শৈলকুপায় গ্রাম পুলিশ ও সমাজসেবা অফিস পিয়নের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ

0

আসিফ কাজল ॥ দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণ, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বয়স্ক ভাতা ও মাসিক চালের কার্ড করে দেওয়ার নামে শৈলকুপায় নারী শ্রমিকদের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে গ্রাম পুলিশ ও সমাজ সেবা অফিসের পিয়ন। তাদের প্রতারণার ফাঁদে অনেকেই এখন নিঃস্ব হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ঝিনাইদহের,শৈলকুপা উপজেলার আবাইপুর ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ মিজানুর রহমান ও শৈলকুপা সমাজসেবা কার্যালয়ের পিয়ন আবুল বাশার এই প্রতারণামূলক কাজের হোতা। তারা ভাতার কার্ড ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদানের নামে এই টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। গ্রাম পুলিশ মিজানুর রহমান হাটফাজিলপুর গ্রামের সোনা মণ্ডলের ছেলে ও বশির উদ্দিন শৈলকুপা সমাজসেবা কার্যালয়ের পিয়ন। শৈলকুপা পৌর এলাকার হাজামপাড়া গ্রামের আব্দুর রশীদের স্ত্রী ভানু খাতুন অভিযোগ করেন, বছরখানেক আগে তার দেখা হয় হাটফাজিলপুর গ্রাম পুলিশ মিজানুরের সাথে। বাবার গ্রামের বাড়ি বলে তিনি তাকে ভাই বলে ডাকতে বলেন। তখন তিনি দারিদ্র্য বিমোচনের লোন এবং বয়স্ক ভাতাসহ মাসিক চাল পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবে বলে তাকে জানান। এজন্য অফিসে দেওয়ার জন্য তিনি তার কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা নেন। কিন্ত পরে বুঝতে পারেন ওই গ্রাম পুলিশ একজন প্রতারক। টাকা ফেরত চাইলে তিনি বিভিন্ন ভাবে ভানু খাতুনকে হয়রানি করতে থাকেন। তার সাথে সমাজসেবা অফিসের বাশার নামের একব্যক্তি জড়িত বলে তিনি অভিযোগ করেন।
পৌর এলাকার হাবিবপুর গ্রামের রইচ মোল¬ার স্ত্রী পারভীন খাতুন জানান, তার নানা বাড়ির গ্রামের মামা পরিচয়ে গ্রাম পুলিশ মিজানুর রহমান তার মাধ্যমে চাতালের নারী শ্রমিকদের বিভিন্ন ভাতার কার্ড দেওয়ার জন্য ৬ জনের কাছ থেকে ৩৩ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। কার্ড না হওয়ায় মিজানুরের কাছে টাকা চাইলে তিনি ভয়ভীতি দেখান। কবিরপুর গ্রামের বিল্লাল হোসেনের স্ত্রী হালিমা খাতুন জানান, গ্রাম পুলিশ মিজানুর তাকে প্রতিবন্ধী কার্ড দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ৬ হাজার টাকা নেন। পরে সেই টাকা ফেরত চাইলে তিনি বলে সমাজ সেবা অফিসের আবুল বাশারকে টাকা দেওয়া হয়েছে কার্ড হয়ে যাবে। কিন্ত এখন কার্ডও নেই টাকাও নেই। হরিদেবপুর গ্রামের দবির উদ্দিনের স্ত্রী চায়না খাতুন বলেন, গ্রাম পুলিশ মিজানুর তাকে ১ লাখ টাকার সরকারি লোন দেওয়ার নামে জামানত হিসেবে ২০ হাজার টাকা নিয়ে হারিয়ে যান। ছোট ধলহরাচন্দ্র গ্রামের জাবেদ আলীর ছেলে আকাশ রহমান জানান, গ্রাম পুলিশ মিজানুর ও সমাজ সেবা অফিসের আবুল বাশার তার স্ত্রীর গর্ভবতী ভাতার জন্য ৬ হাজার টাকা এবং লোন দেওয়ার জন্য আরও ১২ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। এক বছর অপেক্ষার পর এখন টাকা চাইলে তিনি ভয়ভীতি দেখান।
বিভিন্ন প্রকার সরকারি ভাতার কার্ড দেওয়ার নামে টাকা নেওয়ার ঘটনায় আবাইপুর ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ মিজানুর রহমান বলেন, তিনি বেশ কিছু নারীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে সমাজসেবা অফিসের পিয়ন আবুল বাশারকে দেন। কিন্ত পরে আবুল বাশার অস্বীকার করায় তিনি আর টাকা ফেরত পাননি। নিজের বেতনের টাকা থেকে পাওনাদারদের কিছু অর্থ পরিশোধ করছেন। তবে কোন পাওনাদারকে তিনি ভয়ভীতি দেখাননি বলে জানান। এ ঘটনায় আবাইপুর ইউনিয়নের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য ভানু বেগম বলেন, গ্রাম পুলিশ মিজানুরের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ তারাও শুনেছেন। শৈলকুপা সমাজসেবা কার্যালয়ের পিয়ন আবুল বাশার বলেন, তিনি ভাতার কার্ড দেওয়ার নামে গ্রাম পুলিশ মিজানুরের কাছ থেকে কোনো টাকা নেননি। তিনি মিজানুরের কাছ থেকে কিছু টাকা হাওলাত নেন। যা পরে ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে জানান। শৈলকুপা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাসুদ আহম্মেদ জানান, গত ৭/৮ মাস আগে আবুল বাশারের বিরুদ্ধে তিনি এ ধরনের কথা শুনেছিলেন। তাকে ডেকে সতর্ক করা হয় এবং বলা হয় কোন লিখিত অভিযোগ এলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শৈলকুপা থানার অফিসার ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কোন ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।