আন্তর্জাতিক সংবাদ

0

ভারত-তালেবান প্রথম আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক যোগাযোগ
লোকসমাজ ডেস্ক॥ ভারত গতকাল তালেবানের সঙ্গে প্রথম আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক যোগাযোগ করেছে। কাতারের রাজধানী দোহায় নিযুক্ত ভারতীয় দূত তালেবানের এক নেতার সঙ্গে দেখা করেছেন। তালেবানের অনুরোধেই ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, কাতারে ভারতের রাষ্ট্রদূত দীপক মিত্তাল সেই দেশে তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান শের মোহাম্মদ আব্বাস স্টানেকজাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, তারা দোহার ভারতীয় দূতাবাসে সাক্ষাৎ করেছেন। এসময় ভারত সন্ত্রাসীবাদীদের আফগান ভূখণ্ড ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলে স্টানেকজাই তাকে আশ্বস্ত করেন যে, ইতিবাচকভাবেই এই সমস্যার সমাধান করবে তালেবানরা। বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, “আফগানিস্তানে আটকে থাকা ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপত্তা, সুরক্ষা এবং দ্রুত প্রত্যাবর্তনের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। ভারতীয় রাষ্ট্রদূত মিত্তাল ভারতের উদ্বেগ উত্থাপন করেছেন এই বলে যে, আফগানিস্তানের মাটি কোনোভাবেই ভারতবিরোধী কার্যকলাপ এবং সন্ত্রাসবাদের জন্য ব্যবহার করতে দেওয়া উচিত হবে না”। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার এক সর্বদলীয় বৈঠকের ব্রিফিংয়ের উল্লেখ করে পিটিআইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত এর আগে “আফগানিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের” সাথে জড়িত ছিল এবং “অপেক্ষা করা ও পর্যবেক্ষণ করা” পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল। শ্রিংলার উদ্ধৃতি দিয়ে আরো বলা হয়েছে যে, “ভারত তার প্রধান অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে এবং আফগানিস্তানের জনগণের সঙ্গেও যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে”।

আফগানিস্তানে ফেলে যাওয়া যুদ্ধ সরঞ্জাম নষ্ট করে গেছে যুক্তরাষ্ট্র
লোকসমাজ ডেস্ক॥শেষ মার্কিন সামরিক বিমানের কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগের মধ্যদিয়ে আফগানিস্তানে দুই দশকের যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি টেনেছে যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার কাবুলের সময় ভোরে মার্কিন বিমান বাহিনীর সি-১৭ পরিবহন বিমানটি বিমানবন্দর ত্যাগ করে। কাবুল ত্যাগের সময় ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সঙ্গে করে নিয়ে যায় মার্কিন বাহিনী। রকেট হামলা ঠেকাতে এগুলো বিমানবন্দরে মোতায়েন করা ছিল। এছাড়া কাবুল ত্যাগের আগে সামরিক হেলিকপ্টারসহ অনেক যুদ্ধসরঞ্জাম বিনষ্ট করা হয়েছে। এসব যুদ্ধসরঞ্জাম আর কখনো ব্যবহার করা যাবে না বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের কমান্ডার জেনারেল ফ্রাঙ্ক ম্যাককেঞ্জি। কাবুল ত্যাগ করার আগে ৭৩টি এয়ারক্র্যাফট, ২৭টি সাঁজোয়া যানসহ বেশ কিছু যুদ্ধসরঞ্জাম চিরতরে ব্যবহারের অনুপযোগী করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া মাইন প্রতিরোধী ৭০টি যান ব্যবহার অনুপযোগী করে দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর অনেক আধুনিক যুদ্ধসরঞ্জাম ইতিমধ্যে তালেবানের হাতে চলে গেছে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।

