বিদেশি টিভি চ্যানেল বন্ধ: অ্যাটকো`র একাত্মতা

0

মেসবাহ য়াযাদ॥ বিজ্ঞাপন বিহীন অনুষ্ঠান সম্প্রচারের সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার পরও কোনো বিদেশি চ্যানেল সেটা মানেনি বলে ১ অক্টোবর থেকে সব বিদেশি চ্যানেল বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতি একাত্মতা জানিয়েছেন অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স (অ্যাটকো)-এর সহ সভাপতি মোজাম্মেল বাবু। তিনি তার সংগঠনের সভাপতি অঞ্জন চৌধুরীর পক্ষে এই ঘোষনা দেন। অ্যাটকো আয়োজিত ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্সে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ৭১ টিভির প্রধান নির্বাহী মোজাম্মেল বাবু বলেন, সরকারের তরফ থেকে বেঁধে দেওয়া সময়সীমা পার হওয়ার কারণে ১ অক্টোবর থেকে সকল বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অন্য দেশে চ্যানেল সম্প্রচারের ক্ষেত্রে, সারা বিশ্বে বিজ্ঞাপন শূন্য অনুষ্ঠান প্রচারের নিয়ম এবং আইন রয়েছে। পৃথিবীর সব দেশে এই আইন মেনে চলে। আমাদের দেশেও সর্বশেষ অ্যাটকো এবং কোয়াবের সদস্যদের নিয়ে সরকারের সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে, তাতে এই প্রসঙ্গে আ্যাটকো এবং কোয়াব একমত হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেটা মানা হয়নি বলেই বাধ্য হয়ে সরকারকে আইনি পদক্ষেপ নিতে হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেওয়া সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোজাম্মেল বাবু বলেন, ১২০০ কোটি টাকার বিজ্ঞাপন বিদেশি চ্যানেলে প্রচারিত হয়। যার মধ্যে ৩০০ কোটি টাকা সরকারের ভ্যাট-ট্যাক্স রয়েছে। বাকী টাকা বিদেশি চ্যানেলে খরচ না হলে আমাদের দেশীয় টেলিভিশনগুলো তার অংশ পেত। আমরা টেলিভিশনগুলো পুরোপুরি বিজ্ঞাপনের উপর নির্ভরশীল, অথচ এতগুলো টাকা নিয়ে যায় বিদেশি চ্যানেলগুলো। তিনি বলেন, সরকারের আইনি এই উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কোনো চ্যানেল বিজ্ঞাপন শূন্য তাদের অনুষ্ঠান প্রচার করলে কোনো সমস্যা নেই। আমাদের অনেক কোম্পানির বিজ্ঞাপন কিন্তু পাশের দেশে প্রচারিত হয় না। যদিও এর জন্য তারা টাকা নিচ্ছেন। সেখানে প্রচার না করার মতো প্রযুক্তি তাদের রয়েছে। তারা সেটা ব্যবহার করছেন। তাহলে আমাদের দেশে তাদের চ্যানেলের বিজ্ঞাপন কেনো প্রচার করা হবে? সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিদেশি যে কোনো চ্যানেলকে আইন মেনে অবশ্যই ক্লিন ফিড বা বিজ্ঞাপন ছাড়াই প্রোগ্রাম সম্প্রচার করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এখানে কেউ ব্ল্যাকমেইল করতে চাইলেই হবে না। সবাই সরকারের আইনি এই সিদ্ধান্ত মেনেই নিয়েছে। ক্লিনফিড প্রোগ্রাম প্রচারের জন্য তাদের একটা অংশ এখন উল্টো যুক্তি দেখাচ্ছে।
