অর্থাভাবে আটকে আছে ডোপ টেস্ট

0

টেস্টের অর্থ যোগানের অভাবে চালকদের ডোপ টেস্ট বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে, ঠিকাদারের অক্ষমতায় বন্ধ হয়েছে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাপার কাজ। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকা ও টিভিতে অনেক খবর হয়েছে। তারপরও আটকে ছিল বিষয়টি। অবশেষে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জট খুলতে যাচ্ছে। পর পর দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ড্রাইভিং লাইসেন্স সময়মতো সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের মে পর্যন্ত ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন জমা পড়ে প্রায় ১৪ লাখ। এর মধ্যে সাড়ে ১২ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাপার কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনী পরিচালিত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি। সেনাবাহিনীর সঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের চুক্তি অনুযায়ী চলতি অক্টোবর মাস থেকে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে এই সাড়ে ১২ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাপার কাজ শেষ করার কথা। আমরা চাই, যথাসময়ে ছাপার কাজ শেষ হোক। অবশ্য সত্য যে, জাতি সেনাবাহিনীর প্রতি সে ভরসা রাখে।
অবাক বিষয় হচ্ছে, দেশে বৈধ লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালকের সংখ্যা কম। এক পরিসংখ্যান বলছে, দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ চালকের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। আবার বৈধ লাইসেন্স নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন এমন চালকের ৩১ শতাংশ কোনো অনুমোদিত ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেনি। ফলে চালকদের বেশির ভাগই ট্রাফিক আইন ভালো জানে না। অন্যদিকে, মালিকদের অনেকেই লাইসেন্সহীন অদক্ষ চালকের হাতে, এমনকি অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকের হাতেও গাড়ির চাবি তুলে দিচ্ছেন। আমাদের দেশে চালকদের একটি বড় সীমাবদ্ধতা হচ্ছে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাব। শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় অনেকেই আধুনিক সড়ক নির্দেশনা বুঝতে অক্ষম। এ কারণে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে যায়। গাড়িচালকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অন্তত এসএসসি নির্ধারণ করার আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। তা অবশ্য কার্যকর হয়নি, এখন অন্য সব দেশের মতো আমাদের দেশে ও সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ চালকদের মাদকাসক্তি। মাদকাসক্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো বন্ধে চালকদের ডোপ টেস্ট করানোর ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিআরটিএও এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সিদ্ধান্ত হয়েছিল, যখনই কোনো চালক বিআরটিএর কাছে লাইসেন্স করতে আসবেন, তখনই তাঁকে এই ডোপ টেস্ট করানো হবে। টার্মিনালগুলোতে চালকদের সন্দেহ হলেই পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও পুলিশের সমন্বয়ে টেস্ট করানোর কথা ছিল। ডোপ টেস্টের খরচ কে দেবে এই প্রশ্নে বিষয়টি আটকে আছে। বেসুমার দুর্নীতি ও অপচয়ের কারখানায় বিষয়টি হাস্যকর বটে।
দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হয়। দুর্ঘটনায় আহত-নিহতদের পরিবারগুলোকে বহন করতে হয় এক দুঃসহ ভার। তাই, ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই চালকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, মাদকাসক্তি পরীক্ষা বিশেষভাবে বিবেচনায় নিতে হবে। আমরা আশা করব, দ্রুততম সময়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স বিতরণ শুরুর আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।