির সব কলাকৌশল তাদের জানা। ফলে বর্তমান নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় মানুষের আস্থা নেই। তারা ভোটবিমুখ হয়ে পড়েছেন; কারণ এখন যে নির্বাচন হচ্ছে তা নির্বাচন নয়, প্রহসন। একপ্রকার নির্বাচন নির্বাচন খেলা। গত ২২ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া নির্বাচন নিয়ে চলমান অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনের কারণে ভোটারদের নির্বাচনবিমুখতা গণতন্ত্রের জন্য অশনি সঙ্কেত। তার বক্তব্যে স্বীকারোক্তি আছে যে, ভোটাররা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। ফলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন হওয়ায় ভোটাররা এখন ভোটবিমুখ। কৌতূহলোদ্দীপক বক্তব্য দিয়েছেন আরেক নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম। তিনি বলেছেন, নির্বাচন কমিশন প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন চায় না। তার কথা যদি সত্যি হয়, তা হলে প্রশ্ন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনকে তিনি সার্টিফাই করেছিলেন কেন? প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদাও গত ২৯ সেপ্টেম্বর বলেছেন, এখন সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নতুন কমিশন হওয়া উচিত এবং নির্বাচন প্রশ্নে সব দলের রাজনৈতিক সমঝোতা হওয়া প্রয়োজন। নির্বাচনব্যবস্থার সর্বনাশ সাধনের জন্য বিপুলভাবে সমালোচিত এ ব্যক্তির ওই বক্তব্যও কি রসিকতা নয়? আসলে এখন তো তার যাওয়ার সময় হয়েছে। প্রোটেকশন তো আর পাওয়া যাবে না। এ জন্য এসব বক্তব্য বের হচ্ছে। সম্প্রতি সিইসি নুরুল হুদা রাশিয়ায় গিয়ে নির্বাচনপদ্ধতি দেখে এসেছেন। রাশিয়ার নির্বাচনব্যবস্থা কী? যিনি সরকারে আছেন অর্থাৎ ভ্লাদিমির পুতিন একবার হন প্রেসিডেন্ট, আরেকবার প্রধানমন্ত্রী। একই লোক এক মেয়াদে হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট, অন্য মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী। মজাই না? আর এ পদ্ধতি দেখে এসেছেন নুরুল হুদা। তামাশা ছাড়া একে আর কী-ই-বা বলা যায়? গত ১ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, দেশে নির্বাচন নির্বাচন খেলা আর হতে দেয়া হবে না। আগামী নির্বাচন হতে হবে অবশ্যই নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীন এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায়। যদি নির্বাচনকালে নিরপেক্ষ সরকার না থাকে, আমরা সে নির্বাচন মেনে নেব না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এখন চেষ্টা করছে আবার ক্ষমতায় আসতে ওই ধরনের একটি নির্বাচন দিতে, যে নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারবে না। এবার ইভিএমকে তারা হাতিয়ার বানাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রশাসন, বিচার বিভাগ, রাষ্ট্রযন্ত্র এমনকি গণমাধ্যমকেও নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে এ সরকার। এভাবে দলে পিষে তারা ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করছে। ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর আইন করে, ত্রাসের সৃষ্টি করে পুরো দেশ, জনগণকে পায়ের তলে দাবিয়ে রেখে ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে চাচ্ছে তারা। সেই খেলা বন্ধ করতে হবে। ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এমপি বলেছেন, আওয়ামী লীগকে আমরা আর ওয়াকওভার দেবো না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? নির্বাচন ছিনিয়ে নেয়ার অপতৎপরতা থামাতে হলে তো জনপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সেই প্রতিরোধ কি বিএনপি গড়ে তুলতে পারবে। এখন পর্যন্ত এর লক্ষণ তো দেখা যাচ্ছে না। ড. আকবর আলি খান এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বিপন্ন গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হলে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ব্যাপারে এক সাক্ষাৎকারে বিচারপতি আবদুল মতিন সুন্দরভাবে তার মতামত তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, যে জাতি ইংরেজকে তাড়িয়েছে, পাকিস্তানি বর্বর সেনাবাহিনীকে তাড়িয়েছে। সে জাতি যেকোনো জঞ্জাল তাড়াতে পারবে, যদি চায়। আমরা পেরেছি, আমরা পারবÑ এটি হতে হবে প্রত্যয়। ঐক্যবদ্ধভাবে ভোট রক্ষার ফর্মুলা বের করতে হবে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় যাতে গ্রহণযোগ্যভাবে আগামী নির্বাচন হতে পারে, সে জন্য সরকারকে বাধ্য করতে সে রকম আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টিরও ব্যবস্থা করতে হবে।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাতীয় প্রেস ক্লাব


আর্থিক খাতে জালিয়াতি
সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা

বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিচ্যুতির কারণেই দেশে অপরাধপ্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। রাষ্ট্রাচারের প্রতিটি ক্ষেত্রেই দুর্নীতি, অনিয়ম ও লাগামহীন স্বেচ্ছাচারিতা নিয়মে পরিণত হয়েছে। আর্থিক খাতগুলোও এ থেকে মুক্ত থাকতে পারেনি। বিশেষ করে বড় ধরনের ঋণ জালিয়াতির কবলে পড়েছে ব্যাংকসহ দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। আইনের দুর্বল প্রয়োগ ও সুশাসনের অভাবেই ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বড় অঙ্কের ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের দৌরাত্ম্য আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মামলা হলেও সেগুলোর তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে জড়িতরা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। জালিয়াত চক্রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় নতুন করে ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ঋণ জালিয়াতি সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনায় ১৩৫টি মামলা করা হয়েছে। কিন্তু মামলাগুলো নিষ্পত্তিতে উলে¬খযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই। এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা তদন্ত করে দ্রুত মামলা দায়ের ও নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। ২০১০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নয়টি গ্রুপ, দু’টি ব্যাংক ও এক ব্যক্তির নামে ৩১ হাজার কোটি টাকার জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রয়েছে হলমার্ক গ্রুপ, বিসমিল¬াহ গ্রুপ, ক্রিসেন্ট গ্রুপ, অ্যানন টেক্স গ্রুপ, এসএ গ্রুপ, সিটিসেল, সানমুন গ্রুপ, নূরজাহান গ্রুপ, ইমাম গ্রুপ এবং পিকে হালদার। এ ছাড়াও ব্যাংক জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে দু’টি। ব্যাংক দু’টি হচ্ছে বেসিক ব্যাংক ও ফারমার্স ব্যাংক। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দাবি করেছে, মামলায় বিচার ত্বরান্বিত করতে সার্বিক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু দুদকের দাবি, কথামালার ফুলঝুরির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকেও বিভিন্ন ঋণ জালিয়াতির ঘটনা তদন্ত করে দুদকে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। দুদক সেগুলোর আলাদা আলাদা ঘটনা পুনরায় অনুসন্ধান করে মামলা করছে। ঋণ জালিয়াতির বিষয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৩৫টি মানিলন্ডারিং মামলার অনুসন্ধান করেছে দুদক। এর মধ্যে ৩৫টির কাজ শেষে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। দুদক সংশি¬ষ্টরা বলছেন, ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অনেক মামলায় আসামিরা সাজা পেয়েছেন। কিন্তু মামলার সংখ্যা ও অপরাধ অনুযায়ী সাজার ঘটনা মোটেই কাক্সিক্ষত পর্যায়ের নয়।
