বিদেশি চ্যানেলের বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বাংলাদেশে কর্তৃপক্ষ বলছে, আগামী ৩০ নভেম্বরের পর অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে এমন বিদেশি চ্যানেলগুলো তাদের মূল কনটেন্টের সাথে কোনো বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারবে না। বিদেশি চ্যানেলগুলোর দেশি ডিস্ট্রিবিউটররা অবশ্য বলছেন, সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সহযোগিতার জন্য তারা চ্যানেলগুলোকে অনুরোধ করেছেন এবং এ নিয়ে আলোচনা চলছে। মূলত বাংলাদেশের আইনে বিদেশি টেলিভিশনগুলোর বাংলাদেশে সম্প্রচারের ক্ষেত্রে কোনো ধরণের বিজ্ঞাপন প্রচারের সুযোগ নেই। এ কারণে আগেও কয়েক দফায় বিদেশি চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপন প্রচারের সুযোগ বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। সাম্প্রতিক সময়ে দেশি বেসরকারি টেলিভিশনগুলো সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছিল এ বিষয়ে কঠোর হওয়ার জন্য।
এ পটভূমিতে সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, নভেম্বরের পর কোনো বিদেশি চ্যানেল বাংলাদেশে বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারবে না।
বিদেশি চ্যানেলগুলোকে সিদ্ধান্ত মানতে হবে-
তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান বলছেন, এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশে সম্প্রচারকারী বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে মেনে নিতে হবে। তিনি বলেন, ‘ত্রিশ নভেম্বর পর্যন্ত সময়-এর মধ্যে ক্লিন ফিড দিতে হবে এভরি সিঙ্গেল মেইন স্ট্রিম মিডিয়া অ্যান্ড অল আদারস মিডিয়াকে।’ কিভাবে এটি কার্যকর হবে-এমন প্রশ্নের জাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের সবাই মিলে এটা বাস্তবায়ন করবে। সরকার যন্ত্র যেভাবে কাজ করে সেভাবেই কাজ করবো। প্রচলিত আইন আছে, নীতিমালা আছে-সে অনুযায়ী আমরা সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন করবো। তথ্য প্রতিমন্ত্রী বিস্তারিত না বললেও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ধারণা দিয়েছেন যে, বিজ্ঞাপন বন্ধ না করলে সম্প্রচারকারী বিদেশি চ্যানেলের প্রচার বন্ধ করে দেয়া হতে পারে। আর এর কারণ হিসেবে আইনের পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব হারানোর বিষয়টিও বড় করেই এখন চিন্তা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তারা। তবে বিদেশি কিছু চ্যানেল বিশেষ করে ভারতীয় কিছু চ্যানেল বাংলাদেশে এতো বেশি জনপ্রিয় যে, সেগুলো বন্ধ করা কতটা সম্ভব হবে তা নিয়েও প্রশ্ন আছে।
বিদেশি চ্যানেলের স্থানীয় ডিস্ট্রিবিউটররা যা বলছেন-
বাংলাদেশে মূলত চারটি ডিস্ট্রিবিউটর বা প্রতিষ্ঠান বিদেশি চ্যানেলের সাথে কাজ করে। তাদের মাধ্যমেই ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক বা দুবাই ভিত্তিক কিছু টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাদেশে অনুষ্ঠান প্রচার করে। তেমনি একটি প্রতিষ্ঠান ওয়ান এলায়েন্সের কর্মকর্তা এ বি এম সাইফুল হোসেন বলছেন, বিদেশি চ্যানেলগুলোর সাথে ইতোমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে তারা আলোচনা শুরু করেছেন। তিনি বলেন, আমরা অলরেডি ব্রডকাস্টারদের সাথে যোগাযোগ করছি। আলাপ আলোচনা চলছে। সরকারের পরিপত্রও তাদের পাঠাবো। ক্লিন ফিড আমাদের এখান থেকে করা সম্ভব না, ব্রডকাস্টারদের করতে হবে। এখান থেকে করা ব্যয়বহুল হবে যা কাস্টমারের ওপর চাপ তৈরি করবে। তিনি বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সহায়তার জন্য তারা সংশ্লিষ্ট বিদেশি চ্যানেলগুলোকে অনুরোধ করেছেন এবং এ নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনাও চলছে।
বাংলাদেশী বেসরকারি চ্যানেলগুলো যা চাইছে-
বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো চাইছে দ্রুত সিদ্ধান্ত কার্যকরে সরকার চাপ তৈরি করুক। কারণ তারা মনে করে এর ফলে বাংলাদেশে কোনো কর না দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রচারের যে সুযোগ বিদেশি চ্যানেল পাচ্ছে সেটি বন্ধ হবে। আবার দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারকে কর দিয়েও পর্যাপ্ত বিজ্ঞাপন যে পাচ্ছে না তারও কিছুটা অবসান হবে। বেসরকারি একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু বলছেন, আইন অনুযায়ী বিদেশি চ্যানেলের বিজ্ঞাপন প্রচারের সুযোগই নেই। আইনে আছে বিদেশি চ্যানেলসমূহ বাংলাদেশের দর্শককে টার্গেট করে কোনো বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারবে না। বাংলাদেশে টিভিতে যে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়, সেগুলোর সাথে ট্যাক্স-ভ্যাটের ব্যাপার আছে। তিনি বলেন, বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন থাকলে, বাংলাদেশ সরকার বা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কোনো রেভিনিউ পায় না। এখানকার এডভারটাইজাররাও পায় না, বিজ্ঞাপন নির্মাতাও পায় না এবং এনবিআরও পায় না। মোজাম্মেল বাবু দাবি করেন, অনেক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি খুব সামান্য অ্যাড দেয় বাংলাদেশে।
অর্থাৎ বিদেশি চ্যানেলে প্রচারিত বিজ্ঞাপনগুলো থেকে একদিকে সরকার কোনো রাজস্ব পায় না, আবার ওই সব চ্যানেল বাংলাদেশে জনপ্রিয় হওয়ায় অনেক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি বাংলাদেশে তাদের পণ্যের প্রচারের জন্য বিদেশি চ্যানেলকেই বেছে নিয়েছে। আবার এসব বিজ্ঞাপন বিদেশে হচ্ছে বলে বাংলাদেশী নির্মাতা কিংবা শিল্পীদের জন্যও কোনো সুযোগ থাকছে না।এখন সরকার তার সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে এ পরিস্থিতির অবসান হবে বলে মনে করছে দেশি চ্যানেলগুলো।
সূত্র : বিবিসি