এদিকে ক্যাবল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) বলেছে, ৪ অক্টোবরের পর তারা কঠোর আন্দোলনে যাবে। এব্যাপারে অ্যাটকোর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করেন সময় টেলিভিশনের এহসান জুয়েল। জবাবে মোজাম্মেল বাবু বলেন, সরকারের পূর্ব ঘোষিত এবং আইনগত কোন সিদ্ধান্তের বিপক্ষে কারো যাওয়ার সুযোগ নেই। এটা আসলে আন্দোলনের বিষয়ও না। এটা মানা ছাড়া বিকল্প কোনো রাস্তা নেই। এটা সারা বিশ্বেই প্রচলিত নিয়ম এবং আইন। তাছাড়া কোয়াব তো সরকারের কাছে সময় প্রার্থনা করেছে। সেখানে হঠাৎ করে কঠোর আন্দোলনের প্রশ্ন আসছে কী ভাবে? এটাও এক ধরনের ব্ল্যাকমেইল। দীপ্ত টিভির রুবায়েতের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিদেশি চ্যানেলগুলো ক্লিন ফিড না দিলে আমাদের বা সরকারের কী করার আছে? আইন তার নিজের গতিতে চলবে। এই সিদ্ধান্ত মেনে চলা ছাড়া চ্যানেলগুলোর কোনো উপায় নেই। এটা নতুন কোনো বিষয় না। চ্যানেলের মালিকরা সেটা জানেন। তারা নিশ্চয়ই ক্লিন ফিড প্রোগ্রাম চালাবেন। একুশে টিভির আদিত্যর প্রশ্ন ছিল- ক্যাবেল অপারেটররা বলছে, দেশীয় ৩৪/৩৫টা চ্যানেল দর্শক তেমন দেখে না। তাই এসব চ্যানেল চালিয়ে কোয়াব চলতে পারবে না। এসব চ্যানেলের মান বাড়ানোর ক্ষেত্রে অ্যাটকো কোন ভূমিকা নিতে পারে কীনা? জবাবে মোজাম্মেল বাবু বলেন, চ্যানেল মালিকদেরই তাদের চ্যানেলের প্রোগ্রামের মান বাড়ানোর জন্য কাজ করতে হবে। এখানে জোর করে কাউকে দিয়ে মান বাড়ানো যাবে না। কারা সংবাদ প্রচার করবেন, কারা এন্টারটেইমেন্ট কিংবা কারা খেলা দেখাবেন, সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। তবে হ্যাঁ, মান আরও ভালো করতে হবে সবার, এব্যাপারে দ্বিমত নেই। মোজাম্মেল বাবু বলেন, আমাদের সবকটি টেলিভিশন বিজ্ঞাপন নির্ভর। আমাদের বাজার ছোট। তার উপর যদি ১২০০ কোটি টাকা বিদেশি চ্যানেলের কাছে বিজ্ঞাপন বাবদ চলে যায়, তাহলে অন্যরা বাঁচবে কী করে? বিজ্ঞাপন বাইরের চ্যানেলে দেওয়া বন্ধের পাশাপাশি আমাদের চ্যানেলগুলোর মান বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকার বাধ্য করতে পারে। অনুষ্ঠানের মাঝে বিজ্ঞাপন প্রচারের সময়সীমাও নির্ধারণ করে দিতে পারে। এতে দর্শক হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে। মাইটিভির আবীরের প্রশ্ন ছিল, কোয়াব ৪ অক্টোবরের পরে যে কঠোর আন্দোলনের কথা বলেছে, তাদের সঙ্গে অ্যাটকো কি এ ব্যাপারে কোনো আলোচনায় বসবে? জবাবে অ্যাটকো সহ-সভাপতি বলেন, এটা আসলে আমাদের বিষয় না। আইনি এবং সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়। দেশের যে কোনো নাগরিকের উচিত আইনি এই উদ্যোগকে সহায়তা করা। এরকম ব্যাপারে কেউ চাইলেই ব্ল্যাকমেইল করতে পারেন না। এ আইনটি নতুন নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই এর প্রয়োগ রয়েছে। আমরা বরং এই আইনকে সাধুবাদ জানাই। অ্যাটকো আয়োজিত ভার্চুয়াল এই প্রেস কনফারেন্সে আরও বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী উপস্থিত ছিলেন। যাদের মধ্যে ছিলেন- রাকিব হাসান, মো. আরাফাত, সজীব, শিহাব, পারভেজ রেজা প্রমুখ।