টিকার ঘাটতি কাটছে না : বাড়ছে বিশৃঙ্খলা

0

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ॥ করোনা থেকে সুরক্ষার জন্য মানুষের মধ্যে টিকার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে দিন দিন। কিন্তু চাহিদার তুলনায় টিকার সরবরাহ খুবই কম। বর্তমানে নিবন্ধনকারীদেরই সবমিলিয়ে টিকা প্রয়োজন প্রায় সোয়া ৪ কোটি ডোজ। টিকার জন্য অনেক মানুষ অনলাইনে নিবন্ধন করে স্বাভাবিকভাবে টিকা নিতে পারছেন না। দিনের পর দিন অপেক্ষা করেও এসএমএস পাচ্ছেন না। ফলে টিকার কর্মসূচিতে নানা অনিয়ম ভর করেছে। টিকা চুরি করে বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে বিক্রির অভিযোগে ক্লিনিকের মালিককে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ। টাকার বিনিময়ে টিকার ব্যবস্থা করে দেয়া হচ্ছে কিছু কেন্দ্র থেকে। এসব ঘটনা রোধে ইতিমধ্যে তৎপর হয়ে উঠেছে নানা গোয়েন্দা সংস্থা। সরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে টিকার সরবরাহ না বাড়াতে পারলে এমন বিশৃঙ্খলা সামনে আরো বাড়ার আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।
এদিকে, আগস্ট মাসের ৭ তারিখে শুরু হওয়া করোনার টিকার ক্যাম্পেইনের ৬ দিনই কেন্দ্রগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। ক্যাম্পেইনের সময়ে দেশে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলে ৫৮ লাখের বেশি মানুষ টিকা নিয়েছেন। টিকা গ্রহণকারীর চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি মানুষ উল্লেখিত সময়ে নিবন্ধন করে বসে আছেন। ১ কোটি ২৭ লাখের বেশি মানুষ ক্যাম্পেইনে টিকা নিতে অনলাইনে নিবন্ধন করেন। ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইনে ৩২ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার টার্গেট নিয়েছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু তা দুইদিনে অতিক্রম করে। আপাতত টিকার ক্যাম্পেইন দেয়ার চিন্তা নেই স্বাস্থ্য বিভাগের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২৯শে আগস্ট পর্যন্ত দেশে প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ১ কোটি ৮২ লাখ ৮৯ হাজার ১৮ জন। অন্যদিকে এ পর্যন্ত মোট দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন ৭৮ লাখ ৪০ হাজার ১৬৯ জন। এখন পর্যন্ত দেশে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলে বিভিন্ন টিকা দেয়া হয়েছে ২ কোটি ৬১ লাখ ২৯ হাজার ১৮৭ ডোজ। এই মুহূর্তে দ্বিতীয় ডোজ টিকার দরকার ১ কোটি ৪ লাখ ৪৮ হাজার ৮৪৯ জনের। আর নিবন্ধনকারীদের মধ্যে এক ডোজও টিকা পাননি এমন সংখ্যা ১ কোটি ৮৮ লাখ ৭৭ হাজার ৪৬১ জন। অর্থাৎ এদের প্রত্যেকের ২ ডোজ করে ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৫৪ হাজার ৯২২ ডোজ টিকা লাগবে। বর্তমানে নিবন্ধনকারীদেরই সবমিলিয়ে টিকা দরকার ৪ কোটি ৮২ লাখ ৩ হাজার ৭৭১ ডোজ। কিন্তু টিকা হাতে মজুত আছে মাত্র ৬৩ লাখ ৯১ হাজার ৮৩৩ ডোজ। বিভিন্ন হিসাব করে দেখা যায়, ৪ কোটি ১৮ লাখ ১১ হাজার ৯৩৮ ডোজ টিকার ঘাটতি রয়েছে এখনই। ২৯শে আগস্ট বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৩ কোটি ৭১ লাখ ৬৬ হাজার ৪৭৯ জন। অন্যদিকে, দেশে এ পর্যন্ত কেনা, উপহার ও কোভ্যাক্স সুবিধায় সবমিলিয়ে ৩ কোটি ২৫ লাখ ২১ হাজার ২০ ডোজ টিকা দেশে এসেছে। এর মধ্যে উপহার হিসেবে পাওয়া গেছে ৫৪ লাখ ডোজ টিকা। যা ভারত থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩৩ লাখ এবং চীন থেকে সিনোফার্মের ২১ লাখ টিকা উপহার দিয়েছে দেশগুলোর সরকার। ভারতের কাছ থেকে উপহার পাওয়া টিকার মধ্যে দেশটির সেনাপ্রধান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ১ লাখ টিকা উপহার দিয়েছেন। বাংলাদেশ সফরে এসে ভারতের সেনাপ্রধান তা বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের হাতে তুলে দেন। কেনা টিকা এসেছে ১ কোটি ৫০ লাখ ডোজ। এর মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে কেনা টিকা ভারত থেকে এসেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৭০ লাখ ডোজ এবং চীন থেকে সিনোফার্মের ৮০ লাখ ডোজ টিকা।
অন্যদিকে, কোভ্যাক্স সুবিধায় বিভিন্ন দেশের নানা টিকা পাওয়া গেছে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ২১ লাখ ২১ হাজার ২০ ডোজ। এর মধ্যে কোভ্যাক্সের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফাইজারের ১ লাখ ৬২০ ডোজ টিকা, যুক্তরাষ্ট্র থেকে মডার্নার ৫৫ লাখ ডোজ, একই সুবিধায় জাপান থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩০ লাখ ৫৯ হাজার ২০০ ডোজ, চীন থেকে সিনোফার্মের ৩৪ লাখ ৬১ লাখ ২০০ ডোজ টিকা বাংলাদেশ কোভ্যাক্স সুবিধায় পেয়েছে। এদিকে, করোনার টিকার প্রতিদিনের বিতরণের হিসাব পাওয়া গেলেও কি পরিমাণ টিকা নষ্ট হয়েছে তার তথ্য পাওয়া যায়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে। বিভিন্ন হিসাব করে দেখা যায়, ৩২ থেকে ৩৩ লাখ লোক টিকা নিয়েছেন ক্যাম্পেইনের মূল কর্মসূচিতে। নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচিতে এখন প্রতিদিন প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলে টিকা নিচ্ছেন আড়াই লাখের মতো।
প্রসঙ্গত, দেশে করোনার টিকাদান উদ্বোধন হয় চলতি বছরের ২৭শে জানুয়ারি আর গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয় ৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে। আর গ্রামের ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু হয় ৭ই আগস্ট থেকে।