ঝিনাইদহে কৃষি ব্যাংক থেকে ৮৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ, কর্মকর্তা আটক

0

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ ॥ ঝিনাইদহ কৃষি ব্যাংক থেকে ৮৫ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আটক হয়েছেন কৃষি ব্যাংক ঝিনাইদহ শাখার সাবেক সেকেন্ড অফিসার নাজমুল হক। ঝিনাইদহ সদর থানায় এ ব্যাপারে ব্যাংকের পক্ষ থেকে জিডি ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর যশোর সমন্বিত অফিসে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত কর্মকর্তা নাজমুল হক ঝিনাইদহ শহরের হামদহ কাঞ্চনপুর মধ্যপাড়ার নজরুল ইসলামের ছেলে।
ঝিনাইদহ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মোঃ রুবায়েত হাসান বুধবার বিকেলে জানান, নাজমুল হক ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ঝিনাইদহ শাখায় কর্মরত ছিলেন। এ সময় তিনি নিজ নামে একাউন্ট খুলে বিভিন্ন সময় ৮৫ লাখ ৮৭ হাজার ২২৫ টাকা আত্মসাৎ করেন। উন্নত প্রযুক্তির কারণে বিষয়টি ঢাকা হেড অফিসের নজরে পড়ে। ঝিনাইদহ থেকে তিনি মাগুরা অফিসে বদলি হয়েও একই কাজ করতে থাকেন। মাগুরা কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মোঃ রেজাউল হক জানান, নাজমুল হক মাগুরা শাখায় বদলি হয়ে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকের টাকা তার হিসাবে ট্রান্সফার করে ৩৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৪ টাকা আত্মসাৎ করেন। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে গত সোমবার রাতে নাজমুল হককে মাগুরা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
ঝিনাইদহ সদর থানায় করা জিডি সূত্রে জানা যায়, ঝিনাইদহ শাখায় চাকরি করার সময় নাজমুল হক নিজ নামে অ্যাকাউন্ট খুলে সুবিধামতো সময়ে এ সব টাকা ট্রাান্সফার করে আত্মসাৎ করেন। সদর থানায় মঙ্গলবার রাতে জিডি করেন ঝিনাইদহ কৃষি ব্যাংকের ম্যানেজার রুবায়েত হাসান। ঝিনাইদহ ও মাগুরা থেকে নাজমুল হক এ যাবৎ ১ কোটি ২৩ লাখ ৭০ হাজার ৯৫৯ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। ব্যবস্থাপক রুবায়েত হাসান আরো জানান, অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তদন্ত টিম রওনা হয়েছে। নাজমুল হকের সব কর্মস্থল অনুসন্ধান করলে এ যাবৎ ব্যাংকের কত টাকা লোপাট হয়েছে তা বেরিয়ে আসবে বলেও ব্যাংক কর্মকর্তারা মনে করেন। তবে এই টাকা আত্মসাতের সাথে ঝিনাইদহ কৃষি ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তা জড়িত থাকতে পারেন বলে দুদক সন্দেহ করছে।
দুদক সূত্র জানায়, দেড় বছর আগে ঝিনাইদহ ব্র্যাঞ্চ থেকে ৮৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ হলেও এতোদিন কেন বিষয়টি গোপন রাখা হলো বা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানানো হলো না তা নিয়ে সন্দেহ বাড়ছে। তবে ব্যাংক ম্যানেজার রুবায়েত হাসানের ভাষ্য, সফটওয়ারের কারণে হেড অফিস বিষয়টি ধরতে সক্ষম হয়েছে। এটা আমরা স্থানীয়ভাবে পারিনি। মাগুরা সদর থানা পুলিশের ওসি মোঃ জয়নাল আবেদীন জানান, সরকারি অর্থ আত্মসাতের কারণে দুদকের পরামর্শে ব্যাংকার নাজমুল হককে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
ঝিনাইদহ কৃষি ব্যাংকের মুখ্য আঞ্চলিক কর্মকর্তা (ডিজিএম) এনায়েত করিম জানান, নাজমুল হকের অর্থ আত্মসাতের কর্মকান্ডে তারা বিব্রত এবং হতবাক হয়েছেন। তিনি জানান, নাজমুল হক শৈলকুপা কৃষি ব্যাংক শাখায় থাকাকালীন ২০১৫ সালের ২৪ জুন শাহিনুর রহমান জীবন নামে এক মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীর সাথে চেক প্রতারণা করেন। এ নিয়ে ঝিনাইদহ আদালতে একটি মামলা চলমান আছে। দুর্নীতি দমন কমিশন যশোর অফিসের উপ-পরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাত বলেন, নাজমুল হকের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাতের দায়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।