সূত্র জানায়, হলমার্ক গ্রুপ সোনালী ব্যাংকসহ ২৬টি ব্যাংক থেকে চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। টাকা আদায়ে অর্থঋণ আদালতে মামলা করেছে ব্যাংক। এদিকে জালিয়াতির ঘটনায় অনুসন্ধান করে ২০১৩ সালে ৪০টি মামলা করে দুদক। এর মধ্যে ফান্ডেড বা সরাসরি ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় ৩৮টি এবং নন-ফান্ডেড বা পরোক্ষ ঋণের জন্য দু’টি। ২০১৪ সালের বিভিন্ন সময়ে ৩৮ মামলার চার্জশিট দেয় সংস্থাটি। এগুলোতে হলমার্ক গ্রুপের এমডি তানভীর মাহমুদ, তার স্ত্রী ও গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, তানভীরের আত্মীয় ও গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমেদ এবং সোনালী ব্যাংকের তৎকালীন শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলার আগেই বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করে দায়ী ৩৫ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে। প্রায় আট বছরে ৪০টি মামলার মধ্যে নিম্ন আদালতে রায় হয়েছে মাত্র একটি মামলার। এতে সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ কয়েকজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছেন-হলমার্ক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান প্যারাগন নিট কম্পোজিটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম রাজা, পরিচালক আবদুল¬াহ আল মামুন ও সোনালী ব্যাংকের হোটেল রূপসী বাংলার কর্মকর্তা সাইফুল হাসান।
বাকি মামলাগুলো এখন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এসব মামলায় প্রায় এক হাজারের বেশি সাক্ষী রয়েছে। মামলার শুনানির দিন সাক্ষীদের আদালতে হাজির করা সম্ভব হচ্ছে না বলে বিচারকার্য বিলম্বিত হচ্ছে বলে সংশি¬ষ্টরা দাবি করছেন। দায়েরকৃত মামলায় হলমার্কের চেয়ারম্যান, এমডি ও জিএমসহ কিছু ব্যাংক কর্মকর্তা জেলে রয়েছেন। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডি হুমায়ূন কবীরসহ অনেকে পলাতক। হলমার্কের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামের বিরুদ্ধে করা একটি মামলায় তিন বছরের জেল হয়েছে যা পর্বতের মুষিক প্রসব বলেই মনে করা হচ্ছে। জানা গেছে, হলমার্ক গ্রুপের নন-ফান্ডেড এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনার তদন্ত করছে দুদক। তদন্ত শেষ হলে আরো মামলা হবে বলে জানা গেছে। তবে তদন্ত কবে নাগাদ শেষ হবে বা আদৌ শেষ হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ-সংশয় দেখা দিয়েছে। ফলে মামলাগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
বিসমিল¬াহ গ্রুপ ২০১৩ সালে পাঁচটি ব্যাংক থেকে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পুরো অর্থই বিদেশে পাচার করেছে। এসব ঘটনায় দুদক ১২টি মামলা করেছে। সবক’টি মামলার আসামি গ্রুপের এমডি খাজা সোলেমান চৌধুরী। এর মধ্যে একটির রায় হয়েছে। এতে গ্রুপের চেয়ারম্যান নওরিন হাসিব, ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাজা সোলেমান চৌধুরীসহ ৯ জনের ১০ বছর করে কারাদণ্ড হয়েছে। একই সাথে দ্বিগুণ অর্থ জরিমানা করা হয়েছে। এর পরিমাণ ৩০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। বাকি মামলাগুলো বিচারাধীন থাকলেও আশাবাদী হওয়ার মতো কোনো অগ্রগতি নেই।
একটি সরকারি ব্যাংকে ক্রিসেন্ট গ্রুপের তিন হাজার ৯০০ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও তাদের সরকারি বিকল্প নগদ সহায়তাসহ পরোক্ষ ঋণ রয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ৭৪৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গ্রুপের কর্ণধার এম এ কাদেরসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা দায়ের করে দুদক। বাকি অর্থের ব্যাপারে অনুসন্ধান চলছে বলে দাবি করা হলেও তা নামকাওয়াস্তে। অ্যানন টেক্স গ্রুপের নামে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা খেলাপি হয়ে পড়েছে। এসএ গ্রুপ ১৬টি ব্যাংক থেকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি করেছে। এর দায়ে গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংক ও দুদক ১৪টি মামলা করেছে। চেক জালিয়াতির দায়ে মামলা করেছে ন্যাশনাল ব্যাংক।
ঋণ জালিয়াতির দায়ে সাউথইস্ট ও ন্যাশনাল ব্যাংক মিলে আরো ব্যাংক পাঁচটি মামলা করেছে। ব্যাংক এশিয়ার একটি মামলায় এসএ গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন আলমকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। পরে তিনি জামিনে বের হয়েছেন। ওইসব মামলা বিচারাধীন থাকলেও আশাবাদী হওয়ার মতো অগ্রগতি নেই।
এবি ব্যাংকের গ্যারান্টিতে বেসরকারি খাতের ১২টি ব্যাংক থেকে সিটিসেল এক হাজার ২০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এসব ঋণের পুরোটাই এখন খেলাপি। এর মধ্যে একটি ঘটনায় ২০১৭ সালে ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। সানমুন গ্রুপের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় ২০১৬ সালে গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ আটজনের বিরুদ্ধে দুদক একটি মামলা করেছে। ১০৮ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ওই মামলা করা হয়। এ ছাড়া ঋণের টাকা আদায়ে অগ্রণী ব্যাংকও একটি মামলা করেছে। বেসিক ব্যাংক থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ঋণ। এর কিছু নবায়ন করা হলেও ফের খেলাপি হয়ে গেছে। এসব কারণে বেসিক ব্যাংকের জালিয়াতির পুরো অর্থই এখন খেলাপি।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ৫৬টি এবং পরের বছর আরো পাঁচটি মামলা করে দুদক। ছয়টি মামলার বিচারের রায় হয়েছে। এতে ৩৬ ব্যাংক কর্মকর্তাসহ ৬৬ জনের জেল-জরিমানা হয়েছে। বাকিগুলো বিচারাধীন। চট্টগ্রামের নূরজাহান গ্রুপ ২২টি ব্যাংক থেকে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে যার পুরোটাই এখন খেলাপি। ২০১৪ সালে সোনালী ব্যাংক চেক জালিয়াতির একটি মামলা করেছে গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এমডির বিরুদ্ধে। ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ কমার্স ব্যাংক একটি মামলা করেছে। ২০১৬ সালে চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তিনি জামিনে বের হন। অগ্রণী ব্যাংকের ২৫৯ কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে ২০১৯ সালে দুদক নূরজাহান গ্রুপের এমডি-চেয়ারম্যানসহ তিন ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। বেসরকারি খাতের ফারমার্স ব্যাংকের পরিচালকরা ৫০০ কোটি টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন। ওইসব ঋণ এখন খেলাপি। ২০২০ সালে দেড় কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।