তালেবান নেতার সাক্ষাৎকার নেওয়া নারী সাংবাদিক নিজেই ‘তালেবানের ভয়ে’ পালালেন
লোকসমাজ ডেস্ক॥ সপ্তাহ দু-এক আগেই এক তালেবান নেতার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন আফগানিস্তানের নারী সাংবাদিক বেহেশতা আরগান্দা। এবার তাকেই তালেবানের ভয়ে আফগানিস্তান থেকে পালাতে হলো। ইতিহাস গড়া এই নারী সাংবাদিক সিএনএনকে বলেছেন, তালেবানের ভয়েই দেশ ছেড়েছেন তিনি। আর তার প্রতিষ্ঠান টলোনিউজের মালিক সাদ মহসিনের ভাষায়, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি যে কী, তার একটি প্রতীকী রূপ হল বেহেশতার দেশত্যাগ। দুই দশক পর আফগানিস্তানে ক্ষমতার দখল নেওয়া গোঁড়া ইসলামি দল তালেবান শরিয়া আইনে চলার কথা বললেও কিছু পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে। আগে যখন তারা ক্ষমতায় ছিল, তখন তারা নারীদের বাইরে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল, মেয়ে শিশুদের স্কুলে যাওয়াও করেছিল বন্ধ। কিন্তু গত ১৫ আগস্ট কাবুল দখলের পরদিন প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছিলেন, তাদের শাসনে নারীরা স্বাধীনতা পাবে ‘শরিয়া আইন অনুযায়ী’, তাদের ‘নিয়ম মেনে’ সংবাদমাধ্যমও মুক্তভাবে কাজ করতে পারবে। এরপর ১৭ আগস্ট আফগানিস্তানের প্রথম নারী সংবাদকর্মী হিসেবে তালেবান নেতার সাক্ষাৎকার নিয়ে বিশ্বজুড়ে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন টলোনিউজের বেহেশতা আরগান্দ। মোহসেনি তখন ওয়াশিংটন পোস্টে এক কলামে উচ্ছ্বসিত হয়ে সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে লিখেছিলেন, ‘আফগানিস্তানের ইতিহাসে এই প্রথম টিভিতে লাইভ সাক্ষাৎকারে তালেবানের কোনো প্রতিনিধি একজন নারী সংবাদকর্মীর সামনে এলেন।’ আর এর মধ্য দিয়ে তালেবান বিশ্বকে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের একটি বার্তা দিতে চাইছে বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। কিন্তু তালেবানের প্রতিশ্রুতি নিয়ে দ্বিধা-সংশয়ের মধ্যে দুই সপ্তাহ না যেতেই দেশ ছাড়লেন বেহেশতা। সিএনএন হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করলে তার এই পদক্ষেপের কারণ তুলে ধরে বলেন, ‘আমি দেশ ছেড়েছি, কারণ অন্য লাখো মানুষের মতো আমিও তালেবানকে ভয় পাচ্ছি।’ টলো নিউজের কর্ণধার মোহসেনি বলেন, বেহেশতাই শুধু নয়, তাদের অভিজ্ঞ অনেক সাংবাদিকই চাকরি ছেড়েছে। বলা যায় সুপরিচিত বেশিরভাগ সাংবাদিক, কর্মীই চলে গেছে। এখন পাগলের মতো নতুন কর্মী খুঁজতে হচ্ছে আমাদের। একদিকে কর্মী ধরে রাখা, অন্যদিকে সম্প্রচার চালিয়ে যাওয়া- এমন দুটি চ্যালেঞ্জ নিয়ে এখন কাজ করতে হচ্ছে বলে জানান মোহসেনি। ২৪ বছর বয়সী বেহেশতা কিছুদিন আগেই টলোনিউজে সংবাদ পাঠক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি পড়াশোনা করেছেন কাবুল ইউনিভার্সিটিতে, সাংবাদিকতায়। বেহেশতা বলেন, তিনি নবম শ্রেণিতে থাকাকালেই সাংবাদিক হওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিলেন। যেদিন তার এক শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে তাকে একটি সংবাদ প্রতিবেদন পড়তে বলেছিলেন টিভির সংবাদ পাঠিকাদের মতো করে। ইউনিভার্সিটি থেকে বেরিয়ে কয়েকটি সংবাদ সংস্থা ও রেডিওতে কাজ করার পর টলোনিউজে যোগ দেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমি এখানে এক মাস ২০ দিন কাজ করেছি, তারপরই তালেবান এল। তালেবানের মিডিয়া টিমের সদস্য মৌলভী আবদুলহক হেমাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন বেহেশতা। সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সে এক কঠিন ব্যাপার ছিল, কিন্তু আফগান নারীদের জন্য তিনি তা করেছিলেন। ‘‘আমি নিজেই বলছিলাম, যদি আমরা ঘরে থাকি, অফিসে না যাই, তাহলে তারা বলবে, ‘মেয়েরা ঘর থেকে বের হতে পারবে না’। তাই আমার মনে হয়েছিল, কাউকে না কাউকে তো শুরুটা করতে হবে। তাই আমি কাজের জন্য বের হওয়ার সিদ্ধান্তই নিয়েছিলাম। আমি তালেবান নেতাকে তাই বলেছিলাম, আমরা আমাদের অধিকার চাই, আমরা কাজ করতে চাই, আমরা সমাজের অংশ হতে চাই। আর এটা আমাদের অধিকার।” এর দুই দিন পর নোবেলজয়ী পাকিস্তানি মালালা ইউসুফজাইর সাক্ষাৎকারও নেন বেহেশতা। আফগানিস্তানের কোনো টিভিতে সেটাই মালালার প্রথম সাক্ষাৎকার। তালেবান ক্ষমতা দখলের পর আফগান নারীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন পাকিস্তানি গোঁড়া ইসলামি গোষ্ঠীর নির্যাতনের শিকার মালালা। তারপরই ঘটল বেহেশতার দেশত্যাগ। দেশ ছাড়তে মরিয়া যে আফগানরা কাবুল বিমানবন্দরে জড়ো হয়ে আছে, তাদের নিয়ে রওনা হচ্ছে বিভিন্ন উড়োজাহাজ। গত মঙ্গলবার কাতার এয়ারফোর্সের এমনই একটি উড়োজাহাজে চড়ে দোহায় পাড়ি দেন বেহেশতা। তার সঙ্গে পরিবারের কয়েক সদস্যও ছিলেন। তবে দেশে আবার ফেরার আশাবাদও প্রকাশ করেন এই সংবাদ কর্মী। তিনি বলেন, ‘যদি তালেবান তাদের কথা রাখে, যদি পরিস্থিতির উন্নতি হয়, যদি আমার মনে হয়, আমি নিরাপদে থেকে কাজ চালিয়ে নিতে পারব; তবে দেশে ফিরব আমি, কাজ করব দেশের মানুষের জন্য।’