৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কটি এখন যশোর উপশহরবাসীর ভোগান্তির কারণ

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ যশোর উপশহরের গুরুত্বপূর্ণ সেই সড়কটি এখন চলাচলে একেবারেই অচল হয়ে পড়েছে। একটি টাইলস কোম্পানির মালামাল আনা-নেওয়ার কারণে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কটির এই বেহাল অবস্থায় এলাকার বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। সড়কটির এ করূণ অবস্থা নিয়ে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের অভিযোগের পরও অজ্ঞাত কারণে নিরবতায় রয়েছে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ যশোর। উপশহরের টিএন্ডটি মোড় থেকে লেকপার্ক হয়ে সারথী টেক্সটাইল মিল পর্যন্ত সড়কটি মাত্র এক বছর আগে সংস্কার করা হয়। এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে উপশহর টিএন্ডটি মোড় হতে কিসমত নওয়াপাড়া সারথী টেক্সটাইল মিল পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এই সড়কটি সংস্কারের কাজ শুরু করে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ যশোর। সড়ক সংস্কারের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এরই মাঝে গত বছরে এপিল মাসে সড়কের টিএন্ডটি মোড় থেকে মাত্র এক কিলোমিটার রাস্তা কার্পেটিং শেষ করা হয়। কিন্তু নির্মাণের কয়েক মাসের মধ্যেই সড়কের ওই অংশটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সড়কটির পাশেই মেসার্স ফাতেমা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি টাইলস ও সিরামিক মালামালের গুদাম রয়েছে। প্রতিদিন ৮/১০ টি ট্রাকে করে মালামাল আনা নেওয়া করা হয়। যে কারণে সড়কের ইট-বালি খোয়া উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। এ পরিস্থিতিতে এলাকাবাসী সোচ্চার হলে লোকসমাজসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। বিষয়টি নিয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে সরেজমিনে তদন্তও করা হয়। কিন্তু এসব কিছুর পরও এখনো পর্যন্ত জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ যশোরের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বরং রহস্যজনকভাবে তারা এ বিষয়ে নীরব রয়েছে।
সড়কের পাশের বাসিন্দারা জানান, উপশহর এলাকায় যে কয়টি সড়ক রয়েছে তার মধ্যে এই সড়কটির অতি গুরুত্বপূর্ণ। সড়কের পাশেই একটি কিন্ডার গার্টেন রয়েছে। এছাড়া রয়েছে একাধিক বেসরকারি সংস্থার অফিস।
এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, এক সময়ে এই সড়ক দিয়ে এলাকার শত শত মানুষ প্রাত ভ্রমণে বের হতেন। এখন মানুষ হাঁটতেও পারেন না সড়কটি দিয়ে। যিনি টাইলসের দোকানটি দেখভাল করেন তিনি এলাকার এক প্রভাবশালী ব্যক্তির ছেলে। এ বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে নানাভাবে হুমকি দেয়া হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কয়েক দফা সতর্ক করার পরও কোনো প্রতিকার হয়নি। হাউজিং এস্টেটের লোকজনকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ভারি যানবাহনে মালামাল আনা-নেওয়া করছে। আব্দুর রহমান নামে এক ভ্যান চালক বলেন, বিষয়টি নিয়ে এলাকার লোকজন ক্ষুব্ধ। মাঝে মধ্যে পুলিশের লোকজন এখানে এসেও ক্ষোভ প্রকাশ করে যান। কারণ এই সড়কের আশপাশে মাদক ব্যবসায়ী ও অপরাধীদের একটি চক্র রয়েছে। যে কারণে নিয়মিত পুলিশের টহল দলের এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে পুলিশ এখন আসতে পারে না। এ বিষয়ে ফাতেমা এন্টার প্রাইজের ব্যবস্থাপক মফিজুর রহমান মিন্টুর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমাদের মালামাল আনা-নেওয়ার কারণে সড়কের ক্ষতি হলেও আমরা নিজ উদ্যোগে খোয়া ও বালি দিয়ে তা সংস্কার করে দিয়েছি। মানুষ যাতে নির্বিঘেœ চলতে পারে সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ যশোরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রেদওয়ার হোসেন বলেন, ফাতেমা এন্টারপ্রাইজ নামে ওই প্রতিষ্ঠানের কারণেই যে সড়কটি ধ্বংস হয়ে গেছে এ বিষয়টি আমরা অবগত আছি। তিনি বলেন, এর আগে এ বিষয়ে স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর একটি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে সরেজমিন তদন্ত করা হয়। এরপর আমরাও বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগী হই। কিন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের লোকজন অনেকটা প্রভাবশালী হওয়ায় এখনো বন্ধ করতে পারেনি। তিনি বলেন, খুব দ্রুত সময়ে আমরা যশোর জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।