২০১৯ সালে ৬০ কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে ফারমার্স ব্যাংকের অডিট কমিটির চেয়ারম্যান বাবুল চিশতির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তিনটি মামলায় চার্জশিট দেয়া হয়েছে। আরো ১৩টির তদন্ত চলছে। একটি সরকারি ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জ করপোরেট শাখা ও মহিলা শাখায় জালিয়াতির মাধ্যমে নেয়া ঋণের প্রায় ৮০০ কোটি টাকা আদায়ে ব্যাংক মামলা করেছে। পিকে হালদার একটি ব্যাংক ও পাঁচটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত বিভিন্ন মহল থেকে ৩০টি মামলা করা হয়েছে। সোনালী ব্যাংকের রমনা করপোরেট শাখা থেকে কয়েকটি গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান এক হাজার ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। এর বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংক মামলা করেছে। ঘটনার অনুসন্ধান ও তদন্ত চলছে বলে দাবি করা হলেও তা দায়সারা গোছের বলেই মনে করছেন সংশি¬ষ্টরা। ফলে ঋণ জালিয়াতির তুঘলকি কাণ্ড কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না।
মূলত, ঋণ জালিয়াতদের কাছে দেশের ব্যাকিং খাতসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকটাই জিম্মি হয়ে পড়েছে। ঘটনা ঘটার পর সংশি¬ষ্টদের বিরুদ্ধে দায়সারা গোছের মামলা দেয়া হলেও অপরাধীদের শাস্তির হার অপরাধের তুলনায় খুবই প্রতীকী। ফলে ব্যাংকিংসহ আর্থিক খাত অনেকটাই অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় বিচারাধীন মামলাগুলো সক্রিয় করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় না আনা গেলে ঋণ জালিয়াতদের দৌরাত্ম্য কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না; শৃঙ্খলা ফিরে আসবে না আর্থিক খাতেও।


বিড়ালের আদিখ্যেতা, বাঘ হওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা
গোলাম মাওলা রনি

বিড়াল সম্পর্কে আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা একেবারেই কম। আমি নিজে যেমন বিড়াল পছন্দ করি না তেমনি বিড়ালরাও সম্ভবত আমাকে তেমন একটা পছন্দ করে না। বিড়ালরা আমাকে কেন পছন্দ করে না সেটি আমি বলতে পারব না বটে; তবে আমি কেন এদের পছন্দ করি না সেটি বলতে পারি। এই প্রাণীটি সম্পর্কে সর্বপ্রথম আমার বিরক্তির উদ্বেগ হয় শৈশবকালে। আমাদের বাড়িতে একটি বেহায়া বিড়াল ছিল, যাকে ফরিদপুরের আঞ্চলিক ভাষায় বলা হতো ছোঁচা বিলাই। প্রমিত বাংলায় ছোঁচা শব্দের অর্থ লোভী। তবে সাধারণ লোভ এবং আঞ্চলিক শব্দ ছোঁচার প্রতিশব্দ লোভ এক জিনিস নয়। সাধারণ লোভের বৈশিষ্ট্য হলো- লোভ বেশির ভাগই মনের মধ্যে থাকে। কিছু লোভের কারণে জিহ্বায় লালা চলে আসে এবং শরীরে উত্তেজনা দেখা দেয়। অন্য দিকে কিছু লোভের কারণে জিহ্বা বের হয়ে আসে এবং লোভনীয় বস্তু লেহন না করা পর্যন্ত জিহ্বা মুখের মধ্যে ঢোকে না। আপনি যতই লাথি-গুঁতো, কিল-ঘুষি মারুন অথবা অপমান করুন তাতে লোভের জিহ্বায় কিছুই হবে না- ওটি তার লেহনকর্ম করেই ছাড়বে এবং বিড়ালের লোভ যখন এই পর্যায়ে পৌঁছে তখনই কেবল সেটিকে ছোঁচা বিলাই বলা হয়ে থাকে।
আমাদের বাড়ির ছোঁচা বিলাইয়ের যন্ত্রণায় আমরা যারপরনাই অস্থির হয়ে পড়েছিলাম। রান্না করা খাবারে মুখ দেয়ার সব অপকৌশল সে জানত। ফলে আমাদের খাবার যে বিড়াল এঁটো করে দিত সেই সন্দেহ নিয়েই আমরা খাবার খেতাম। অন্য দিকে তার দুর্বৃত্তপনাও ক্রমেই বেড়ে চলেছিল। খাবারের পে¬ট থেকে মাছ-গোশত ছিনতাই করা, শিশুদের ক্যাচ ক্যাচ শব্দ করে ভয় দেখানো এবং তাদের খাবার কেড়ে নেয়া ছাড়াও নির্বিচারে সবাইকে আঁচড় দিয়ে আহত করা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। কোনো শাসন, লাঠিপেটা অথবা অন্য কোনো আঘাতে তাকে কাবু করা যাচ্ছিল না। এ অবস্থায় তাকে মারাত্মক আহত করা বা মেরে ফেলা ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না। কিন্তু এটা করা অসম্ভব ছিল। কারণ প্রাণী হত্যা করে মহাপাপী হয়ে দোজখে যাওয়ার ঝুঁকি নেয়ার মতো কোনো লোক আমাদের বাড়িতে ছিল না। উলি¬খিত অবস্থায় বিড়ালটিকে বস্তায় ভরের সাত-আট মাইল দূরের কোথাও ফেলে দিয়ে আসার জন্য আমার ছোট কাকাকে দায়িত্ব দেয়া হলো। তিনি নির্দিষ্ট দিনে কাজটি করলেন এবং অত্যন্ত খুশি মনে বাড়ি ফিরে এলেন। পরের দিন দুপুর বেলায় আমরা সবাই খোশ মেজাজে মধ্যাহ্ন ভোজনে যখন ব্যস্ত ছিলাম তখন লক্ষ্য করলাম যে ছোঁচা বিলাইটি ফিরে এসেছে। আমার শৈশবের এই স্মৃতির কারণে আমি বিড়াল থেকে নিজেকে তেত্রিশ গজ দূরে রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ১৯৯৪ সালের পর আমি আর সেটি পারিনি। কারণ আমার বড় সন্তানটি প্রচণ্ড বিড়ালভক্ত হয়ে জন্ম নিলো এবং শিশুকাল থেকেই বিড়াল সান্নিধ্য তার জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়ল। ফলে পুত্রের আবদারে আমি বিড়াল কিনে আনতে বাধ্য হলাম। আমার স্ত্রীর আমার মতোই বিড়ালের বিষয়ে কোনো আগ্রহ ছিল না। কিন্তু পুত্রসন্তানের আগ্রহের কারণে তিনি বিড়ালের যতœআত্তি করতেন এবং বিড়ালের বিষ্ঠা পরিষ্কার করতেন। এভাবেই ২০০৫ সাল অবধি চলল। ইতোমধ্যে আমার বড় পুত্র বয়সে বালকে উন্নীত হলো এবং কন্যাটি শিশু থেকে নাবালিকাতে পরিণত হলো। তারা লেখাপড়া বাদ দিয়ে বিড়াল নিয়ে বেশি সময় কাটাতে ভালোবাসত। ফলে আমার স্ত্রী একদিন রাগ করে আমাকে একখানা কড়া নোটিশ দিলেন। তিনি বললেন- তোমার আদারের ছেলে-মেয়েদের বলে দাও- আমি আর বিড়ালের গু পরিষ্কার করতে পারব না। স্ত্রী মহোদয়ার রেড অ্যালার্টটি আমি পুত্র-কন্যাকে জানালাম। তারা তখন মহাচিন্তায় পড়ে গেল। কিভাবে নিরাপদে বিড়ালের বর্জ্য পরিষ্কার করা যায় তা নিয়ে বালক পুত্র এবং নাবালিকা কন্যা বহু চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করে এক উপায় বের করল।
