পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে অনিয়ম ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ

0

আল-আমিন॥ পুলিশের ট্রেইনি কনস্টেবল পদে নারায়ণগঞ্জ জেলা থেকে নিয়োগে অনিয়মের তথ্য প্রকাশের পর এর তদন্ত করেছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। তদন্তে ঘটনার সত্যতা মিলেছে। সংস্থাটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত ১৮ জনের স্থায়ী ঠিকানায় গরমিল পাওয়া গেছে। বিষয়টি উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হয়েছে বলে মনে করছেন পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা। নিয়োগ পাওয়া প্রার্থীদের সার্ভিস বুক এ সংযুক্ত প্রাথমিক ভি-আর পর্যালোচনা করে এবং দফাওয়ারি অনুসন্ধানের মাধ্যমে এ তথ্য জানতে পেরেছে মাঠ পর্যায়ের পুলিশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা। পুলিশের ওই সংস্থার ২০২০ সালের ২০শে অক্টোবর স্মারক নং বা.পু.মু.জা/৪৪,০১.০০০০
.০৬০.১২.১১১.২০/২৩২ এর একটি নথি ইতিমধ্যে পুলিশের সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে গেছে। প্রতিবেদনে ২০১৯ সালের মে মাসে যে ১৮ জন পুলিশ কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ জেলা থেকে কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেয়েছেন তারা অন্য জেলার বাসিন্দা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তারা নারায়ণগঞ্জ জেলার যে স্থায়ী ঠিকানা দিয়েছেন তার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। এমনকি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পর কোনো কোনো কনস্টেবলের জমির দলিলের কবলা ২ মাস পরও প্রকাশিত হয়েছে। ঠিকানার ভেরিফিকেশন তদন্তে অনিয়মের জন্য সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং ওই সময়ে দায়িত্বরত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশের মাঠ পর্যায়ের ওই সংস্থাটির প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম গতকাল রাতে জানান, ‘এ নিয়োগ প্রক্রিয়া যখন হয়েছিল তখন আমি এ জেলায় ছিলাম না। নিয়োগ প্রক্রিয়ার অনিয়মটি পুলিশ সদর দপ্তর তদন্ত করছে। ওই ঘটনার পর জেলায় পুলিশ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আরও সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।
জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক আইজিপি নূরুল হুদা জানান, প্রত্যেক জেলায় পুলিশের কোটা আছে। যারা এটি করেছে তারা চাকরির লোভে করেছে। এটা ফৌজদারি অপরাধ। যারা দোষী তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।’ এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ সদর দপ্তরের একজন ডিআইজি গতকাল সন্ধ্যায় জানান, ‘এটি গুরুতর অনিয়ম। এটা এক ধরনের প্রতারণা। জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়- যেসব কনস্টেবলগণ নিয়োগ পেয়েছেন তারা হলেন, ১. মো. হুমায়ুন কবীর, পিতা-আছের উদ্দিন। মাতা- কোহিনূর বেগম, গ্রাম ভাগলা, পোস্ট-পুটিনা, থানা রূপগঞ্জ, জেলা নারায়ণগঞ্জ। অথচ তার মূল স্থায়ী ঠিকানা হচ্ছে সিরাজগঞ্জে। ২) মো. আকরাম হোসেন, পিতা মো. আহসান হাবিব, মাতা আফরোজা খাতুন, সাং-বাগলা, পোস্ট- বেলদী, থানা-রূপগঞ্জ, জেলা-নারায়ণগঞ্জ। অথচ, তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে। ৩) মো. রিপন হোসেন, পিতা-মুকুল হোসেন, মাতা-ময়ফুল খাতুন, সাং-বাগলা, পোস্ট-পুটিনা, থানা-রূপগঞ্জ, জেলা-নারায়ণগঞ্জ। তার মূল গ্রামের বাড়ি- টাঙ্গাইলে। ৪) মো, সজীব প্রামাণিক, পিতা-আমানত প্রামাণিক, মাতা-মঞ্জু খাতুন, সাং, বাগলা, পোস্ট-পুটিনা, থানা-রূপগঞ্জ, জেলা- নারায়ণগঞ্জ। তার গ্রামের বাড়ির