টিকা ছাড়াই যাত্রীদের সংস্পর্শে অধিকাংশ পরিবহন শ্রমিক

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতি সামলে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় সবকিছু খুলে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রী পরিবহনে ব্যস্ত সময় পার করছেন গণপরিবহন (বাস) শ্রমিকরা। কিন্তু এখন পর্যন্ত শ্রমিকদের একটি বড় অংশ করোনার টিকাবঞ্চিত। অথচ একজন শ্রমিক দিনে শত শত যাত্রীর সংস্পর্শে যাচ্ছেন। পরিবহন শ্রমিকদের অভিযোগ, তাদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এছাড়া বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনও কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এখন একজন শ্রমিক করোনা আক্রান্ত হলে আরও হাজারো যাত্রীর মাঝে সংক্রমণ ছড়িয়ে যেতে পারে। পরিবহন শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে দেশের প্রতিটি বাস টার্মিনালে টিকাদান কর্মসূচির দাবি জানান তারা।
এদিকে বিধিনিষেধ শিথিলের আগে দেশের সব পোশাককর্মীর করোনা টিকা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়েছিল তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সে অনুযায়ী পোশাককর্মীরা যথাসময়ে টিকা পান। তবে একই সময়ে পরিবহন শ্রমিকদের জন্য কেন টিকার ব্যবস্থা করা হয়নি সে জবাব দিতে পারেনি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। সংগঠনটি জানায়, সড়ক পরিবহন খাতে ৭০ লাখের বেশি শ্রমিক যুক্ত। এই ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ২৪৯টি শ্রমিক ইউনিয়ন। এসব ইউনিয়ন চালক এবং তার সহকারীদের সঠিক তালিকা (ডাটাবেজ) তৈরি করতে পারেনি। ফলে এতো পরিমাণ মানুষকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা নিবন্ধনের জন্য অন্তর্ভুক্তের আবেদন করা সম্ভব হয়নি। তবে নিজ ব্যবস্থাপনায় অনেক শ্রমিক করোনা টিকা নিয়েছেন বলে দাবি সংগঠনটির। সম্প্রতি রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে কথা হয় এনা পরিবহনের বাসচালক সোহেল রানার সঙ্গে। তিনি বলেন, টিকা কীভাবে নিতে হয় তা জানি না। শ্রমিক ফেডারেশন বা পরিবহন মালিকদের পক্ষ থেকেও টিকা নেওয়ার কথা বলা হয়নি। সম্প্রতি গণটিকা কর্মসূচির কথা শুনেছি। কিন্তু কাজ ফেলে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা নেওয়ার সময় হয়নি। এছাড়া টিকা নেওয়ার পর জ্বর আসে বলে শুনেছি। জ্বর এলে আবার কাজকর্মও বন্ধ থাকবে। তখন পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। সোহেল রানার সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল তখন চারপাশ থেকে আরও ছয়জন বাসচালক এবং সহকারী পাশে এসে দাঁড়ান। তারা সোহেলের কথায় একমত প্রকাশ করেন। এই ছয়জনের মধ্যে দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন মাত্র একজন। আরেকজন গণটিকার প্রথম ডোজ নিলেও দ্বিতীয় ডোজ নেননি। তবে টিকাদান কর্মসূচি আরও সহজ করতে টার্মিনালের ভেতরে টিকার জন্য অস্থায়ী ক্যাম্প বা বুথ স্থাপনের দাবি জানান তারা। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে মিরপুর-১৪ নম্বর রুটে চলাচল করে শিখর পরিবহন। এ পরিবহনের চালক সাইদুল আলমের সঙ্গে কথা হয় গুলিস্তানে শহীদ মতিউর পার্কের উত্তর পাসের সিগনালে।
করোনা টিকা নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গাড়ি চালাইয়া কুলাই না। টিকা নিমু কখন?’ তবে সুস্থতার জন্য অবশ্যই টিকা নেওয়া উচিত বলে স্বীকার করেন তিনি। জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, পরিবহন (বাস) খাতে এখন ৭০ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন। দেশে যখন টিকা আসে, তখনই আমরা ডাক্তার-নার্সদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের টিকায় অগ্রাধিকার দিতে সরকারকে বলেছিলাম। কারণ একজন পরিবহন শ্রমিক দিনে কয়েকশ যাত্রীর সংস্পর্শে যান। কিন্তু আমরা সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া পাইনি। এখন নিজ উদ্যোগে হয়তো কেউ কেউ টিকা নিয়েছেন। তবে আমাদের ধারণা অন্তত ৬০ লাখ শ্রমিক টিকা পাননি।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। এর মধ্যে ৭ থেকে ১২ আগস্ট সারাদেশে গণটিকা কার্যক্রম চালায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে গতকাল মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীসহ সারাদেশে ৬৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৯২ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এখনো অনলাইনে নিবন্ধন করে টিকা নিচ্ছেন নাগরিকরা। তবে টিকা নিবন্ধনের ‘সুরক্ষা’ অ্যাপে নাগরিক যাচাইয়ে শ্রেণিসহ (ধরন) অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পেশার নাম থাকলেও পরিবহন শ্রমিকদের জন্য কোনো সুযোগ দেখা যায়নি। এ বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, দেশের অর্থনীতির বড় চালিকাশক্তি পরিবহন শ্রমিকরা। তাই শ্রমিকদের গুরুত্ব অনেক বেশি। এখন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরিবহন শ্রমিকদের জন্য করোনার টিকা ব্যবস্থা করা হোক। এছাড়া তাদের অন্যান্য স্বাস্থ্যগত বিষয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই। করোনা সংক্রমণের কারণে প্রায় দেড় বছর দেশে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ ছিল। এর মধ্যে সীমিত পরিসরে (অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে) কয়েক দফায় যাত্রী পরিবহন করে বাস। পরে ৮ অক্টোবর থেকে চলমান বিধিনিষেধ শিথিল করে সরকার। এরপর থেকে পুরোদমে যাত্রী পরিবহন শুরু করে বাসগুলো।