তারা গোপনে নিউ মার্কেট থেকে কালো চশমা এবং রাবারের হাত মেজো কিনে আনাল। তারপর সেই চশমা পরে এবং মোজা হাতে দিয়ে যেই না বিড়ালের গুয়ের ওপর হাত রাখল ওমনি ভাইবোন একসঙ্গে ভক করে বমি করে দিলো। ফলে আমার বাসার যে অংশটি বিড়ালের গু দ্বারা অপরিচ্ছন্ন ছিল সেখানে মনুষ্য বমনযুক্ত হয়ে এক বীভর্ৎস পরিস্থিতি সৃষ্টি করল, আমি রাতে যখন বাসায় ফিরলাম তখন বাসার তাপমাত্রা কত ডিগ্রিতে ছিল তা নিশ্চয়ই আপনাদের বলতে হবে না। আমি সে রাতে খুব বুদ্ধিমানের মতো আচরণ করলাম এবং বাসায় বিড়াল নিষিদ্ধ করলাম। এ ঘটনার পর বহু বছর চলে গেছে। আমার বড় ছেলেটি এখন বিদেশে আছে। মেয়েটির বিয়ে হয়েছে এবং তৃতীয় ছেলে সন্তানটি ঢাকা কলেজে একাদশ শ্রেনীতে পড়ছে। আমি যখন বিড়ালসংক্রান্ত আমার অতীত স্মৃতি ভুলতে বসছিলাম তখন মাস কয়েক আগে দেখি সংসারে বিড়াল নিয়ে ইতিবাচক কথাবার্তা হচ্ছে। করোনাকালে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় ছেলেটি আমার সময় পেলেই টিভি দেখা এবং কম্পিউটার গেম খেলায় মত্ত হয়ে ওঠে। মেয়েটি যখন শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়িতে বেড়াতে আসে তখন সে তার ছোট ভাইয়ের প্রভাবে সেই ২০০৩-০৪ সালের মতো নাবালিকা হয়ে যায় এবং একসঙ্গে টিভি দেখা ও গেম খেলায় ভাইবোনে প্রতিযোগিতা করে।
উলি¬খিত সমস্যা নিয়ে আমার স্ত্রী যখন তার প্রবাসী জ্যেষ্ঠ পুত্রের পরামর্শ চায় তখন আমার বিদ্বান পুত্র বিলাই থেরাপির কথা বলে তার মাকে বুঝানোর চেষ্টা করে যে, বিড়াল একটি অলৌকিক প্রাণী। এটি মানুষের মনের দুঃখ-কষ্ট টেনে নেয়ার ক্ষমতা রোখে। যে ঘরে বিড়াল থাকে সেখানে জিন-ভূত-প্রেত ঢুকতে পারে না। অধিকন্তু বিড়াল লালন পালনের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের চরিত্রে একধরনের দায়িত্ব ও কর্তব্য বোধ সৃষ্টি হয়। এসব কথা শোনার পর আমার স্ত্রী বিড়াল আমদানির বিষয়ে নমনীয় হয়ে পড়েন এবং ভারতীয় চ্যানেলের বধূদের আদলে আমার কাছে আবদার করে বলেন, ওগো! শুনেছ! বিড়ালের নাকি মন ভালো করার ক্ষমতা আছে- ভূত তাড়ানোর যোগ্যতা আছে এবং তারা নাকি ছেলেমেয়েদেরকে ভালো মানুষে পরিণত করে দিতে পারে। আমি তার কথা শুনে শুধু বললাম- হুম! ব্যাস! এটুকুই। পরের দিন অফিস থেকে বাসায় ফিরে দেখি একটি রুগ্ণ শীর্ণ নবজাতক বিড়ালছানা বাসার মধ্যে মিউ মিউ করছে- আর আমার ছেলেমেয়ে সেটিকে সাত রাজার ধন মণি-মাণিক্যের মতো যতœআত্তি শুরু করেছে। গত কয়েক মাসের ব্যবধানে উলি¬খিত বিড়ালছানাটি বেশ বড়সড় হয়েছে এবং সবার যতœআত্তি পেয়ে রীতিমতো বাঘের মতো তর্জন গর্জন শুরু করেছে। তার জন্য বিভিন্ন খেলনা কেনা হয়েছে। সে বাঘের মতো ভাব নিয়ে সেসব খেলনা শিকার করে এবং খেলনাগুলোকে কামড় দিয়ে মুখে তুলে নিয়ে পুরোঘর হেলে দুলে এমনভাবে ঘুরে বেড়ায় যা দেখে মনে হতে পারে সে একটি হরিণ শিকার করেছে এবং শিকারের বস্তুটিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আমার ছেলেটি বিড়ালটিকে কাঁধের উপর চড়িয়ে এমন একটা ভাব নিয়ে ঘরের মধ্যে হাঁটে যা দেখে মনে হয় সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে বশ মানিয়ে মহাবীর শেরখান সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজদরবার ত্যাগ করে আমার ঘরে তসরিফ এনেছেন। আমার কন্যাটি বিড়ালটিকে প্রায়ই সাজুগুজু করায় লিপস্টিক, কাজল ইত্যাদি দিয়ে। তারপর ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেয়। সেটি দেখে আমার জামাই বাবাজি আবার বিড়ালটির গুণগান সমেত বিরাট আরেকটি প্রশংসাসূচক গদ্য রচনা তৈরি করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়।
ছেলেমেয়ের সাথে পাল¬া দিয়ে আমার স্ত্রীও বিড়ালকে আদর-আপ্যায়ন করে এবং তারা অর্থাৎ আমার ছেলেমেয়ে এবং স্ত্রী প্রায়ই মৃদু বিতর্ক শুরু করে বিড়ালের তুলনামূলক ভালোবাসা নিয়ে। তারা পরস্পরের কাছে জানতে চায় বিড়াল আসলে কাকে বেশি ভালোবাসে! এ ব্যাপারে আমার ছেলেমেয়ে তাদের পিতার মতোই বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয় এবং হাসিমুখে স্বীকার করে নেয়- বিড়ালটি আসলে আম্মুকেই বেশি ভালোবাসে। এসব কথাবার্তা এবং বিড়ালের রোজনামচা আমার প্রবাসী পুত্রের কাছে নিয়মিত জানানো হয়। সে সবকিছু শুনে খুবই খুশি বিশেষ করে তার কনিষ্ঠ ভ্রাতার বিড়ালপ্রীতিতে যথেষ্ট পুলকিত। সে তার মাকে এই সুখবর দিয়ে রেখেছে যে, দেশে ফিরে সে তার ছোট ভাইটিকে আরো একটি বিড়াল কিনে দেবে। বিড়াল সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত গল্প এখানেই শেষ। এবার বিড়ালের জাতীয় গুরুত্ব ও আদিখ্যেতা নিয়ে কিছু বলি।
আমাদের দেশের হাল আমলের রাজনীতি আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইঁদুর-বিড়াল খেলার মহড়া এবং সেই খেলাতে নিজেদের পোষ্য ইঁদুর এবং বিড়ালগুলো যেন ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে পারে সে জন্য যেসব মহড়া বা রিহারসাল শুরু হয়েছে তা দেখে শুনে যখন ক্লান্ত শরীর নিয়ে গৃহে ফিরি তখন আমাদের পোষ্য বিড়ালটির মতিগতি, আচার-আচরণ ও ভাবভঙ্গি দেখে অনেক কিছু জানতে পারি এবং সেভাবে নিজেকে প্রবোধ দিতে পারি। গত কয়েক মাসে ঢাকার রাজপথসহ দেশের বিস্তীর্ণ জনপদে বিলাই স্বভাবের মানুষের উৎপাত যেভাবে বেড়েছে এবং আমার শৈশবের সেই ছোঁচা বিলাইটির মতো প্রাণীদের দৌরাত্ম্য যেভাবে অসহ্য হয়ে পড়েছে সেখানে আমার গৃহ অভ্যন্তরের বিড়ালটির কৌতুকপূর্ণ আচরণ আমাকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিচ্ছে। আমি রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে গিয়ে সচরাচর যত বিলাই স্বভাবের মানুষের হম্বিতম্বি শুনি তাতে মনে হয় অনাগত দিনে একটি মারাত্মক এবং জটিল রক্তক্ষয়ী ইঁদুর-বিড়াল খেলার আয়োজন বেশ জোরেশোরেই চলছে। সুতরাং সেই অবস্থায় কিভাবে নিজেকে নিরাপদ রাখা যায় তজ্জন্য বিড়ালের স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছি। বিড়ালের চোখ কেন দিনের আলোর চেয়ে রাতের আলোতে বেশি সক্রিয় থাকে এবং অন্ধকারময় রজনীতে বিড়াল কেন মানুষের চেয়ে ১৬ গুণ বেশি স্পষ্ট দেখতে পায় তার সঙ্গে গভীর রাতের ভোট চুরি এবং অন্ধকারের মধ্যে নির্ভুলভাবে ব্যালট পেপারে সিল মারার বিষয়টির কি কোনো সংযোগ রয়েছে তা জানার চেষ্টা করছি। বিড়ালের প্রবল ঘ্রাণশক্তি এবং ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র শব্দ অনুধাবন করার যে শক্তি রয়েছে তার সাথে রাজনীতির মধু মেওয়ার গন্ধ অনুভব করা এবং রাজনীতির দুঃসময় বা সুসময়ের আগাম ধ্বনি অনুভব করে পালানো অথবা দৌড়ে কাছে আসার মধ্যে কী সংযোগ রয়েছে তা নিয়েও চিন্তাভাবনা আমাকে তাড়িত করছে। বিড়াল কেন বাঘের মতো ভাবসাব দেখায় এবং কিছু বিড়াল কেন ছোঁচা বিলাইতে রূপান্তরিত হয় তা নিয়ে যেমন চিন্তাভাবনা করছি তেমনি ক্রোধের বশে কেউ যদি বিড়ালকে মেরে ফেলে তবে আড়াই সের লবণ মাখিয়ে কেন বিড়ালের দেহ সমাহিত করার বাঙালি প্রথা চালু হয়েছিল তাও জানার চেষ্টা করছি। আমি ইতোমধ্যে জেনে গিয়েছি যে, বিড়ালরা সবসময় নিজেকেই প্রভু বা মালিক মনে করে। তারা তাদের লালন-পালনকারী মানুষদেরও নিজেদের মতো বিড়াল মনে করে। তবে এ ক্ষেত্রে তাদের চিন্তাচেতনা-অনুভূতি এবং বিবেচনা শক্তির একটি অভিনব বিষয় বিজ্ঞান আবিষ্কার করে ফেলেছে। আর সেটি হলো- বিড়ালরা তাদের লালন-পালনকারী মানুষদের বিড়াল মনে করে সত্য কিন্তু কোনো অবস্থাতেই এ কথা মনে করে না যে, তারা তাদের লালন- পালনকারীদের চেয়ে বড় বিড়াল নয় কিংবা সম আকৃতির নয়। তারা মনে করে, লালন- পালনকারীরা হলো বড় বিড়াল, আর তারা হলো ছোট বিড়াল।