ব্যাপারে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি গ্রামের বাড়ি বলেননি। ৫) মো. সবুজ হোসেন, পিতা- আশরাফ আলী, মাতা- শাহিদা বেগম, সাং, বাগলা, পোস্ট বেলদি, থানা- রূপগঞ্জ ও জেলা-নারায়ণগঞ্জ। তার মূল গ্রামের বাড়ি-সিরাজগঞ্জে। ৬) মো. রাসেল, পিতা. মো. বাবু মোল্লা, মাতা-বাছেদা খাতুন, সাং-বাগলা, থানা-রূপগঞ্জ, জেলা- নারায়ণগঞ্জ। তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে। ৭) সোহেল রানা, পিতা, আশরাফ আলী- মাতা, নাজমা খাতুন, সাং, পূর্বকান্দি, পোস্ট-সাহেব বাজার, থানা-আড়াইহাজার, জেলা- নারায়ণগঞ্জ। তার গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান। ৮) মানিক মিয়া, পিতা, মো. মোতাহের আলী, মাতা, রুবি বেগম, সাং, মধ্যনগর, পোস্ট, বক্তাবলী, থানা-ফতুল্লা, জেলা-নারায়ণগঞ্জ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি তার মূল গ্রামের বাড়ি বলেননি। ৯) মো. সাদরুল, পিতা- মো. শাহজাহান আলী, মাতা-রেখা বেগম, সাং, পূর্বকান্দি, পোস্ট- সাহেববাজার, থানা- আড়াইহাজার, জেলা, নারায়ণগঞ্জ। তার মূল গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ। ১০) মো. রাসেল শেখ, পিতা, মো. শহীদ শেখ, মাতা, রাজেদা খাতুন, সাং, বাগলা, ইউপি, দাউদপুর, থানা, রূপগঞ্জ, জেলা, নারায়ণগঞ্জ। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তিনি তার গ্রামের বাড়ি বলতে ব্যর্থ হন। ১১) রিপন সরকার, পিতা- আয়নাল সরকার, মাতা- রিনা খাতুন, সাং- বাগলা, থানা, রূপগঞ্জ, জেলা নারায়ণগঞ্জ। তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে। আরও জানা যায়, ১২) আপিরুল ইসলাম, পিতা-আব্দুল লতিফ, মাতা, আপেসা বেগম, সাং, বাগলা, পোস্ট, বেলদী, থানা, রূপগঞ্জ, জেলা- নারায়ণগঞ্জ। তিনি তার গ্রামের বাড়ি বলতে ব্যর্থ হন। ১৩) তোফায়েল আহমেদ, পিতা, মো. মোয়াজ্জেম খান, মাতা- তাহমিনা আক্তার, সাং- বাগলা, থানা- রূপগঞ্জ, জেলা-নারায়ণগঞ্জ। তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে।
১৪) মো. সুমন আহমেদ, পিতা- রফিকুল ইসলাম। মাতা- রুমা বেগম, থানা- রূপগঞ্জ, জেলা- নারায়ণগঞ্জ। তিনি তার মূল ঠিকানা বলতে ব্যর্থ হন। ১৫) রায়হান আলী, পিতা- কহিনূর রহমান, মাতা- আকিজা বিবি, সাং- বাগলা, থানা- রূপগঞ্জ, জেলা- নারায়ণগঞ্জ। তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে। ১৬) কবির মিয়া, পিতা- হাবিবুর রহমান, মাতা- কল্পনা বেগম, সাং- বাগলা, থানা- রূপগঞ্জ, জেলা- নারায়ণগঞ্জ। তার পরিবার টাঙ্গাইলে বসবাস করতো বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
১৭) ফিরোজ আলী, পিতা- বাদশা হোসেন, মাতা- ফজিলা বেগম, সাং- বাগলা, থানা- রূপগঞ্জ, জেলা-নারায়ণগঞ্জ। তিনি তার গ্রামের বাড়ি বলতে পারেননি। ১৮) সুজন আহমেদ, পিতা, আব্দুস সামাদ, মাতা, মাজেদা খাতুন, সাং, বাগলা, থানা, রূপগঞ্জ, জেলা-নারায়ণগঞ্জ। তার মূল গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে।
উল্লিখিত ব্যক্তিদের ঠিকানা যাচাইয়ের জন্য ওই সময়ের দায়িত্বরত পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আদেশে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার ও ফতুল্লা থানার এসআইগণ তাদের ঠিকানা ভেরিফিকেশন করেছেন। তারা হলেন- এসআই ফরিদ উদ্দিন, রূপগঞ্জ থানা, এসআই শাহজাহান, থানা- রূপগঞ্জ, বর্তমানে টাঙ্গাইলে কর্মরত, এসআই শামীম আল-মামুন, থানা- রূপগঞ্জ, বর্তমানে একই জেলার সদর থানায় কর্মরত, বিজয় কৃষ্ণ কর্মকার, থানা: আড়াইহাজার, এসআই আরিফুর রহমান, থানা- ফতুল্লা, বর্তমানে তেজগাঁওয়ের এনটিএমসিতে কর্মরত, এসআই খাইরুল ইসলাম, থানা- রূপগঞ্জ, বর্তমানে সদর থানায় কর্মরত। ওই সময় রূপগঞ্জ থানার ওসি ছিলেন মাহমুদুল হাসান, আড়াইহাজারে নজরুল ইসলাম এবং ফতুল্লাতে আসলাম হোসেন।