শেয়ারবাজার ছুটছেই, এখনো বিনিয়োগবান্ধব বলছেন বিশ্লেষকরা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ লাগামহীন ছুটেই চলেছে দেশের শেয়ারবাজার। প্রতিদিনই সৃষ্টি হচ্ছে একের পর এক রেকর্ড। বাজার মূলধন ও মূল্যসূচক একের পর এক মাইলফলক স্পর্শ করছে। এরপরও বাজারের সার্বিক চিত্রকে বিনিয়োগ উপযোগী হিসেবে অবিহিত করছেন বিশ্লেষকরা।তারা বলছেন, সম্প্রতি কিছু কোম্পানির শেয়ার দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। তবে সার্বিকভাবে শেয়ারবাজারে এখনো বিনিয়োগের জন্য যথেষ্ট উপযোগী। কারণ অনেক ভালো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারমূল্য এখনো সেভাবে বাড়েনি।
অবশ্য বাজারের এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের ভালো করে তথ্য পর্যালোচনা করে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, গুজবের ওপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ না করে, ভালো করে কোম্পানির অতীত-বর্তমান পর্যালোচনা করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আগের দুই কার্যদিবসের মতো মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) মূল্যসূচকের বড় উত্থানের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয়।
এতে লেনদেন শুরু হতেই প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স প্রথমবারের মতো সাত হাজার ১০০ পয়েন্টের মাইলফলক স্পর্শ করে।
দিনের লেনদেনের শেষ পর্যন্ত মূল্যসূচকের বড় উত্থান অব্যাহত থাকে। তবে লেনদেনে অংশ নেওয়া যে কটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, প্রায় তার সমান সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের দরপতন হয়েছে। সেইসঙ্গে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা কমেছে।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ১৭৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখায়। বিপরীতে দাম কমেছে ১৬৭টির। ৩০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এরপরও ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৬৫ পয়েন্ট বেড়ে ৭ হাজার ১৪০ পয়েন্টে উঠে এসেছে।
মূল্যসূচকের ভুল গণনা বন্ধ করতে ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি নতুন সূচক ডিএসইএক্স চালু করে ডিএসই। ৪০৫৫ দশমিক ৯০ পয়েন্ট দিয়ে শুরু হওয়া সূচকটি এই প্রথম সাত হাজার ১০০ পয়েন্টের মাইলফলক স্পর্শ করলো।
ডিএসই’র অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ৩৭ পয়েন্ট বেড়ে দুই হাজার ৫৮৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসইর শরিয়াহ্ সূচক ১৫ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৫৫১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এ দুটি সূচকও এ যাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে অবস্থান করছে।
সবকটি মূল্যসূচক রেকর্ড অবস্থানে উঠে আসার পাশাপাশি বাজার মূলধনও ইতিহাসের সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে এসেছে। ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৮০ হাজার পাঁচ কোটি টাকায়। এর আগে কখনো ডিএসইর বাজার মূলধন পাঁচ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকায় পৌছাতে পারেনি।
এদিকে, সবকটি মূল্যসূচকের বড় উত্থান হলেও মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ৮৬৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় দুই হাজার ৯০১ কোটি ৫২ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ৩৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
টাকার অংকে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ১৩২ কোটি ৩৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ১২২ কোটি ৪১ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৭৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সামিট পাওয়ার।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে সাইফ পাওয়ার টেক, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, ওরিয়ন ফার্মা, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, বিবিএস ক্যাবলস এবং ডরিন পাওয়ার।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৩৪ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১০৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩২৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৩৮টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৫২টির এবং ৩৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
শেয়ারবাজারের সার্বিক চিত্র সম্পর্কে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম সম্প্রতি অস্বাভাবিক বেড়েছে। আমি মনে করি, সার্বিকভাবে শেয়ারবাজার এখনো বিনিয়োগের জন্য যথেষ্ট উপযুক্ত।’