মহান আল¬াহ পাকের একটি অনন্য সৃষ্টি বিড়ালের উলি¬খিত মন-মানসিকতার সাথে যদি আমরা বিড়াল স্বভাবের মনুষ্য জাতের মন- মানসিকতার তুলনা করি তবে কী দেখতে পাবো! তারা কি তাদের লালন-পালনকারীদের বিড়াল মনে করে, নাকি মানুষ হিসেবে শ্রদ্ধা করে? অথবা তারা কি তাদের লালন-পালনকারীদের নিজেদের চেয়ে ছোট নাকি বড় বিড়াল মনে করে? এসব প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। তবে বিড়াল স্বভাবের মানুষ তৈরির কারিগররা নিশ্চয়ই এসব জানেন বলেই আমার বিশ্বাস। [সংকলিত]
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য

প্রকৃত চেতনা লুণ্ঠিত করার ফসল
মোদাসসের হোসেন খান, বীর প্রতীক

পাকিস্তানি শাসক ও শোষকদের অত্যাচার, নিপীড়ন, নিষ্পেষণ থেকে রক্ষা পাওয়া এবং ন্যায়বিচার ও সব সম্প্রদায়ের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই আমরা মুক্তিযুদ্ধ বেছে নিয়েছিলাম। আমি বিশ্বাস করি, অতি নগণ্য কিছু লালসা তাড়িত, লোভাতুর ও বিবেকবর্জিত মনুষ্য ছাড়া জাতি ধর্ম নির্বিশেষে বাংলাদেশের সব মানুষই অসাম্প্রদায়িক ও শান্তিপ্রিয়। কিন্তু গভীরভাবে ব্যথিত হই যখন দেখি বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশেই রাজনীতির ছত্রছায়ায় মুষ্টিমেয় অসৎ, নষ্ট ও দুশ্চরিত্র এবং তথাকথিত জননেতাদের ঘৃণ্য উদ্দেশ্যচরিতার্থ করার লক্ষ্যেই ক্ষণে ক্ষণে জনগণের শান্তি বিঘ্নিত করা হয়ে থাকে। স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় কুমিলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দিরে হামলার ঘটনায় আমরা হয়েছি যন্ত্রণাকাতর। একই সাথে পীড়িত হই সরকারেরই পৃষ্ঠপোষকতায় আসামে ও ভারতজুড়ে নিরীহ মুসলমানদের ওপর পরিকল্পিত নৃশংস ও ধারাবাহিক হত্যাযজ্ঞ পরিচালিত হতে দেখে। তবে এ কথা অনস্বীকার্য, যেখানে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল ও আপামর জনসাধারণ সব সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ কঠোর হস্তে দমন ও দায়ী অপরাধীদের বিচারের সম্মুখীন করার লক্ষ্যে ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সোচ্চার, তখন পাশের দেশে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর প্রকাশ্য আস্ফালন ও চিহ্নিত অপরাধীদের সরকারি দলের নেতা কর্তৃক ক্রমাগত ইন্ধন জোগানো অবলোকন করে আমরা হই স্তম্ভিত।
তাই আমাদের দাবি, সব ধর্মাবলম্বীর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি লক্ষ্য সমুচ্চ রাখার উদ্দেশ্যে নিরপেক্ষ অবস্থান থেকেই আমাদের বজ্রকণ্ঠ হতে হবে উচ্চারিত। শ্রেণী-বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে দেশের প্রতিটি নাগরিকের রয়েছে সমান অধিকার। এ অধিকার নিশ্চিন্ত করার সর্বাধিক দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তায়। তবে যেহেতু সব মানুষই রক্ত মাংসে গড়া, তাই পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তেই, বিশেষ করে বর্তমান উন্নত ও বিস্ময়কর গণমাধ্যমের যুগে সংঘর্ষের ঘটনা যখন মুহূর্তের মধ্যেই অন্য প্রান্তে পৌঁছে যায়, তখন সাধারণ জনগণের মধ্যে তার প্রতিক্রিয়া রোধ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। দুঃখজনক হলেও সত্য, এই অলিখিত রীতি কেবল আমাদের উপমহাদেশেই নয়, সব দেশেই দৃশ্যমান।
তাই সব প্রকার প্ররোচনা এবং উসকানিমূলক কাজ ও বক্তব্য থেকে বিরত থাকা প্রতিটি দেশের সরকার ও সচেতন নাগরিকদের অপরিহার্য কর্তব্য। আমি ব্যক্তিগতভাবে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, মাইনরিটি বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় শব্দটি সম্পূর্ণভাবে রহিত করা উচিত। সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগরিষ্ঠ শব্দ দু’টির মধ্যেই নিহিত রয়েছে সব অশুভ ইঙ্গিত। নাগরিক হিসেবে সাংবিধানিকভাবে যেখানে সবারই সমঅধিকার নিশ্চিত, সেখানে সংখ্যার মারপ্যাঁচে দেশের জনগণকে বিভক্ত করা দিয়েই সূচনা হয় হিংসা ও বিদ্বেষের। ধর্মভিত্তিক রেষারেষির এখানেই সূত্রপাত। বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের লোকেরা যুগ যুগ ধরে সুখে শান্তিতে বসবাস করে আসছে। আমি স্বয়ং ছোটকাল থেকেই আজ অবধি অনেক হিন্দু বন্ধুর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে আসছি। আমাদের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধে অনেক হিন্দু যোদ্ধার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছি। সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া অশান্তিকর ঘটনাগুলো রাজনৈতিক ও কিছু ব্যক্তিবিশেষের অশুভ স্বার্থ হাসিলের বহিঃপ্রকাশ। এটি কোনোক্রমেই ধর্মীয় নয়। এ ঘৃণিত ও নৃশংস কাজের ইন্ধনদাতা রয়েছে দেশের অভ্যন্তরে ও সীমান্তের বাইরে; দুই স্থানেই। এ বিষয় সহজ বোধগম্য যে, মূর্তির সাথে কুরআন রাখা কোনো প্রকৃত হিন্দু কিংবা মুসলিমের পক্ষেই সম্ভব নয়। একজন প্রকৃত হিন্দু এ কাজ করে তার পূজা কেন নষ্ট করবে? তেমনিভাবে একজন প্রকৃত মুসলমান তো পৃথিবী উল্টে গেলেও মূর্তির নিচে পবিত্র কুরআন রাখাবে না। এরই মাঝে প্রত্যক্ষদর্শী ও অবস্থাগত প্রমাণের (পরৎপঁসংঃধহঃরধষ বারফবহপবং) ভিত্তিতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, কুমিলা ও দেশের অন্যান্য স্থানে সংঘটিত সংঘর্ষগুলো দাড়িটুপিওয়ালা মুসলমান বা নামাবলি গায়ে জড়ানো কোনো প্রকৃত ধর্মভীরু মানুষের কাজ নয়। সংঘর্ষে লিপ্ত সবাই ছিল বয়সে তরুণ।
এ ছাড়া অতীতে সংঘটিত ভারতে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশেও হিন্দু ও মুসলিম একে অন্যের বিরুদ্ধে আক্রমণ করার ঘটনার জন্য আমরা ধর্মকে দোষী করার কোনো কারণ খুঁজে পাইনি। ভারতে মুসলিম ছেলেকে টেনে-হেঁচড়ে নিয়ে জীবিত অবস্থায় যৌনাঙ্গ কেটে দেয়া কোনো ধর্মের কাজ ছিল না। কাশ্মিরে এক নারীকে মন্দিরে রেখে পুরোহিতসহ টানা তিন দিন গণধর্ষণ করার পর হত্যা করে জঙ্গলে ফেলে দেয়া কোনো ধর্মের কাজ ছিল না। মাদ্রাজে হাজার হাজার মুসলমান হত্যা ও নারীদের ধর্ষণ করার জন্য হিন্দু ধর্মকে দোষী করা যায় না। বুয়েটের আবরার হত্যার আসামি ‘অমিত সাহা’ প্রকাশিত হওয়ার পরও ধর্মকে দায়ী করা যায় না। শাপলা চত্বরে পবিত্র কুরআন শরিফ পুড়িয়ে ফেলার দায়ে শনাক্ত কেউ একজন হিন্দুধর্মের হলেও হিন্দুধর্মের প্রতি এ জন্য অঙ্গুলি নির্দেশনা অনুচিত হবে। ঠিক তেমনিভাবে বাংলাদেশে মন্দির আক্রমণের ঘটনা ইসলাম বা প্রকৃত ধর্মভীরু মুসলমানের কাজ নয়। কোনো ধর্মই হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও উপাসনালয় পোড়ানোর মতো নিকৃষ্ট কাজকে সমর্থন করে না। তাই সন্দেহাতীতভাবে এই হানাহানি লোভাতুর ও দেশবিরোধী চক্রেরই সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের প্রতিফলন। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ভূ-অর্থনৈতিক, ভূ-রাজনৈতিক ও কৌশলগত কারণে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ এবং এ দেশের ১৭ কোটি মানুষ ক্রমেই তাদের অবস্থান যতই সুদৃঢ় করে তুলছে, শকুন ও হায়নাদের অসহিষ্ণুতা ও আক্রোশ ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। দাঙ্গা সৃষ্টি করে মানুষের লাশ ভক্ষণ করতে তারা সদা সচেষ্ট। তারা সুযোগের সন্ধানে রয়েছে তাদের নখর ও দন্ত বিকশিত করে আঘাত হানার। