কালীগঞ্জের খড়িকাডাঙ্গায় হানাহানি বদলে দিয়েছে গ্রামের যুবকরা

0

শিপলু জামান, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) ॥ কালীগঞ্জ উপজেলার কোলা ইউনিয়নের খড়িকাডাঙ্গা। তুচ্ছ ঘটানায়ও যেখানে মানুষ জড়িয়ে পড়তো সংঘর্ষে, পাল্টাপাল্টি মামলা মোকদ্দমায় হয়রানির সীমা থাকতো না, সেই গ্রামে আজ বইছে শান্তির সুবাতাস। রাজনৈতিক মতাদর্শে ভিন্ন মতের মানুষ থাকলেও একে অন্যের ওপর আজ শ্রদ্ধাশীল। গ্রামের উন্নয়নে সব বয়সী মানুষ হয়েছে একাট্টা। ইতোমধ্যে সকলের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা হয়েছে স্কুলসহ নানা সামাজিক প্রতিষ্ঠান। যুবকদের অংশগ্রহণে ২০১৮ সালে গ্রামের মানুষ সম্মিলিত কবরস্থান নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। অপরের মতামতের ওপর শ্রদ্ধাশীলতার মধ্যদিয়ে ২০১৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে কবরস্থানের সাইনবোর্ড টানানো হয়। এখন আর গ্রামটিতে কোনো হানাহানি নেই। গ্রামটিতে বর্তমানে থানা পুলিশে মামলা নেই । যা দেশের যে কোনো গ্রামের মধ্যে দৃষ্টান্ত ও অনুকরণীয়।
গ্রামের যুব সমাজের সদস্য বাচ্চু মিয়া জানান, এক সময় সামাজিক আধিপত্য বিস্তারে মেতে মারামারি, মামলা ফ্যাঁসাদে জড়িয়ে থাকতেন গ্রামবাসী। এমনকী প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা পর্যন্তও বলাবলি হতো না। সে অবস্থা কাটিয়ে উঠতে গ্রামবাসীকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। শিক্ষিত যুব সমাজ এর বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। যুবকেরা সম্মিলিতভাবে গ্রামের রাস্তাঘাট, মসজিদ -স্কুল, ঈদগাহসহ সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নতির জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। সর্বশেষ সম্মিলিত কবরস্থানের বিষয়টি সামনে রেখে তারা একতাবদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন। যুব সমাজের নেতৃত্বদানকারী এমরান হোসেন জানান, যে কোনো ভালো কাজে মানুষ বিশ্বাসী। কেননা সম্মিলিত কবরস্থানে গ্রামের অনেকে জমি দান করেছেন। আবার অনেকে টাকা দিয়েছেন। দানে প্রাপ্ত জমি ছাড়াও কবরস্থানের পাশ থেকে বেশ কিছু জমি কিনেছেন। যে সুবাদে বর্তমান জমির পরিমান ৫১ শতক। ইতোমধ্যে সকলের দেয়া ২ লাখ ৮০ হাজার টাকার মাটি ভরাট করা হয়েছে। গ্রামবাসীর সম্মিলিত উদ্যোগে স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আয়ূব হোসেন কবরস্থানের রাস্তা নির্মাণে দু দফায় ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। এখন প্রয়োজন প্রাচীর নির্মাণ করা। যেখানে খরচ হবে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা। গ্রামবাসীর দাবি এটা এখন জরুরি এবং এটাও একদিন হয়ে যাবে। গ্রামের অপর দুই কৃতি সন্তান মুঠোফোনে আলী হোসেন (বর্তমানে গ্রামীণ ব্যাংকের জিএম) ও লুৎফর রহমান (খুলনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান (সমবায়) জানান, চাকরীসূত্রে তারা বাইরে বসবাস করেন। কিন্ত নিজ গ্রামের জন্য নাড়ির টান রয়েছে। বাইরে থাকলেও নিজ গ্রামের উন্নয়নের কথা শুনলে গর্বে বুক ভরে ওঠে। গ্রামটির যুব সমাজ অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যে পরিবর্তন এনেছে তা অবশ্যই অন্যদের জন্য অনুকরনীয়। সমাজসেবক আব্দুল ওয়াহেদ বিশ্বাস ও শেখ মোহম্মদ হোসেন জানান, গ্রামের যুব সংগঠন অত্যন্ত সৎ,কর্মঠ ও দায়িত্বশীল। আমরা যেটা পারিনি আমাদের সন্তানেরা তা পারছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আয়ূব হোসেন জানান, খড়িকাডাঙ্গা গ্রামটিতে মাত্র দুটি পরিবার সোনাতন ধর্মাবলম্বী। বাকি সকলে মুসলিম হলেও তাদের সাথে বোঝাপড়াটা ভালো। তবে ছোটবেলায় দেখেছি অন্যরা ছোটখাটো বিষয় নিয়েও সহিংসতায় জড়িয়ে পড়তে। কিন্ত বর্তমানে সেই গ্রামটির চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। আর এটা সম্ভব হয়েছে যুব সমাজের জন্য। ফলে তারা ধন্যবাদ পাওয়ারযোগ্য।