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষাকল্পে এবং জনগণের কষ্টে অর্জিত ৫০ বছরের অগ্রগতি অটুট রাখার জন্য সব শ্রেণী ও সব পেশাজীবী মানুষের একতাবদ্ধ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। আজ মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ সব দেশপ্রেমিক নাগরিকদের শুধু তাদের অধিকার আদায়ের জন্য নয়, দেশের নাগরিক হিসেবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনেও হতে হবে সচেষ্ট। তাই সরকার ও সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানাই, প্রশাসনের সব স্তরে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করুন, নাগরিক অধীকারসহ দলমত নির্বিশেষে সব মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করুন। মন্দিরে সংঘটিত বেদনাদায়ক ঘটনার নিরপেক্ষ ও বিচার বিভাগীয় তদন্তসাপেক্ষ পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থাকাসহ সব অপরাধীর দ্রুত ও কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিন।
আমরা একই সাথে দেশের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা পঞ্চম বাহিনী এবং দেশের বাইরে নখর বিস্তার করা সব শকুন ও হায়েনাদের হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ দেশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার যেকোনো দুঃসাহস আমরা সমূলে ধ্বংস করে দিতে বদ্ধপরিকর। ৫০ বছর আগে এ দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ যদি ভয়ানক মারণাস্ত্রে সজ্জিত লাখ লাখ দখলদার বাহিনীর কাছ থেকে দেশকে মুক্ত করতে পারে, তবে বর্তমান বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষ এ মাটি রক্ষার্থে যেকোনো শত্রুর অভিলাষ চিরতরে গুঁড়িয়ে দিতে সক্ষম।


ভোগ-প্রবণতা ত্যাগেই সুখ
শাহীন হাসনাত

যারা আল¬াহর সম্মুখীন হওয়াকে মিথ্যা বলেছে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনকি অকস্মাৎ যখন তাদের কাছে কেয়ামত উপস্থিত হবে তখন তারা বলবে, হায় আফসোস! এ ব্যাপারে আমরা কতই না ত্রুটি করেছি। তারা তাদের পিঠে নিজেদের পাপ বহন করবে। দেখো, তারা যা বহন করবে, তা অতি নিকৃষ্ট! পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া-কৌতুক ছাড়া আর কিছুই নয়। আর যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য আখিরাতের আবাসই শ্রেয়; তোমরা কি অনুধাবন করো না?’ -সুরা আনআম : ৩১-৩২
কোরআনে কারিমের উলি¬খিত দুই আয়াতের প্রথম আয়াতে পুনরুত্থানে অবিশ্বাসীদের ভয়াবহ পরিণতির বিষয়ে আলোচনা করে দ্বিতীয় আয়াতে দুনিয়ার জীবন ও আখিরাতের জীবনের চূড়ান্ত ও সার্বিক মূল্যায়ন করা হয়েছে। সুরা আনআমের ২৯ নম্বর আয়াতেও এ বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘তারা বলে, আমাদের এ পার্থিব জীবনই একমাত্র জীবন, আমাদের পুনরায় জীবিত করা হবে না।’
বর্তমানে এ ধরনের মানসিকতার লোক পৃথিবীতে বাড়ছে। দুনিয়ার জীবনের ভোগ-বিলাস, আহার-বিহার, আনন্দ-বিনোদনকেই এক শ্রেণির মানুষ মুখ্য ও জীবনের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য জ্ঞান করে। জীবনকে ভালোভাবে উপভোগ করার জন্য তারা মদ, নারী ও নেশায় মগ্ন। পরকালের শাস্তির ভয় না থাকায় তারা দুনিয়াতে বল্গাহীন জীবনযাপনে অভ্যস্ত। আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে। আল¬াহর অবাধ্যতায় যারপরনাই ধৃষ্টতা দেখায়। মৃত্যুকে তারা জীবনের শেষ পরিণতি মনে করে। তারা মনে করে, মরে যাওয়া মানেই সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়া। কিন্তু শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ কি কেবলই ভোগের জন্য এ দুনিয়ায় এসেছে? শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ড ভোগ করা হলে জীবজন্তুই শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হওয়ার কথা। কেননা, উট মানুষের চেয়ে বেশি খায়। মোরগ ও চড়–ই পাখি সর্বাধিক সহবাস করে। সিংহ ও বাঘ অনেক বেশি নৈরাজ্য ও ত্রাস সৃষ্টি করতে পারে। সাপ-বিচ্ছু অন্যকে অনেক বেশি কষ্ট দেয়। কিন্তু তাদের পাপ তো ধর্তব্য নয়। যেসব মানুষ জীব-জানোয়ারের মতো পাপ করে, তারা তো পাপের বোঝা বহন করে বেড়ায়। দুই চোখ বন্ধ হলেই তা বুঝে আসবে; তখন আফসোসের শেষ থাকবে না।
উলি¬খিত দ্বিতীয় আয়াতে বলা হয়েছে, ‘পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া-কৌতুক ছাড়া আর কিছুই নয়।’ অর্থাৎ খেলাধুলা যেমন দ্রুত ও অল্প সময়ে শেষ হয়ে যায়, ঠিক তেমনি পরকালের জীবনের তুলনায় দুনিয়ার জীবন দ্রুত ফুরিয়ে যায়। খেলাধুলা যেমন চিত্তবিনোদনমূলক অন্তঃসারশূন্য, ঠিক তেমনি দুনিয়ার কাজকর্ম ক্ষণিকের সুখ ও ভোগের জন্য; এর ফলাফল শূন্য। তবে পার্থিব জীবনের পুরোটাই খারাপ নয়; পার্থিব জীবনের যে মুহূর্তগুলো, যে কাজগুলো আল¬াহর ইবাদত-বন্দেগি ও স্মরণে অতিবাহিত হয় তার সমতুল্য পৃথিবীর কোনো নিয়ামত ও সম্পদ নেই। ইসলামে দুনিয়াকে বর্জন করতে বলা হয়নি; দুনিয়ার ভালোবাসা বর্জন করতে বলা হয়েছে।
দুনিয়ায় মানুষের ভোগের বাসনার শেষ নেই। ভোগের কারণে যে সুখানুভূতি সৃষ্টি হয়, তা ক্ষণিকের। আর মানুষ এই ক্ষণিকের সুখকে স্থায়ী সুখে পরিণত করার জন্য আরও বেশি ভোগ্যপণ্য ব্যবহার করছে, অবিরাম ছুটে চলেছে। কিন্তু ভোগবাদে যে প্রকৃত সুখ নেই তা সে বুঝতে পারছে না। আসলে ভোগবাদে বিভোর কোনো ব্যক্তি কখনোই এই উপায়ে প্রকৃত ও টেকসই সুখ এবং আনন্দ খুঁজে পাবে না, এটা তার মিথ্যা ছুটে চলা।
এ কথা অস্বীকার উপায় নেই, অনিয়ন্ত্রিত উৎপাদন ও ভোগবাদী সংস্কৃতি লালন ও তা ছড়িয়ে দেওয়ার পেছনে পাশ্চাত্যের ধনী দেশগুলো সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে। তারা নিজেদের মুনাফার জন্য গোটা বিশ্বের অপূরণীয় ক্ষতি করে চলেছে। তারা নিজেদের ভোগ-বিলাস অক্ষুণœ রাখতে বিশ্বের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে চাইছে, প্রয়োজনে যুদ্ধ চাপিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু ভোগ ও চাহিদার সীমাকে নিয়ন্ত্রণ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী নিশ্চিত করে যাওয়ার কোনো সদিচ্ছা পাশ্চাত্যে লক্ষ করা যাচ্ছে না।
ভোগবাদী সংস্কৃতি মানুষের মধ্যে ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিন্তা-চেতনা জোরদার করছে। কারণ ভোগবাদীরা নিজের চাওয়া-পাওয়া দিয়েই পৃথিবীকে বিচার করেন। পাশ্চাত্যে ভোগবাদী যে সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, তাতে মানুষের মনে এক ধরনের কৃত্রিম স্বাধীনতা ও মুক্তির অনুভূতি তৈরি হয়েছে। তারা মনে করছে, ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার মধ্যেই রয়েছে সর্বোচ্চ স্বাধীনতা এবং এখানেই কেবল একজন ব্যক্তি তার সর্বোচ্চ স্বার্থ নিশ্চিত করতে সক্ষম। এই ব্যবস্থায় একজন ব্যক্তি অন্যের প্রতি কোনো ধরনের টান, ভালোবাসা, মানবিকতা ও দায়িত্ব অনুভব করে না। দায়িত্ব এড়িয়ে জীবনযাপন করতে পারাকে বড় ধরনের সাফল্য বলে মনে করে।এর ফলে দেখা যাচ্ছে, এক পরিবারের প্রতিটি সদস্যের আলাদা টিভি রয়েছে। প্রত্যেকের গাড়ি আলাদা। মোবাইল ও ল্যাপটপসহ সবকিছুই আলাদা। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুঁজিবাদী সমাজের একজন সদস্য আনন্দ পাওয়ার চেষ্টা করে। বেশি বেশি পণ্য ব্যবহারের মাধ্যমে সুখ খুঁজে বেড়ায়। বৈষয়িক সম্পদের দিক থেকে অগ্রগামী দেশগুলোর মানুষের সুখের একটা মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের ভোগ্যপণ্য ক্রয় ও ব্যবহারের সক্ষমতা। কিন্তু ভোগবাদী ব্যবস্থায় মানুষ কি সত্যিই প্রকৃত সুখী হতে পেরেছে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভোগবাদ মানুষের সুখ নিশ্চিত করতে পারেনি, মানুষ আগের চেয়ে বেশি সুখী হয়নি বরং মানুষের মধ্যে অস্থিরতা বেড়েছে। ভোগবাদ ও পুঁজিবাদ নিয়ন্ত্রিত দেশগুলোর মানুষের মধ্যে অবিরাম নিজের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ানোর প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। তারা ক্লাব, সিনেমা ও পিকনিকসহ নানা ধরনের আধুনিক ব্যবস্থার মধ্যে ডুবে থেকে প্রকৃতপক্ষে নিজের সত্তার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াতে চায়। মানুষের মধ্যে এখন সব সময় কাজ করে না পাওয়ার আত্মগ-ানি। কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত থেকে সেই আত্মগ¬ানি ভুলে থাকতে চায়। মানুষ ভোগের পেছনে ছুটতে গিয়ে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে যে, নিজেকে নিয়ে চিন্তার অবকাশটুকুও তার আর নেই। মানুষ এখন সময়ের ঘাটতি অনুভব করছে, এর কারণ হলো- সে তার চাহিদার গণ্ডিকে এতটাই বিস্তৃত করে ফেলেছে যে এখন সে ওই বিস্তৃত গণ্ডির মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে এবং নিজেকেই হারিয়ে ফেলছে। ভোগবাদ মানবজাতিকে আত্মবিধ্বংসী পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, সময়, বিশ্রাম, চিকিৎসাসহ সবকিছুরই একটি সীমা রয়েছে, কিন্তু ভোগের যে তাড়না তা সীমাহীন। বস্তুত ভোগ ও ত্যাগ দুটি বিপরীত জীবন-দর্শন। ভোগের দর্শন সেখানে ত্যাগকে কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয় না। ত্যাগের মধ্যেও যে সুখ আছে তা ভোগবাদীরা বুঝতে পারে না। এই বুঝতে না পারাটাই সব অনিষ্টের মূল।
লেখক : মুফতি ও ইসলামবিষয়ক লেখক


তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয় নিয়ন্ত্রণে লাইসেন্সিং ব্যবস্থার প্রাসঙ্গিকতা!
আবু নাসের অনীক

গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০১৭ অনুসারে, বাংলাদেশে ১৫ বছরের উর্দ্ধে ৩৫.৩% প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করে যার মধ্যে ৪৬% পুরুষ এবং ২৫.২% মহিলা। বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান না করেও পরোক্ষভাবে ধূমপানের শিকার হচ্ছে বহু মানুষ। এই হার কর্মক্ষেত্রে ৪২.৭%,রেস্তোরায় ৪৯.৭%, সরকারি কার্যালয়ে ২১.৬%, হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ১২.৭% এবং পাবলিক পরিবহনে ৪৪%।
গ্লোবালি তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ২০০৩ সালের মে মাসে ৫৬তম বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে ফ্রেমওর্য়াক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) চুক্তি অনুমোদিত হয়। বাংলাদেশ এই চুক্তির প্রথম স্বাক্ষরকারী দেশ এবং ২০০৪ সালে চুক্তিকে অনুসমর্থন করে। তার ধারাবাহিকতায় সরকার এফসিটিসি’র আলোকে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩) এবং ২০১৫ সালে এ সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন করে।
৩০-৩১ জানুয়ারী, ২০১৬ ঢাকায় অনুষ্ঠিত ঝঁসসরঃ ড়হ অপযরবারহম ঃযব ঝঁংঃধরহধনষব উবাবষড়ঢ়সবহঃ এড়ধষং শীর্ষক ঝড়ঁঃয অংরধহ ঝঢ়বধশবৎং ঝঁসসরঃ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দেন। দেশের ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতে এবং জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত লক্ষ্য-৩ অর্জনে আন্তর্জাতিক চুক্তি এফসিটিসি’র বাস্তবায়ন ও তামাকজনিত ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় পদক্ষেপ গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এখন আলোচ্য বিষয়, মানীয় প্রধানমন্ত্রীর ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা বাস্তবায়ন কী স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাস্তবায়িত হবে? নিশ্চয়ই তা নয়! কোন সিদ্ধান্তই স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাস্তবায়িত হয় না এটাই বৈজ্ঞানিক সত্য। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং আরো কিছু অনুসিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সেটি বাস্তবায়ন করতে হয়।
তার আলোকেই তামাক বিরোধী সংস্থাগুলির নিরলস প্রচেষ্টা এবং সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যকর ভূমিকায় জানুয়ারী ২০২১ এ ‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন নির্দেশিকা’ প্রকাশিত হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের সকল দপ্তর/সংস্থা ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে (সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদ) নির্দেশিকাটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২ মার্চ ২০২১ এ (স্মারক নং:৪৬.০০.০০০০.০৮৫.০৬.০৪২.২০১৮-১১৮) স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তামাকজাত দ্রব্যের (বিশেষকরে সিগারেট/বিড়ি) যত্রতত্র ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও বিক্রয় সীমিতকরণে ‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন নির্দেশিকা’ একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। নির্দেশিকাটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে ‘২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ ঘোষণার বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন নির্দেশিকা’র ৮ এর ৮.১ এ বলা হয়েছে,‘তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়কেন্দ্র বা যেখানে তামাকজাত দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় হবে তার জন্য আবশ্যিকভাবে পৃথক ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করা এবং প্রতি বছর নির্দিষ্ট ফি প্রদান সাপেক্ষে আবেদনের মাধ্যমে উক্ত ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা।’
লাইসেন্সিং বলতে আমরা কী বুঝি? লাইসেন্সিং ব্যবস্থা কার্যকর করা অর্থ শুধুমাত্র বৈধতা প্রদান নয়। তারচেয়েও বেশি, নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। ওহাবংঃড়ঢ়বফরধ তে বলা হচ্ছে, ‘ ঝঁপয ধ ষরপবহংব রং ধ সবপযধহরংস ভড়ৎ মড়াবৎহসবহঃ ঃড় ড়াবৎংবব ধহফ রহ সধহু পধংবং ঃধী, পবৎঃধরহ নঁংরহবংং ড়ঢ়বৎধঃড়ৎং. অ ষরয়ঁড়ৎ রং ধহ বীধসঢ়ষব ড়ভ ঃযরং
ঃুঢ়ব.
বাংলাদেশে অনেক নিষিদ্ধ দ্রব্যের ক্ষেত্রে লাইসেন্সিং ব্যবস্থা চালু রয়েছে। যাতে সেটি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে। মদ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ কিন্তু এর ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না, সেকারণে এর নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের জন্য বিক্রেতা-ক্রেতা উভয়ের ক্ষেত্রেই লাইসেন্স আরোপ করেছে সরকার। তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার একদিনেই বন্ধ করা সম্ভব নয় এটাই বাস্তবতা কিন্তু পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে চুড়ান্তভাবে অবশ্যই সম্ভব। যা বিশ্বের অনেক দেশ ইতিমধ্যে করে দেখিয়েছে। বাংলাদেশে সেই সম্ভবকে বাস্তবে রুপ দেবার জন্য এর ব্যবহার ও বিক্রি কমিয়ে আনতে হবে, আর সেটির জন্য অন্যতম একটি পদক্ষেপ লাইসেন্সিং ব্যবস্থা। বর্তমান অবস্থায় তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়ে কোন প্রকার নিয়ন্ত্রণ নেই। লাইসেন্সিং ব্যবস্থার প্রচেষ্টা এর বিক্রয়কে সীমিতকরণ করতে সাহায্য করবে। বিক্রয় সীমিত করা সম্ভব হলে ব্যবহারও কমে আসতে বাধ্য। লাইসেন্সিং এর বিষয়ে নির্দেশিকায় যে সমস্ত শর্তারোপ করা হয়েছে সেগুলির প্রতিপালন যদি নিশ্চিত করা যায় তবে তামাকজাত দ্রব্যের (বিশেষকরে সিগারেট/বিড়ি) যত্রতত্র ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, বিক্রয় সীমিতকরণে সরাসরি প্রভাব পড়বে। নির্দেশিকায় ৮ এর ৮.৪ এ বলা হয়েছে, হোল্ডিং নাম্বার ব্যতীত কোন প্রকার তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় কেন্দ্রকে লাইসেন্স প্রদান করা যাবে না। রাস্তার মোড়ে মোড়ে সিগারেট কোম্পানী কর্তৃক সরবরাহকৃত বক্স বসিয়ে, গলায় ঝুলিয়ে যারা সিগারেট বিক্রি করে সেটি আর করতে পারবে না। ফলশ্রুতিতে বিক্রয় কেন্দ্র সীমিত হয়ে আসবে, বিক্রি সীমিত হবে, সহজ প্রাপ্যতা বাধাগ্রস্থ হবে।
নির্দেশিকায় ৮.৫ এ বলা হয়েছে, সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়ের জন্য লাইসেন্স প্রদান করা যাবে না। তামাক কোম্পানীগুলোর অন্যতম টার্গেট থাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে যাতে সিগারেট বিক্রি হয় তার ব্যবস্থা করা। তারা প্রধান ভোক্তা বানাতে চায় শিশু-কিশোর-যুবকদের। কারণ তাদের একবার সিগারেট ধরিয়ে দিতে পারলে দীর্ঘ মেয়াদী ভোক্তা তৈরি হয়ে যায়। গাইডলাইনের উল্লেখিত ধারা বাস্তবায়িত হলে তামাক কোম্পানীর এই
অপতৎপরতাকে বাধাগ্রস্থ করা সম্ভব হবে।
৮.৬ ধারা অনুযায়ী জনসংখ্যার ঘনত্বের বিবেচনায় একটি এলাকায় লাইসেন্স ইস্যু করা হবে। এর মাধ্যমে বিক্রয় কেন্দ্র সীমিত হয়ে যাবে। বিক্রিও সীমিত হয়ে আসবে। সহজ লভ্যতা অনেক বেশি হ্রাস পাবে।
লাইসেন্সিং ব্যবস্থা কার্যকরের মাধ্যমে একটি শহরে মোট কতোটি দোকানে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় হচ্ছে তার ডাটা বেজ তৈরি হয়ে যাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। ফলশ্রুতিতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর করা অনেক বেশি সহজ হয়ে যাবে। সাধারণ ট্রেড লাইসেন্স এবং পাশাপশি তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়ের জন্য পৃথক লাইসেন্সিং ফি কার্যকর করার ফলে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়ে বিক্রেতা নিরুৎসাহিত হবে। অর্জিত ফি’র অর্থ দ্বারা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান তামাক নিয়ন্ত্রণ অন্যান্য কার্যক্রম বাস্তবায়নে অর্থায়ন করতে পারবে।
তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়ে লাইসেন্সিং ব্যবস্থা ইউরোপ, আমেরিকা এমনকি পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের অনেক রাজ্যে, নেপালেও অনেক পূর্বে চালু হয়েছে। বর্তমানে ফিনল্যান্ড, হাঙ্গেরি, ফ্রান্স, ইটালী, স্পেন, অষ্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে লাইসেন্সিং ব্যবস্থা কার্যকর রয়েছে। এর কার্যকারিতার প্রভাব ইতিমধ্যে এ সমস্ত দেশে দেখা যাচ্ছে। বিএমজে জার্নালে প্রকাশিত তথ্যানুসারে, লাইসেন্সিং ব্যবস্থার কারণে ফিনল্যান্ডে পয়েন্ট অফ সেলের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে ২৮%, ক্যালির্ফোনিয়া কাউন্টিতে ৩১% এবং হাঙ্গেরিতে ৮৩%।
অস্ট্রেলিয়াতে লাইসেন্স ফি ১৩ ডলার থেকে বাড়িয়ে ২০০ ডলার করায় খুচরা বিক্রেতার সংখ্যা এক ধাক্কায় কমে গেছে ২৩.৭%। যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোতে ৮%, ফিলাডেলফিয়াতে ৯.৮% হ্রাস পেয়েছে। তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রি সীমিতকরণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লাইসেন্সিং ব্যবস্থা প্রভাব তৈরি করায় তামাক কোম্পানিগুলি গ্লোবালি মরিয়া হয়ে নানা ধরনের কূটকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে, যাতে নতুন করে কোন দেশে
লাইসেন্সিং ব্যবস্থা কার্যকর না হতে পারে এবং যেসমস্ত দেশে কার্যকর হয়েছে সেখানে যাতে এটি কার্যকর না থাকতে পারে। ইউরোপের নরওয়ে ও স্কটল্যান্ডে লাইসেন্সিং ব্যবস্থা চালু করলেও কোম্পানীর কূটকৌশলে সেটি অকার্যকর হয়ে যায়।
বাংলাদেশেও তামাক কোম্পানী ইতিমধ্যেই বিভিন্ন কূটকৌশল গ্রহণ করেছে। নীতিনির্ধারক মহলকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তারা অনুধাবন করেছে লাইসেন্সিং ব্যবস্থা পরিপূর্ণরূপে কার্যকর হলে বিক্রি সীমিত হয়ে আসতে বাধ্য। কারণ দেশের বেশ কিছু পৌরসভায় লাইসেন্সিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং বিক্রি সীমিতকরণে যা ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করছে। খুলনা বিভাগের সিটি কর্পোরেশনসহ ৯ টি জেলা সদর পৌরসভায় অসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান এইড ফাউন্ডেশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের সহায়তায় তামাক
বিক্রেতাদের ডাটাবেজ তৈরি হয়েছে। এই তালিকা অনুসারে সংশ্লিষ্ট জেলার টাস্কফোর্স কমিটি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর করার জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছে। এটি সম্ভবপর হচ্ছে লাইসেন্সিং ব্যবস্থার কারণে। স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতি আহ্বান, দেশের জনস্বাস্থ্যকে রক্ষায় এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ‘২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ বাস্তবায়ন করার জন্য তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়ে লাইসেন্স ব্যবস্থাকে জোরদার করে তামাক কোম্পানীর কূটকৌশল প্রতিহত করুন।
লেখক: আবু নাসের অনীক, উন্নয়ন কর্মী